নগরীতে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর, আহত ১০

0
1118

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের শেষ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের উপর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একইসাথে পুলিশ বক্সে হামলা-ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে খুলনার রাজপথ-রেলপথ বন্ধ করে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা নগরীর দৌলতপুরস্থ নতুন রাস্তা মোড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছিল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবলা পুলিশ বক্সের অদূরে পুলিশের সিটিএসবি শাখার একজন সদস্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ের পাবলা পুলিশ বক্সে লাঠিসোটা নিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ইটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই ৪ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল বাশার, কনস্টেবল মনির, রায়হান ও রাতুল। এছাড়া ছয়জন শ্রমিকও আহত হয়েছেন বলে দাবি শ্রমিকদের। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার রকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রতিদিনের মতোই পুলিশ সদস্যরা শ্রমিকদের কর্মসূচিতে নিরাপত্তার জন্য পাহারা দিচ্ছিলো। হঠাৎ শ্রমিকরা পুলিশের উপরে লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। পাবলা পুলিশ বক্সে পুলিশ সদস্যরা আশ্রয় নিলে অফিসেও ভাঙচুর করে পাটকলের শ্রমিকরা। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসলে সেটিও ভাঙচুর করে শ্রমিকরা।
তিনি আরও বলেন, এ সময় পুলিশ বক্সে থাকা একটি মটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে আমি এগিয়ে গেলে আমার দিকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আমি পার্শ্ববর্তী দোকানে আশ্রয় নেই। হামলার ঘটনায় ইন্সপেক্টর বাশারসহ ৪ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এ বিষয়ে পাটকল শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন বলেন, পুলিশ বক্সে যারা ভাঙচুর করেছে তারা কেউ পাটকলের শ্রমিক না। বাইরে থেকে বহিরাগতরা এসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। শ্রমিকরা কখনো এমন কাজ করতে পারে না। যারা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে, তাদের ধরে শাস্তি দিন।
এদিকে বৃহস্পতিবারও রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ পাটকল শ্রমিকরা। শ্রমিকরা নগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন। এছাড়া তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মূলত বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ডাকে ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো- নিয়মিত সাপ্তাহিক মজুরি ও বেতন প্রদান, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ-গ্রাচ্যুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনঃবহাল, সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।