নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস ভারতের লোকসভায়

0
299

খুলনাটাইমস ডেস্ক: গত সোমবার মধ্যরাতে ভারতের লোকসভায় পাস হলো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৯ (সিএবি)। বিরোধীদের আপত্তি এবং উত্তরপূর্বে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যেই ৩১১-৮০ ভোটে গত সোমবার মধ্য রাতে বিলটি পাস হয়। সাত ঘণ্টা বিতর্কের শেষে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, এ বিল পাশ হওয়ার ফলে প্রতিবেশী তিন দেশের অমুসলিম সংখ্যালঘু শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু এ আইনের সঙ্গে দেশটির মুসলিমদের কোনো সম্পর্ক নেই। আইনটি পাশের ফলে দেশের মুসলিম সমাজের কোনো সমস্যা হবে না। বিল নিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করার সময়ে তিনি আরও বলেন, খুব দ্রুত গোটা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) করা হবে। এর আগে বিলটি উত্থাপনের শুরুতে অমিত শাহ বলেন, বিলটি সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে নয়। এদিকে বিলটিকে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির কৌশল বলে কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধীরা। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, প্রশাসন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মুসলমানদের নিশানা করছে। হট্টগোলের মধ্যেই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে অমিত শাহ বলেন, আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব। কিন্তু আপনারা ওয়াকআউট করবেন না। বিলের বিরোধিতায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের সময় বলা হয়েছিল- এক দেশ-এক সংবিধান। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরার অনেক স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই বিল বিভাজনের উদ্দেশ্য করা হচ্ছে, যা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী। জবাবে অমিত শাহ বলেন, আজ আমাদের কেন বিল প্রয়োজন হচ্ছে? কারণ স্বাধীনতার পর ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না করলে আজ আমাদের এই বিল আনতে হত না। কংগ্রেস আসলে দেশভাগ করেছিল ধর্মের ভিত্তিতে। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এনডিটিভির। এদিকে বিলের প্রতিবাদে উত্তরপূর্বের একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন গতকাল মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার বনধ পালনের ঘোষণা করেছে। তারা মনে করছে, বিলটি ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি ছিন্ন করার প্রয়াস। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব অবৈধ অভিবাসীরা এ দেশে শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। বিলটি পাস হলে আসামের ছাত্র সংগঠনগুলো ব্যাপক আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। ১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনটিতে বলা হয়েছে, অন্য দেশ থেকে ভারতে আসা কোনো ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকত্ব প্রার্থী হন তাহলে তাকে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এ দেশে বসবাস করছেন এই প্রমাণ দেখাতে হবে। কিন্তু সেই বিধান বদলাতেই আনা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, এ দেশে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য অবেদন করতে পারবেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা শশী থারুরসহ অনেক বিরোধী নেতাই এই সংশোধনীটিকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেছেন, কেন্দ্র যদি সব সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে তবে আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু তারা যদি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করে তবে আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করব। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এই বিলটিকে ‘মৌলিকভাবে অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে বলেছেন, এই বিলটিতে যা প্রস্তাব করা হয়েছে তা মেনে আইন হলে সেটি ভারতের মূল ধারণাকে আঘাত করবে। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের লক্ষ্য হলো-হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি এই ছয়টি সম্প্রদায়কে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা। এই বিলে নির্বাচিত বিভাগগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের ছাড় দেওয়ার জন্য বিদ্যমান আইনটির সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।