দাকোপে সন্দেহভাজন ‘রোহিঙ্গা দল’ গুজব, ‘বোরকা পার্টির’ আতঙ্ক ছড়াছড়ি

0
1532

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
খুলনার চালনা পৌরসভার আঁছাভূয়া বাজার থেকে প্রায় মিনিট পাঁচেক পথ হেঁটেই চালনা মোবারক মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ। কলেজের বিপরীতে নিজস্ব বহুতল ভবনে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার বসবাস। শুক্রবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয়রা হঠাৎ দেখতে পান রাস্তার পাশে কয়েকজন সন্দেহভাজন ‘রোহিঙ্গা নারী’ দাঁড়ানো। ওখানকার একটি বাড়ির ভিতরে যতই এগোতে থাকেন, সন্দেহভাজন ‘রোহিঙ্গা দলের’ লোকের সংখ্যা তত বাড়তে থাকে।

স্থানীয় সুত্রমতে, কয়েকজন সংঘবদ্ধ লোক এলাকায় ঢুকেছে বোরকা পরে, এরা বাড়ি ঢুকে ছোট বাচ্চা ও নারীদের অজ্ঞান করে টাকা-পয়সাসহ শরীরের মূল্যবান অঙ্গ নিয়ে যাচ্ছেন। তবে বাচ্চা ও নারীদের অজ্ঞান করতে দেখেনি কিন্তু শুনেছেন।

থানার উপপরিদর্শক পলাশ কুমার দাশ বলেন, এভাবেই গত কয়েক দিন ধরে ‘সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা দল’ ও ‘বোরকা পার্টির’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাবাসির মধ্যে। বিশেষ করে চালনা পৌরসভা, সুতারখালি, পানখালী ইউনিয়ন ও এর আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে ওই আতঙ্ক অনেক বেশি। ইতোমধে উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। তবে এসব ঘটনাকে গুজব বলে আখ্যায়িত করছেন তিনি।

শুক্রবার দিবাগত রাতে ওই কলেজের বিপরীতে থাকা জব্বার তালুকদারের বহুতল ভবনে সন্দেহে প্রায় ১৫জন ‘রোহিঙ্গা নারী’ দল দেখতে পেয়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। পরে দাকোপ থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীদের তথ্য সংগ্রহ করে দেখেন তারা কেও ‘রোহিঙ্গা নারী’ নয়। ওই নারীর দল এলাকাতে ক্রোকারিজ পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে এসেছে। এরপর একই দিনে উপজেলার লক্ষ্মীখোলা গ্রামে রোহিঙ্গা সন্দেহে বা বোরকা পার্টির সদস্য ভেবে এক অপরিচিত পাগলকে বেধড়ক মারপিঠ করেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এলাকায় কোনো অপরিচিত নারী বা পুরুষ দেখলেই মানুষ সন্দেহ করছে। বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করা হচ্ছে তাঁকে। বেশি সন্দেহ হলে ধরে থানা পুলিশকে অবহিত করছে। বিশেষ করে বোরকা পরা কোনো নারীকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখলে সন্দেহ বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি।

উপজেলার সুতারখালী গ্রামের উর্মিলা মণ্ডল নামের এক গৃহবূধ আতঙ্কের কথা জানান, যদিও এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তিনি নিজে দেখেননি। তিনি বলেন, শুনেছেন, নারী ও পুরুষেরা বোরকা পরে মাইক্রোবাস নিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এরপর কোনো বাড়িতে উঠে প্রথমে সেই বাড়ির মানুষকে অজ্ঞান করে টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে ছোট বাচ্চাদেরও। এটা নিয়ে এলাকার মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এলাকায় কোনো অপরিচিত মানুষের আনাগোনা দেখলেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে তাঁদের আতঙ্ক আরও বেশি।

উপজেলার সদরের কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত মানুষের ঘোরাঘুরি বেশি দেখা যাচ্ছে। ওই অপরিচিত মানুষেরা রোহিঙ্গা হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। ওই অপরিচিত মানুষগুলো এলাকার মানুষের আতঙ্কের কারণ।

থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোকাররম হোসেন খুলনাটাইমসকে বলেন, ঘটনাটি আসলেই গুজব। বোরকা পরে কেউ কোনো বাড়িতে হানা দিয়েছে বা বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে গেছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। থানায়ও কেউ এখনো অভিযোগও করেনি। তবে এলাকাবাসী কিছু অপরিচিত মানুষকে ধরে আটক করে রেখেছিল। পরে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সঠিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে জানা গেছে সন্দেহভাজন ‘রোহিঙ্গা নারী’ দলের আসল ঠিকানা কুমিল্লার বড়ুয়ার গ্রামের বাসিন্দা।

ওসি আরও বলেন, আতঙ্ক ছড়ানোর পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন করে রোহিঙ্গা সন্দেহে বোরকা পরা মানুষ ঘোরাঘুরি করছে বলে জানাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় পুলিশ গিয়ে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। এলাকার মানুষও ওই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে না। কোনো একটা সংঘবদ্ধ চক্র মানুষকে হেনস্তা করার জন্য ওই গুজব রটাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। যেহেতু কোথাও ওই ধরনের কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি, তাই এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হতে মাইকিং করা হচ্ছে।