নববর্ষ থেকেই পাটকল শ্রমিকদের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু

0
668

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) থেকেই পুনরায় শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন কর্মসূচি। এদিন ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করবে আন্দোলনরত শ্রমিকরা। এছাড়া ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল ৯৬ ঘন্টা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পাশাপাশি সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ অবরোধ।
এরপর বিরতি দিয়ে ২৫ এপ্রিল প্রত্যেক মিলে শ্রমিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ৭২ ঘন্টা ধর্মঘট পাশপাশি সকাল ৭টা থেকে বেলা টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টা রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করা হবে বলে শুক্রবার পিপলস গোলচত্বর সভা থেকে শ্রমিক নেতারা ঘোষণা দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগ খুলনা অঞ্চলের আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন।
সভায় বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মোতাহার উদ্দিন, সোহরাব হোসেন, মাওঃ হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, বিল্লাল মল্লিক, পান্নু মিয়া, আঃ মান্নান, আবু দাউদ দ¦ীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহিম, আক্তার হোসেন, হেমায়েত হোসেন, দ্বীন ইসলাম, আবু জাফর আলী, সরদার আলী আহমেদ।
সভায় শ্রমিকদের ঢল নামে। শ্রমিকরা নেতাদের মুখে তাদের মজুরী কমিশন ও সপ্তাহিক মজুরীর বিষয়ে শুনতে চান। বিজেএমসির বৈঠক ব্যর্থ ও আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানান শ্রমিক নেতারা। আন্দোলনে কোন শ্রমিক ঘরে বসে থাকতে পারবেননা এমন কথা শ্রমিক নেতারা ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা দুই হাত তুলে সমর্থন জানান আন্দোলনের প্রতি। দ্বিতীয় ধাপে ৯৬ ও ৭২ ঘন্টা ধর্মঘট এবং অবরোধ কর্মসূচি বেশ জোরালোভাবে পালন করবে বলে উপস্থিত শ্রমিকরা নেতাদের আশ^াস দেন।
প্রসঙ্গত, খুলনাসহ দেশের পাটকল শ্রমিকদের মুজরী কমিশন বাস্তবায়ন, সপ্তাহিক মজুরী পরিশোধ, বদলী শ্রমিক স্থায়ী করণ, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পিএফ এবং গ্রাচ্যুইটিসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
৯ দফা দাবির ভিত্তিতে গত ৬ মার্চ ঢাকায় বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা সভা সফল না হওয়ায় গতকাল শুক্রবার বিআইডিসি রোডের পিপলস গোল চত্বরে ধর্মঘট, রাজপথ রেলপথ অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিলসহ ৯ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মজুরী কমিশন-২০১৫ এর রোয়েদাদ, পাটক্রয়ের অর্থবরাদ্ধ, বদলী শ্রমিক স্থায়ী করন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সকল বকেয়া পরিশোধ, শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহে মজুরী পরিশোসহ বকেয়া মজুরী প্রদান, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকদের বিজেএমসির অন্যান্য মিলের ন্যায় সকল সুযোগ, সুবিধা প্রদানসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ২, ৩ ও ৪ এপ্রিল দেশের সকল পাটকলে এক যোগে ৭২ ঘন্টা ধর্মঘট ও ৪ ঘন্টা করে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ধর্মঘট ও অবরোধের কারনে মিলসহ শিল্পাঞ্চল খুলনা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। ৯ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা। এ সময়া বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের খুলনা যশোর মহাসড়কের নতুন রাস্তায় পুলিশ বক্স ভাংচুর ও ৪ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলন চলাকালে ৩ এপ্রিল বিজেএমসির পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের আলোচনায় ডাকা হয়। ৬ এপ্রিল ঢাকায় বিজেএমসির কার্যালয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান শাহ মোঃ নাসিমের সাথে ৯ দফা দাবি নিয়ে বৈঠকে বসেন পাটকল শ্রমিক লীগ নেতারা। সেই বৈঠককে শ্রমিকদের স্বার্থ আদায় না হওয়ায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান শ্রমিক নেতারা। ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ নেতৃৃবৃন্দ জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জাতীয় মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন, প্রতি সপ্তাহে মুজরী প্রদান, বদলী শ্রমিকদের স্থায়ী করণ, অবসরপ্রাপ্তদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবিতে নতুৃন আন্দোলন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়। কর্মসূচির মধ্যে গতকাল খুলনাসহ ঢাকা অঞ্চল ও চট্রগ্রাম অঞ্চলে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।