গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংলাপ

0
527

নিজস্ব প্রতিবেদক :
খুলনার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন ও প্রাসঙ্গিক ইস্যু নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগরীর সিএসএস আভা সেন্টার সভাকক্ষে খুলনাঞ্চল উইএসএমএস’র আয়োজনে ‘গণমাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও প্রাসঙ্গিক ইস্যু উপস্থাপনা’ শীর্ষক কর্মশালা হয়েছে। এতে মতামত প্রকাশ করেন, খুলনার চার নারী উদ্যোক্তা শাকেরা বানু, লুৎফুন হক পিয়া, রূপা খাতুন ও নুরুন্নাহার লিলি।
তাঁরা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলো গণমাধ্যামে যদি বেশি করে প্রচার করা হয় তাহলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার মতো আরও কিছু সমস্যার সমাধান হলে খুলনার নারী উদ্যোক্তারা আরও বেশি প্রতিযোগিতায় আসতে পারবে বলে মনে করেন।
নারী উদ্যোক্তারা বলেন, খুলনা শহরে নারীদের উৎপাদিত পণ্যের একটি পৃথক বিক্রয়স্থান বিশেষভাবে প্রয়োজন। এর সাথে সাথে তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্ত্বে ঋণ প্রাপ্তি, প্যাকেজিং সমস্যা, স্থানীয় চেম্বার অব কর্মাসের অসহযোগিতার মতো আরও কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেন। নারী উদ্যোক্তারা মনে করেন, আত্মবিশ্বাস, সততা ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য কার্যালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা ম. জাভেদ ইকবালসহ সংলাপে সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইত্তেফাকের এনামুল কবীর, এনটিভির মুন্সী আবু তৈয়ব, ডেইলি স্টারের দীপংকর রায়, প্রথম আলোর উত্তম মন্ডল, জন্মভূমির সোহরাব হোসেন ও শেখ হেদায়েতুল্লাহসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান খুলনার উইএসএমএস প্রকল্পের কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ। সঞ্চালনায় ছিলেন কালের কন্ঠের ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য ও তাদের সমস্যাগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার আশ্বাস দেন।
সংলাপে নারী উদ্যোক্তরা বলেন, আমরা এগিয়ে চলেছি আমাদের দেশের পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের পাহাড় ডিঙিয়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বৈষম্যের চরম শিকার হয়ে একজন নারীকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হতে হয়। উচ্চশিক্ষিত হয়েও নিজেকে জাতীয় কর্মকান্ডে নিয়োজিত করতে কী পরিমাণ বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়, তা একমাত্র আমরাই জানি। অথচ জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০১৬ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে, ভারত ও পাকিস্তানের নারীদের চাইতে বাংলাদেশের নারীদের আয় বেশি বলে মন্তব্য করে নারী উদ্যোক্তারা।
তাঁরা আরও বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন হলেও নারীমুক্তি এখানে এখনও আসেনি। শুধু নারীর ক্ষমতায়ন নারীর মুক্তি নিয়ে আসবে না। নারী মুক্তির জন্য প্রয়োজন পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন। পুরুষ যতদিন না নারীকে তার সহযোগী ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাবতে শিখবে, ততদিন এ সমস্যার সমাধান হবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নারীর এত ক্ষমতায়নের পরেও কি এদেশে নারীর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে? নারী নির্যাতন ও বৈষম্য কি সামান্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে? উত্তরে বলবো ‘না’। বাংলাদেশ এখনও নারীর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত হয়নি। এখনও পারেনি নারী নির্যাতন রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। বরং নারীর প্রতি সহিংসতা আরও মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে নবনব কৌশলে।