দেশ বাঁচাতে হলে কৃষকদের বাঁচতে হবে

0
349

দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ, সংকটে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে দেশের কৃষকরা নতুনভাবে বিপাকে পড়েছে। এখন বোরো ধান কাটার পাশাপাশি তরমুজ-বাঙ্গি, সবজি ও আম ঘরে ও বাজারে তোলার মাস। বোরো কাটার পরপরই বোনা হবে আউশ, আমন ও পাট। কিন্তু এখনই ধান কাটার শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি কৃষির বিভিন্ন ধাপে বহুমুখী সংকট দেখা যােেচ্ছ। ধান কাটার লোক নেই, পাটের বীজের আমদানি অর্ধেকে, মজুর খাটানো ও সেচের টাকাও নেই কৃষকের ঘরে। সবচেয়ে বড় সমস্যা শ্রমিকেরাও তো ঘরবন্দী। ধান-সবজি-ফল মিলিয়ে এপ্রিল-মে মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন কৃষিপণ্য বাজারে আসে। কৃষকের সারা বছরের বিনিয়োগের ফসল তোলার মৌসুম। তাঁরা ফসলের দাম না পেলে খাদ্যনিরাপত্তা বলি, কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বাঁচানো বলি, সবই ঘোর সংকটে পড়ে গেছে করোনার কারণে। সংকট কাটানো না গেলে জুন থেকে খাদ্য সরবরাহেও ধাক্কা পড়তে পারে। যা করার এখনই করতে হবে। হাওরের ধান পেকে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এর পরেই উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ধানও ঘরে তুলতেই হবে। চিচিঙ্গা, ঝিঙে, পটোল, টমেটোসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি মাঠ থেকে তোলা আর বাজারে নেওয়ার মতো শ্রমিক ও ব্যবসায়ী মিলছে না। আমচাষিদেরই বা কী হবে? পাটের বীজ আসেনি ভারত থেকে, এলেও রোপণ হবে কার হাত দিয়ে? লকডাউনজনিত পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক যেতে পারছেন না; গেলেও মজুরি দেওয়ার সক্ষমতা অনেকেরই নেই।
দেশের অর্থসংস্থানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে খাদ্যের জোগানদার খাত হিসেবে কৃষি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের কৃষি ব্যবস্থার এক ধরনের চিরাচরিত নিজস্বতা থাকলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এ ব্যবস্থা এখন এক আশা জাগানিয়া সমৃদ্ধির স্তরে উঠে এসেছে। ধান, গম, ভুট্টা ও আলুর মতো প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে সাফল্যের পাশাপাশি সবজি, ফলমূল ও মশলাজাতীয় ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে। সেইসাথে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। পাশাপাশি মাছ, মাংশ, ডিম ও দুধ উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কিন্ত বর্তমান করোনা পরিস্থিতির দ্বারা খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা আক্রান্ত হওয়া মানে বাঁচা-মরার আর এক সংকটের মুখোমুখি হওয়া। এ কারণে কৃষির ওপর করোনা পরিস্থিতির প্রভাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ বা উত্তরণের জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হবে এবং তা করতে হবে এখনই। কৃষকদের পাশে সর্বোচ্চ এবং সবধরণের সহায়তা দিয়ে রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে; সবার আগে করোনা থেকে এদের রক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে কৃষকরা করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যেন শামিল থাকে সে জন্য সরকার স্বাস্থ্যবিভাগ ও তথ্যবিভাগের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজস্ব খাতের প্রণোদনা এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম যাতে মাঠপর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কৃষিপণ্যের পরিবহন, গুদামজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ কাজসমূহ নির্বিঘ্ন হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি কৃষকরা এবং কৃষি উৎপাদন যেন মুখ থুবড়ে না পরে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। করোনার কারণে যে অর্থনৈতিক ধস দেখা দেবে তখন টিকে থাকার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাই সবার আগে। এজন্য বালা যায়, এখন কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।