নাটকে বাড়ছে ভাষার বিকৃতি

0
445

খুলনাটাইমস বিনোদন: বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে বলতে পারা ও শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার ক্ষেত্রে নাটক এক অনন্য ভূমিকা রেখেছে। নব্বইয়ের দশকে আমাদের জনপ্রিয় নাটকগুলোতে শুদ্ধ বাংলা ভাষার প্রতি নির্মাতাদের গুরুত্ব ছিল বেশি। শহর বন্দর, গ্রামসহ সব শ্রেণির দর্শকের কাছে এসব নাটক সমাদৃত হয়। কিন্তু আজকাল তার বিপরীতমুখী আমাদের নাটকের সংলাপ। ক্রমেই নাটক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শুদ্ধ বাংলা ভাষা। এখন নাটকে চলিত ও আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারই চোখে পড়ে বেশি। এদিকে আঞ্চলিকতার নামে ভাষা বিকৃতির মহোৎসব চলছে নাটকে। নতুন প্রজন্মের বড় একটি অংশ শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। এদের অনেকেই ‘বাংলিশ’ ঢং-এ কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নাটকে আঞ্চলিকতা ও ভাষা বিকৃতি নিয়ে অনেক শিল্পীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেক শিল্পী মনে করেন, যদি আঞ্চলিক কোনো নাটক হয় সেটা ভিন্ন কথা। বিনা কারণে টিভি নাটকে বাংলা ভাষার উচ্চারণে অশুদ্ধতা, অসংলগ্নতা সমর্থন যোগ্য নয়। আমাদের দ্রুত ভাষা বিকৃতির এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। তা না হলে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ওপার বাংলার টিভি সিরিয়ালগুলোতে দেখা যায় শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার। আমাদের দেশের দর্শকেরাও সেসব নাটক দেখছেন নিয়মিত দেশীয় সিরিয়াল উপেক্ষা করে। এই সময়ে আমাদের প্রায় ২৩টি টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রচার হয়। এসব ধারাবাহিকের দুই-চারটি ছাড়া অন্যগুলোর দিকে দর্শকের তেমন আগ্রহ নেই। এসব নাটকে অহরহ দেখা দেখা যায় আঞ্চলিক ভাষা। নাটকে ভাষা বিকৃতি ও আঞ্চলিকতা নিয়ে ড. ইনামুল হক বলেন, নাটকের ভাষা বিকৃতি ঠিক না। এটি আমাকে খুবই আহত করে। আঞ্চলিক ভাষায় আমরা নাটক করতেই পারি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষাটাও সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এখন তো আঞ্চলিকতার নামে ভাঁড়ামি করা হচ্ছে। ফলে নাটক হারাচ্ছে তার দর্শক। নাটকে যদি আঞ্চলিক ভাষার আধিক্য বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব নতুন প্রজন্মের ওপর পড়বে। তাই এখনই আমাদের জাতির ও নতুন প্রজন্মের স্বার্থে এদিকে নজর দেয়া উচিত। অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, এটি আমদের জন্য দু:খজনক বিষয়। এভাবে নাটকে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার করার কোনো কারণ থাকতে পাওে না বলে আমি মনে করি। আমাদের নবীন নির্মাতাদের অনেকের মধ্যেই আঞ্চলিক ভাষায় নাটক নির্মাণ যেন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। এটি থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারছে না। আজকাল তারা নাটক নির্মাণে ক্ষেত্রে আগে ভাষা নির্বাচন করে। কোন অঞ্চলের ভাষা দিয়ে নাটক নির্মাণ করবে সেটির দিকে তাদের গুরুত্ব থাকে বেশি। অথচ নাটকের মান কেমন হচ্ছে তা নিয়ে তাদের খেয়াল নেই। একটা সময় আমাদের নাটকের সংলাপ দর্শকের মুখে মুখে শোনা যেত। আর এখন নাটক দেখার পর দর্শক কি দেখেছে সেটিই ভালো ভাবে বলতে পারে না। অভিনেত্রী ও নির্মাতা লাকি ইনাম বলেন, আমাদের অনেক নাটকে এই সময়ে ভাষাকে বেশ বিকৃতি করা হচ্ছে। যে ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে সে ভাষার এমন বিকৃতি সত্যি দুঃখজনক। বর্তমানে নাটকের ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে আটকে আছি। নাটক দেখলে মনে হয় এগুলোই আমাদের সংস্কৃতি। বড় বিষয় হলো আজকাল গ্রামের লোকেরাও আধুনিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। সেখানে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় নাটক নির্মাণে প্রতিযোগিতা করছি। নির্মাতাদের এ ধরনের নাটক নির্মাণ থেকে সরে আসা উচিত। সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য দর্শকদের যা খুশি তা নির্মাণ করে দেখানো যায়। কিন্তু সেটির ফল কি হবে তাও ভাবতে হবে। এদিকে নাট্যকার ও অভিনেতা বৃন্দাবন দাস নাটকে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের পক্ষে বলে জানান। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার শক্তি আঞ্চলিক ভাষা। যারা নাটকে আঞ্চলিক ভাষার বিপক্ষে কথা বলেন তারা কেন বলেন আমি সঠিক জানি না। নাটক সাধারণ মানুষের কথা বলে। একটা সময় নাটক ছিল উচ্চবিত্তদের ড্রয়িংরুম বিনোদন। সেই নাটককে আমরা সব শ্রেণির দর্শকের কাছে নিয়ে গেছি। তবে আমি আঞ্চলিকতার নামে ভাষা বিকৃতির পক্ষে না। এই সময়ে অনেকের নাটকে ভাষা বিকৃতি হচ্ছে। সব নাটক প্রমিত বাংলায় হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু নাটকে ভাষার বিকৃতি কোনো ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। ‘বাংলিশ’ ভাষা ব্যাবহারে মধ্য দিয়ে ভাষার বিকৃতি করছে। তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।