দেবহাটায় চাঞ্চল্যকর জুয়েল হত্যাকান্ডের দেড় মাস অতিবাহিত: ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসপি

0
294

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার দেবহাটায় চাঞ্চল্যকর জুয়েল হত্যাকান্ডের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত হত্যার মোটিভ উদঘাটন বা জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। চলছে তদন্ত, তবে চলমান তদন্তের শুরু থেকেই সন্দেহের তীর নিহতের স্বজনদের দিকেই রয়ে গেছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
গত ২জুন বুধবার রাতে দেবহাটা থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে নিজ বাড়ীর পুকুরপাড়ে বসে থাকাবস্তায় দূবৃর্ত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন আশিক হাসান জুয়েল (৩২)। পরে রাতেই পাশ্ববর্তী আরেকটি পুকুর থেকে জুয়েলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকান্ডের শিকার জুয়েল দেবহাটা সদর পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকার অন্যতম ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তি মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে।
৩০ বিঘা জমির ভুতুড়ে ভিটাবাড়ি সহ অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক জুয়েল বরাবরই বেপরোয়া জীবনযাপন করতো। মাদকে আসক্তসহ ছিল সঙ্গদোষও। দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটায় ওই বাড়িটিতে মা ও ছোট্ট শিশুপুত্র আরিয়ান (৭) কে নিয়ে বসবাস করতো সে। জুয়েলের বেপরোয়া জীবনযাপন ও একগুয়েমি স্বভাবের কারনে প্রতিনিয়তই সংসারে কলহ লেগেছিল। তার বড়ভাই আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান রাজু চাকুরী ও ব্যবসার সুবাদে বসবাস করেন ঢাকাতে। জুয়েলের যন্ত্রনায় সবসময় অতিষ্ঠ থাকতো তার মা, ভাই রাজু ও পাশ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী মামা সাবেক ইউপি সদস্য মনিসহ নিকট আত্মীয়রা।
জুয়েলকে হত্যার পর তার ভাই রাজু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে দেবহাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০১।
পরে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে জুয়েলের অন্যতম সহযোগী ইমরোজ আলী ওরফে চোর ইমরোজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। পাশাপাশি জুয়েলের মা, ভাই রাজু, মামা মনি, স্থানীয় আ’লীগ নেতা ভোলা সহ তার সংষ্পর্শে থাকা বাড়ির কাজের ছেলে আলিম, গৃহপরিচারিকা রওশন আরা, কোমরপুরের মিনহাজ, নওয়াপাড়ার হারুন বিশ্বাসসহ ডজনখানেক ব্যাক্তিদের থানায় নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বেপরোয়া জীবনযাপনের পাশাপাশি নিজের মা, ভাই ও মামার সাথে সবসময় দূর্ব্যবহার করতো জুয়েল। এতে করে সবসময় পারিবারিক কলহ লেগে থাকায় জুয়েলকে নিয়ে বেকায়দায় ছিল তার পরিবারের সদস্যরা। এসব থেকে পরিত্রান পেতে একাধিকবার তার মামা মনিসহ পরিবারের লোকজন স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বরের দারস্থও হচ্ছিলেন। হত্যার পর জুয়েলের আত্মীয় স্বজনসহ তার সংষ্পর্শে থাকা সন্দেহভাজন প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল আরেকটি সূত্র জানায়, বর্তমানে কারাগারে থাকা ইমরোজ আলী হত্যাকান্ডে অন্যতম সন্দেহভাজন। এছাড়া দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েলের মামা সাবেক মেম্বর মনি ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা ভোলার আচরণ অনেকটা সন্দেহজনক মনে হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে নিহতের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় প্রত্যেকবার জিজ্ঞাসাবাদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদেরকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এছাড়া মামলার তদন্তকালে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অসহযোগীতা দেখা যাচ্ছে। পারিবারিক অস্থিরতার কারনে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে কিনা তাও পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানায় সূত্রটি।
অপরদিকে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে নিহতের ভাই রাজু বলেন, আমরা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত পুলিশের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। কিন্তু হত্যার দেড়মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হত্যার মোটিভ উদঘাটন বা জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে শনিবার হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। পরিদর্শনকালে তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ক্লু-লেস হত্যাকান্ডটির জট খুলতে বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নিহতের পরিবার থেকে হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তেমন কোন তথ্য না পাওয়ায় এবং কোন প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় হত্যার রহস্য উদঘাটন বিলম্বিত হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে মোটিভ উদঘাটন সহ হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এসময় দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ফরিদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।