দু’মাসে ক্ষতি ৯২ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে

0
248

করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশের উদ্যোক্তারা। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা এসএমই খাত সরকারঘোষিত প্রণোদনার টাকা পেতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে। সরকারঘোষিত প্রণোদনার টাকা পেতে পদে পদে হয়রানি হতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। তৈরি পোশাক খাত প্রণোদনা টাকা যতটা সহজে পেয়েছে, এসএমই খাতের জন্য সেই টাকা পেতে ততটা কঠিন। এসএমই খাতের প্রণোদনার টাকা বিতরণে গঠিত ১১ সদস্য কমিটির বৈঠকেও ব্যাংকগুলোর অনীহা অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে প্রণোদনার টাকা দ্রæত ছাড় করার তাগিদ দেন তাঁরা। করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে একটি জরিপ করেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। সরকারি সংস্থাটি বলেছে, করোনায় এই খাতে দুই মাসে ক্ষতি হয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। গবেষণায় দেখা গেছে, সুদ পরিশোধ ছাড়াই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এই ৯২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিআইডিএসের জরিপ বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রণোদনার টাকা পেতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা পূরণ করে টাকা পাওয়া অনেক কঠিন। কারণ, মাত্র ৩৮ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি ৬২ শতাংশ উদ্যোক্তা কখনো ব্যাংকে যাননি। ৪৯ শতাংশ উদ্যোক্তার এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি ৫১ শতাংশেরই এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই।
মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ২৫ শতাংশ আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাত থেকে। শিল্প খাতের কর্মসংস্থানের ৮৬ শতাংশই হয়ে থাকে এসএমই খাতে। এই খাত মাসে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করে এবং মজুরি দেয় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিতে এত বিশাল অবদান রাখা সত্তে¡ও সরকারের সহায়তা কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই খাত। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট ৯০ শতাংশ শিল্প ইউনিট এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশই হচ্ছে এসএমই খাতে। তার পরও এই খাত নিয়ে এত অবহেলা কেন? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ের বিষয়ে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা অযৌক্তিক; দ্রæত সেগুলো শিথিল করা প্রয়োজন। করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পেরে এসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন, অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমরা চাই, এসএমই খাতকে সহযোগিতার জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রæত বাস্তবায়ন করা হোক। এই খাতের উদ্যোক্তাদের রক্ষা করার পাশাপাশি আড়াই কোটি শ্রমিকের কর্মসংস্থান রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।