দূর্যোগ ও দস্যুদের উৎপাত, তবুও মৎস্য আহরণে সমুদ্র যাত্রা জেলেদের

0
837

মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা, খুলনা টাইমস:
ঝড়-জলোচ্ছ¡াস আর দস্যুদের উৎপাতের শংকা মাথায় নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে শুটকী মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছে জেলেরা। সোমবার ভোর রাতে হাজারও জেলে মোংলার পশুর নদীর চিলা মোহনা থেকে একত্রে জাল-নৌকা ও শুটকী তৈরির উপকরন নিয়ে সাগর পাড়ের দূর্গম চরাঞ্চল ও সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এ শুটকী মৌসুমকে ঘিরে এ বছরও সুন্দরবনের দুবলা চরাঞ্চলে অন্তত ৩০ হাজার জেলে-ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের সমাঘম ঘটবে বলে আশাবাদী বনবিভাগ। সেই সাথে বাড়বে শুটকী প্রক্রিয়ারন খাতে বনবিভাগের রাজস্ব আয়ও।
তবে সুন্দরবন এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবার কিছুটা সময় পিছিয়ে শুরু হলো সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়া করণের মৌসুম। আগামী ৪ মাস (ফ্রেব্রæয়ারী) পর্যন্ত মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের হাজারও জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবে। এছাড়া বৃহত্তরচট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও পৌছাবেন দুবলার চরাঞ্চলে।
পূর্বসুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল জানান, মৌসুমের শুরুতেই রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ। মোংলা থেকে নদী পথে দুবলা জেলে পলীøর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সুন্দরবন সংলগ্ন এ পল্লীর সব কর্মকান্ড জেলে ও মৎস্যজীবিদের ঘিরে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৩ টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলা জেলে পলীø। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরো জানান, মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোরকোল, মেহেরআলী এবং শ্যালার চরসহ বেশকয়েকটি চর তারা পরিদর্শন সহ স্থান নির্ধারন করেছেন। অপরদিকে জেলেদের অভিযোগ, দুবলার চরে যাওয়ার পথে এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে থাকেন তারা। তাই চলতি মৌসুমে জেলেরা যাতে সাগরে নির্বিঘেœ মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জেলে ও মহাজনেরা।
এ ব্যাপারে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপে’র সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস ও জলদস্যুদের উৎপাতের আতংক মাথায় নিয়েই উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমি জেলেরা জাল-নৌকা ও মাছ আহরণের উপকরণ নিয়ে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছেন হাজারও জেলে। জেলেদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মংলা সদর দফতর) জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহাম্মদ আলী চৌধুরী জানান, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় সবসময় দস্যু দমন অভিযান অব্যাহত থাকে। তবে সাগরে শীতকালীন মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়া করণের জন্য জেলেদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে আরও কঠোর থাকবে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে মৎস্য আহরণ ও সমুদ্র যাত্রাকে ঘিরে উপকূলের জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে নানা আমেজ বিরাজ করছে। এসব পরিবারে স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধির হরেক রকম আনুষ্ঠানিকতাও চলছে।
প্রতি বছর মৌসুমে সুন্দরবনের গহীণে সাগর পাড়ের দুবলা, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিক খালী, কবর খালী, চাপড়া খালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবি জড়ো হয়। এসব চরে অবস্থান নিয়ে জেলেরা সমুদ্র মোহনায় মৎস্য আহরণ করে। পাশাপাশি জেলেরা সেখানে নিজেদের থাকা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারের পর তা শুঁটকি করার পর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজারজাত করে থাকেন। #