নগরীতে স্বাধীন বাংলার রমরমা প্রতারনা ব্যবসা

0
1068

বেল্লাল হোসেন সজলঃ
স্বাধীন বাংলা মার্র্কেটিং কনসেপ্ট দীর্ঘদিন ধরে লটারির মাধ্যমে সাধারন মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এই প্রতারক চক্রটি নগরীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে এবং স্থানে এই প্রতারণা করে আসছে। মূূল টার্গেট খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বৈধ কাগজ পত্র ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। দেখার যেন কেউ নেই। গ্রাহকরা প্রতিটা স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষলেই পচ্ছেন পন্য, তবে সে পন্যের কোন নিশচয়তা নেই ফাকাঁও থাকতে পারে এবং অতিরিক্ত টাকা দিয়ে গ্রাহকদের নিতে হচ্ছে এই নিম্ন মানের পন্য।
নগরীর খালিশপুরে এলিজাবেদ স্কুলের সামনে স্বাধীন বাংলা মার্কেটিং কনসেপ্ট নামক একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ব্যবাসা পরিচালনা করে আসছেন। এর মূল হোতা মোঃ কামরুল মোল্লা। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী সহ ১২ জন মহিলা ও পুরুষ কাজ করেন এই প্রতিষ্ঠানে। তারা নগরীর বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং চায়ের দোকানে গিয়ে ১০০ টাকা মূল্যের সদস্য কার্ড বিক্রয় করে। যেখানে তারা প্রথমেই বলে আপনি ১০০ টাকার এই কার্ড কিনে স্ক্র্যাচ করলেই পাবেন ফ্রিজ ,টিভি, মোবাইল, সেলাই মেশিন, মাইক্রোওভেন, রাইচকুকার সহ আরো অনেক পণ্য। কার্ডে থাকা পণ্যের একটি বাদলেই সেটি নিতে হবে এক হাজার পাঁচ শত টাকা দিয়ে। আবার কিছু নাও থাকতে পারে কার্ডে। তবে বাস্তবে দেখা যায় এমন লোভনীয় কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে পানির ফিল্টার, চেয়ার, চামচ সেট, কারিকুকার, আয়রন, হট পট বেলেন্ডার এই সকল পণ্যই পায় ক্রেতারা। যার ফলে অনেকে যখন পণ্য নিতে আসে পণ্যের মান একেবারেই নিম্ন মানের হওয়ায় পণ্য না নিয়েই চলে যায়। আর এভাবেই শুধু কার্ড বিক্রি করেই হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারন মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী তুহিন ও রাসেল আক্ষেপ করে প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ১০০ টাকার বিনিময়ে স্ক্রার্চ কার্ডটি সংগ্রহ করি, কিন্তু পন্য নিতে এলে নিম্নমানের নকল পন্য হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। শাপলা, জেকপট, ওয়াটার ফ্রেশ, নোভা, পেসটিজ, নোভেনো সহ বহু নামের পণ্য যা আমরা কখনো শুনি নাই। আর যেগুলোর নাম শুনেছি তাও নকল। সদস্যরা এমন পন্য নিতে অস্বীকার জানালে স্ক্রাচ কার্ডটি বাতিল বলে গণ্য করা হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরে এবং আশেপাশের বাসাবাড়িতে যেয়ে সাধারন মানুষকে লোভ দেখিয়ে বা বোকা বানিয়ে হাজার হাজার কার্ড বিক্রি করে প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এতদস্বত্ত্বেও এই বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই? সূত্র আরো জানায়, প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ কামরুুল মোল্লা ক্রেতাদের বোকা বানিয়ে ও কর ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার এই ব্যবসা। যার এই ব্যবসা পরিচালনা করার কোন বৈধ কাগজ পত্র নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের একটি স্ক্র্যাচকার্ড এ লেখা তারা কারখানা থেকে সরাসরি পণ্য এনে ক্রেতা এর কাছে বিক্রি করে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাদের এই মালামাল এর চালান অনুযায়ী দেখা যায় ঢাকা মিটফোর্ড এর একটি দোকান থেকে ক্রয় করে আনে। যে সকল পণ্য একেবারেই নিম্নমানের এবং নকল পণ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোঃ মিরাজ মোল্লার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি জানান তাদের কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। তবে ঢাকার একটি ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করছে। যাও শুধু নাম্বার মাত্র কোন ট্রেড লাইসেন্স এর কপি তাদের কাছে নেই।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ কামরুল মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, আমার পণ্যের মান যথেষ্ঠ ভাল। আমরা সামান্য লাভে বিক্রি করি ব্যবসায়িক প্রচারের স্বার্থে। আর যেহেতু আমরা নতুন এখনও কাগজ পত্র করতে পারিনি। আগামীতে করে ফেলবো। আর কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা একটি ব্যবসায়িক কৌশল মাত্র। এবং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলার সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম জানান, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই বৈধ কাজপত্র নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। তাছাড়া উচ্চ মুল্যে নিম্নমানের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ক্রেতাকে ঠকানো দন্ডনীয় অপরাধ। তবে কেউ লিখিত অথবা অনলাইনে অভিযোগ দিলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেই।