নতুন ১০ লাখ করদাতা বাড়ানোর নির্দেশ

0
407

খুলনাটাইমস ডেস্কঃ দেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা গেলে বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা সম্ভব। এতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়বে। এসব হিসাব উল্লেখ করে চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ নতুন করদাতা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ নির্দেশনা সামনে রেখে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ‘করদাতার সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রতিবন্ধকতা’ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরিতে এনবিআর করনীতি শাখায় চিঠি পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি করনীতি শাখা থেকে প্রতিবেদন তৈরি করে এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে জনসংখ্যার পরিমাণ ১৬ কোটি। ইটিএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। করদাতার সংখ্যা আগামী কয়েক অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে বাড়ানোর সুযোগ আছে। চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ নতুন করদাতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য পৃথক পৃথকভাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে করদাতা সংগ্রহে নির্দেশ দেওয়া হলে কার্যক্রমে গতি আসবে। করদাতা সংগ্রহের কার্যক্রমে কঠোর নজরদারি করতে হবে। প্রতিটি কর অঞ্চল থেকে প্রতি তিন মাসে কী পরিমাণ করদাতা সংগ্রহ করা হবে তার হিসাব এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দিতে হবে। কোনো কর অঞ্চল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে তার জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।

রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। গত কয়েক করবর্ষে রিটার্ন দাখিল হয়েছে গড়ে ১৮ লাখ। এ ক্ষেত্রে করদাতাদের রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করতে হবে।

করদাতারা সঠিক হিসাবে রিটার্ন দাখিল করছে কি না তা নজরদারি করতে হবে। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে উৎসাহী করতে হবে। এতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার সুযোগ কমবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), অনলাইনে বিআইএন এবং ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ও আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাব, নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় থানায় জমা দেওয়া বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার তথ্য খতিয়ে দেখা যেতে পারে। আমদানি-রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে রিটার্নের তথ্য যাচাই করা যাবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, করযোগ্য আয় থাকার পরও কৌশলে তথ্য গোপন করে অনেকে ইটিআইএন গ্রহণ করছে না। শহরকেন্দ্রিক করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের করদাতার সংখ্যা বাড়াতে অধিক মনোযোগী হতে হবে। এনবিআর এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পর্যায়ক্রমে রাজস্ব দপ্তর স্থাপন করলেও এখনো অনেক উপজেলায় কর দপ্তর স্থাপন করা হয়নি। আবার নতুন স্থাপিত রাজস্ব দপ্তরগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের তিন খাতের মধ্যে চলতি এবং গত কয়েক অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সবচেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়। তবে আয়কর আদায়েও প্রায় সমান গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। ভ্যাটের থেকে সামান্য কমিয়ে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। গত অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা এবং চলতি বছরে এক লাখ ১০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ধার্য করা হয়। ভ্যাটের চেয়ে সামান্য কমিয়ে আয়করে গতবারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা এবং চলতি বছরে এক লাখ ৭১৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

করনীতি শাখার প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, হঠাৎ পরিদর্শনের মাধ্যমে নতুন করদাতা সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। অতীতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সুফল পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মলসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স হঠাৎ পরিদর্শনের মাধ্যমে নতুন করদাতা সংগ্রহের অভিযান পরিচালনা করতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরের আওতাধীন উপজেলায় নতুন করদাতা সংগ্রহে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সম্ভাবনাময় মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে খতিয়ে দেখতে হবে সঠিক হিসাবে কর দিচ্ছে কি না। দেশের নামি দামি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের (কর পরিশোধে যোগ্য না হলেও) ইটিআইএন গ্রহণে নির্দেশ দিতে হবে।

কোনো ব্যক্তি আয়-ব্যয়ের তথ্য গোপন করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হলে অন্যরা এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। একই সঙ্গে রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিলে বা বকেয়া পরিশোধ না করলেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। এতে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়বে। রিটার্নে মিথ্যা দেওয়ার পরিমাণও কমবে।