নারীর আর্তনাদ, আমার সন্তানের বাবা ভিসি

0
685

গোপালগন্জ প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অবশেষে মুখ খুললেন আফরিদা খাতুন ঝিলিক (১৯) নামে এক নারী কর্মচারী।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এমএলএসএস হিসেবে মাস্টার রোলভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত নারী কর্মচারী ঝিলিক তার শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আর্তনাদ করে ভিসি ভবনের সামনে সন্তানের স্বীকৃতি চান।

ভিসি ভবনের সামনে ওই নারীর কান্নার বিষয়টি কয়েকজন ভিডিও করেন। ২১ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঝিলিক তার এক বছর বয়সী কন্যা সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চান।

এ সময় ঝিলিক ভিসিকে তার সন্তানের বাবা দাবি করে চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমার সন্তানের বাবা ভিসি। এই সন্তানের সঙ্গে ভিসির চেহারার অনেক মিল আছে।’

এ সময় ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দীন তার ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে ঝিলিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে দীর্ঘ সময় আটকে রাখেন এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেন। ভিসির নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, ভিসির অপকর্ম ধামাচাপা দিতে ওঠেপড়ে লেগেছে একটি প্রভাবশালী মহল। কতিপয় কথিত সাংবাদিককে হাত করে গণমাধ্যমকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে ভিসির।
আফরিদা খাতুন ঝিলিকের আর্তনাদের ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন চাকরি দেয়ার কথা বলে তাকে বিভিন্ন সময় যৌন নির্যাতন করেন। সেইসঙ্গে ভালোবাসার ছলনার প্রলুব্ধ করে দিনের পর দিন ভিসির বাংলোয় রেখে ওই নারীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করেন ভিসি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নির্যাতিত ঝিলিক বলেন, ‘আজ আমি সবকিছ ফাঁস করে দেব। খুলে দেব মানুষ নামের নরপশুর মুখোশ। আমার সন্তানের বাবা তুমি। আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছো। আমার কাছে তোমার সব অপকর্মের প্রমাণ আছে। সবার সামনে তোমার মুখোশ খুলে দেব।

‘তুমি এতিম-আমিও এতিম’, ‘তুমি আমার কষ্ট বুঝবে-আমিও তোমার কষ্ট বুঝবো’ এমন সব আবেগী ও প্রেমময়ী কথা দিয়ে ভিসি নাসির আমার সব কিছু কেড়ে নেয় বলেও দাবি করেন ঝিলিক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোপালগঞ্জের ভূতপূর্ব জেলা প্রশাসক (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক হিসেবে কর্মরত) মো. খলিলুর রহমান ২০১৬ সালে শেখ রাসেল দুস্থ পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টুঙ্গিপাড়ার অনাথ হিসেবে আশ্রিত ঝিলিককে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

পরবর্তীতে তিনি তার মেয়ে ঝিলিককে বশেমুরবিপ্রবির ভিসির কাছে চাকরির জন্য অনুরোধ করেন। ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দীন তাকে নিজ বাংলোতে আশ্রয় প্রদানসহ মাস্টার রোলে চাকরি দেন।

চাকরির পর ঝিলিকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়েন ভিসি। একপর্যায় ঝিলিক অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তখন তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেয়া হলে ঝিলিক তাতে অস্বীকার করেন। ফলে ঝিলিককে চুরির অপবাদ দিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিসির বাংলো থেকে বের করে দেয়া হয়।

পরবর্তীতে ঝিলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত সোনাকুড় গ্রামে বাসা ভাড়া নিলে ভিসি তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ঝিলিককে মারপিট করায় এবং তাকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। পরবর্তীতে একটি সমঝোতার মাধ্যমে ঝিলিককে প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেন ভিসি নাসির।

ঝিলিকের ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোন নম্বরে বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ওই টাকা পাঠিয়ে দেয়া হতো। সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ বিকাশের মাধ্যমে ঝিলিককে ৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়।

ভিসির আস্থাভাজন ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করতেন। দীর্ঘদিন ধরে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও প্রতি মাসে ঝিলিককে ওই টাকা পাঠানো হতো।

অবশেষে লোক লজ্জা ও সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভিসির কুৎসিত চেহারা উন্মোচন করে দেন ভুক্তভোগী ঝিলিক। জীবনযুদ্ধে পরাজয় মানতে নারাজ তিনি। সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ভিসি নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও এর বিচার চাইবেন ঝিলিক।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি নতুন নয়। গত বছর ৫ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ভিসির বাসভবনে বিউটি পার্লার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় সংবাদটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে ভিসির অনৈতিক সম্পর্কের খবর প্রকাশ হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন নারী শিক্ষকের সঙ্গে ভিসির অনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও অভিযোগ উঠে।

এ বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কয়েকবার কল দেয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার ফোন নম্বরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি তাতেও কোনো সাড়া না দিয়ে ফোনটি বন্ধ করে দেন।