নানা কারণে চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে

0
734

কামরুল হোসেন মনি: ডায়াবেটিস, ভেজাল খাদ্য, সামাজিক অস্থিরতা, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অপরিশোধিত পানি ও কল-কারখানার বিষাক্ত ধোয়া, বিভিন্ন নির্মাণ কাজে আঘাতজনিতসহ নানা কারণে চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা উদ্ধেগজনক হারে বেড়েছে।
জানা গেছে, রূপসা উপজেলা তিলক স্থানে অবস্থিত রেভাঃ আব্দুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের সমস্যাজনিত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে (বহিঃ বিভাগ) ৩১ হাজার ১৮৫ জন। এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার ১১৮ ব্যক্তির ছানি অপারেশনসহ অন্যান্য চোখের অপারেশন হয়েছে ১ হাজার ৫২৩ জনের। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করা হয় ৫ হাজার ৩২৭টি। এছাড়া চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহিঃ বিভাগের চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজার ৩৫২ জন। এছাড়া ছানি অপারেশন রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৯৯ ও ক্যাম্পের মাধ্যমে ৭৬০ জনকে ছানি অপারেশন করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালে (বহিঃ বিভাগ) চোখের সমস্যাজনিত কারণে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় ৩০ হাজার ৫২৪ জনকে। এ সময়ে ছানি অপারেশন করা হয় ৭০৯ ও ক্যাম্পের মাধ্যমে ৫৩৯ জনকে।
ফরমালিনযুক্ত খাবার, ডায়াবেটিকে আক্রান্তের সংখ্যা  বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত সবুজ গাছ পালা না থাকা, শিশু-কিশোর ও যুবকদের অধিক সময় আকাশ সংস্কৃতি বা ফেসবুক ব্যবহার এসব উল্লেখ করে এ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডাঃ মনোজ কুমার দাশ এ প্রতিবেদককে বলেন, পরিসংখ্যানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে চোখের সমস্যা বাড়ছে। বর্তমানে ফরমালিনযুক্ত খাবার সয়লাভ হওয়ার কারণে মানুষ এখন পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে পাচ্ছে না এর কারণে চোখের ক্ষীন দৃষ্টি সমস্যা অন্যতম কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চিকিৎসকরা জানান, জন্মের পর যেমন চোখের পর্দা পড়া, ছানি পড়া, চোখ ট্যারা এবং অ্যালার্জি কারণে অনেক মানুষ ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভোগেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও স্বীকার করেছেন, অধিকাংশ সময় বাসাবাড়ি বা অফিসের বন্ধ পরিবেশে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হচ্ছে বলে উন্মুক্ত সবুজায়ন দেখার সুযোগ মিলছে না। ফলে চোখের নানা জটিলতায় চশমা ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্রামের তুলনায় শহরের শিশুরা ক্ষীণদৃষ্টি রোগে বেশি ভুগছে। এ মুুহুর্তে শিশুদের রোগ থেকে মুক্ত দিতে রঙিন শাকসবজি ও ছোট মাছ খাওয়ানোর দরকার বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
রেভাঃ আব্দুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হাসপাতালের ম্যানেজার মোঃ মহাসিন উদ্দিন বলেন, তাদের এ হাসপাতালে অল্প খরচে থাকা-খাওয়াসহ চোখের ছানি অপারেশন করা হচ্ছে। ৩ হাজার টাকার মধ্যে তা সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় ফোরডাবল লেন্স এর জন্য থাকা খাওয়া সহ ১৪ হাজার টাকা, উন্নত মানের ইউএসএ আইকিউ লেন্স এর জন্য রোগীদের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা নেয়া হয়।
চিকিৎসাবিদরা বলছেন, চক্ষুরোগীর বেশিভাগই বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার। কারণ শহরগুলোতে বিনোদনের জায়গার অভাব থাকায় ইন্টারনেট, ফেসবুক বা ভিডিও গেমস দীর্ঘ সময় দৃষ্টি রাখছে। এমন অসচেতনতা, ঘরমুখী জীবন ব্যবস্থা এবং পড়াশোনাসহ নানা মানসিক চাপে থাকার কারণেও চোখের সমস্যা বাড়ছে।