নগরীতে ‘একতা ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সমবায় সমিতির’ নামে চাঁদা উত্তোলন : মাসে লাখ টাকা 

0
702

কামরুল হোসেন মনি:
নগরীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খুলনা বিভাগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসুস্থ ও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এই হাসপাতালের মেইন ফটকের সামনে অঘোষিতভাবে ইজিবাইকের স্ট্যান্ড। এর ফলে জরুরি রোগীদের এ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াতেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া যত্রতত্রভাবে ইজিবাইক সারিবদ্ধ থাকায় প্রতদিনিই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জানযট লেগেই থাকে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ও তার পাশের গ্যারেজের সামনেও রয়েছে ইজিবাইক অবস্থান করছেন। এই দুই স্পট থেকে ‘একতা ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সমবায় সমিতি’ চালকদের কাছ থেকে চাদা উত্তোলন করছেন। যা পরিমান মাসে লাখ টাকার ওপরে। এই চাদার টাকা ওই সমিতির নিয়োজিত ৪ জনের নাম অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। হাসপাতালে ক্যাম্পাসে ইজিবাইক ঢুকলে চাদা পরিমান ১০-৫০ টাকা এবং হাসপাতালের মুলফটকে সামনে দাড়ালে ১০ টাকা চাদা আদায় করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সরেজমিনে এই দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিবেদকের।
হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বহিরাগত এ্যাম্বুলেন্স, ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যান রোগীসহ আনায়নে প্রবেশ ছাড়া হাসপাতালের ক্যাম্পসে প্রবেশের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকার সর্তেও তা মানছেন না।
এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ শনিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালে বহিরাগত এ্যাম্বুলেন্স, রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক রোগী ব্যতিত প্রবেশ নিষেধাজ্ঞারা রয়েছে। চাদা আদায় উত্তোলন বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রথম জানতে পারলাম। কোন স্টাফ এর মধ্যে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া হাসপাতালের ক্যাম্পাসের মধ্যে কোন ইজিবাইক অবস্থান করতে দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কেএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার, এ এম কামরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, এ বিষয়ে আগেও মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি উল্লেখ করে বলেন, সুর্নিষ্টি অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের আটক করা হবে।
একতা ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সমবায় সমিতির সাবেক সেক্রেটারি মোঃ মশিউর রহমান মিলন শনিবার সন্ধ্যায় সার্বিক বিষয়ে স্বীকার করে বলেন, যারা চাদা উত্তোলন করছেন তারা তাদের সমিতির সদস্য। এই চাদা দিয়ে সমিতির খরচ ও যানজট নিরসনে দায়িত্বদের বেতন  দেয়া হয়। বাকি যে টাকা থাকে তা সমিতির ফান্ডে জমা হয়। বাইরে থেকে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত ইজিবাইক থেকে চাদা আদায় করা হচ্ছে উল্লেখ করে এর ওপরে যে যা খুশি দিল। এছাড়া হাসপাতালের ভেতরে অবস্থানরত ইজিবাইক থেকে হেমায়েত নামে একজন টাকা উত্তোলন করছিল, সে জেলে থাকায় এখন কেউ টাকা তোলে না। তবে এ বিষয়ে লেখা লেখি না করলে ভাল হতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই সমিতির ভেঙ্গে দিয়ে তিন সদস্য কমিটি করা হয়েছে নির্বাচনের জন্য। তিনি বর্তমানে ইজিবাইক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি ও একতা ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সমবায় সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন।
এ ব্যাপারে ‘একতা ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সমবায় সমিতির’ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আঃ জলিল গাজী মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ছেলে পরিচয় দিয়ে বলেন তিনি বাইরে আছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালের ক্যাম্পেসা অবস্থানরত ইজিবাইক ও হাসপাতালের মুল ফটকের সামনে অবস্থিত ইজিবাইক থেকে ওই সংগঠনের নামে প্রতিটি ইজিবাইক থেকে ১০ টাকা করে চাদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা ইজিবাইক থেকেও চাদা উত্তোলন করেন। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার থেকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। এছাড়া এই অভিযোগের ভিত্তিতে মাস চার আগে কেএমপি ডিবি পুলিশ ইজিবাইক থেকে চাদা উত্তোলনের সময় হাতে নাতে আটক করেন।
কয়েকদিন অনুসন্ধান ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ‘একতা ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সমবায় সমিতির’ (যার রেজিনং ২৬৩) সাবেক সাধারন সম্পাদক মোঃ মশিউর রহমান মিলন ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আঃ জলিল গাজী নেতৃত্বে চলে এই চাদার উত্তোলন। এর আগে ওই সংগঠনের মিলন এককভাবে তার নিয়োজিত লোকজনের মাধ্যমে এই চাদা উত্তোলর করছেন। দেখা গেছে, বোকরা জামাল, মোঃ মেহেদী হাসান, শেখ মনিরুল ইসলাম মুন্না এরা তিনজন হাসপাতালে সামনে থেকে চাদা উত্তোলনে দায়িত্ব রয়েছেন। প্রতিটি ইজিবাইক থেকে সর্বনি¤œ ১০ টাকা উত্তোলন করছেন। আর হাসপাতালের ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইজিবাইক থেকে টাকা উত্তোলন করছেন হেমায়েত নামে আরেক জন। এখান থেকে ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চাদা আদায় করা হয়। যারা ওই সমিতির অন্তর্ভুক্ত তারাই ভেতরে ঢুকতে পারবেন। এছাড়া ওই সংগঠনের সদস্য ছাড়া কোন ইজিবাইককে ভেতরে অবস্থান করতে দেয় না। সাড়ে ৩শ’ টাকার মাধ্যমে ওই সমিতির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এরপরে রয়েছে সমিতির নির্দিষ্ট মাসিক চাদা। এভাবেই ওই সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিদিন হাসপাতালের ক্যাম্পাস ও হাসপাতালের মুল ফটকের সামনে অবস্থানরত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২শ’ ইজিবাইক থেকে এই চাদা উত্তোলন করা হচ্ছে। যা মাসিক চাদার পরিমান লাখ টাকারও ওপরে।
শনিবার হাসপাতালে মুলফটকের গেটের সামনে দুপুরে অবস্থানকালে দেখা যায়, খয়েরি রঙের হাফ হাতা গ্যাঞ্জি পরিহিত এক লোক লাঠি হাতে নিয়ে ইজিবাইক দাড়ানোর মাত্রই সামনে চলে যান। আর এক হাতে টাকা নিয়ে পকেটে রাখছেন। ওই লোকটি নাম মেহেদী হাসান। এর আগের দিন বোকরা জামাল নামে আরও এক লোককে একইভাবে টাকা উত্তোলন করতে দেখা যায়। আর হাসপাতালের ক্যাম্পাস থেকে অবস্থানরত ইজিবাইক চালকের কাছ থেকে হেমায়েত নামে এক বয়স্কা লোক টাকা উত্তোলন করার দায়িত্ব রয়েছে। এখানে চাদা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। #