দাকোপে মাদকের ছড়াছড়ি

0
1234

দাকোপ প্রতিনিধি :
খুলনার দাকোপ উপজেলায় চলছে মাদকের ছড়াছড়ি। উপজেলার ৩০টির বেশি স্পটে মাদক কেনাবেচা হলেও পুলিশ প্রশাসন মাঝেমধ্যে সামান্য গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা জব্দ করলেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন কিছুই করতে পারছেন না।
জানা গেছে, প্রভাবশালী ক’জন মাদকস¤্রাট পর্দার আড়ালে থেকে অসাধু কিছু পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে দেশী মদের ব্যবসায়ী দীপংকর মন্ডল, ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রেতা চালনা বাজারের আছমা বেগম, নাসিমা বেগম, ইয়াবা ব্যবসায়ী সীফাত হোসেন, খুশি, আয়নাল হাওলাদার, চালনা বৌমার গাছতলার ইসমাইল হোসেন, খোকন বিশ্বাস, বানিশান্তা বাজারের আজিজ হাওলাদার, পানখালীর হরমুজ, মুনছুর আলী, মোহাম্মাদ আলী বিদ্যালয় এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী নূরুজ্জামান, আঁছাভূয়ার সুশিল আচারী, বটবুনিয়া বাজারের নজু, লক্ষ্মীখোলার মিন্টু, জালিয়াখালীর মনমোথন, কামারখোলার রশিদ, তিলডাঙ্গায় সুদীপ্ত, অরবিন্দু, নলিয়ানের পচা ঢালী, বাজুয়ায় বুলি ও তার ছেলে রনি, দীপংকার, ধোনা, বানিশান্তার রনি, কালাম।
চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের নিযুক্ত করা বিক্রেতারা প্রতিদিন উপজেলার চালনা বাজারের বৌমার গাছতলা, আঁছাভূয়া বাজার, আবুল হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে, আশা সমিতির অফিস সংলগ্ন, কাজী পাড়া, নলোপাড়া, বাজার, তুলসির ঘাট, চালনা নদীর পাড়, পৌরসভা গরুহাটখোলা, গফুরের স’মিল, সরকারি গ্যাল্স স্কুল সংলগ্ন, চুনকুড়ি খেয়াঘাট, লঞ্চঘাট, মোহাম্মাদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন, পানখালী ফেরিঘাট সংলগ্ন, খলিশা ব্রাক অফিস সংলগ্ন, মমতাজ বেগম স্কুল সংলগ্ন, বটবুনিয়া বাজার, জালিয়াখালী খেয়াঘাট সংলগ্ন, তিলডাঙ্গা, লক্ষ্মীখোলা, মোল্লে বাড়ি খেয়াঘাট, বুনারাবাদ, সুতারখালীর তেলিখালী বাজার, কেওড়াতলা বাজার, নলিয়ান বাজার, কালাবগী, ধৌপাদি বাজার, দাকোপ বাজার, পোদ্দারগঞ্জ ফেরিঘাট সংলগ্ন, বাজুয়া বাজার, খুটাখালী বাজার, বানিশান্তা বাজার, বানিশান্তা পতিতালয়, লাউডোব খেয়াঘাট এলাকায় চলে রমরমা মাদক বিক্রয়।
উপজেলায় মাদকপল্লিতে পরিচিতি পেয়েছে চালনা বাজার, বানিশান্তা বাজার, পতিতালয়, দাকোপ বাজার, পানখালী, বাজুয়া বাজার ও কালাবগী এলাকা। এসব এলাকায় প্রতিদিন মাদক কেনাবেচার হাট বসছে। পুলিশ প্রশাসন মাদক নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিলেও থানা পুলিশ বখরা আদায়ে ব্যস্ত বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মাঝেমধ্যে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদকের বড় চালানসহ আটক করলেও পুলিশের কৌশলগত চার্জশীটের বদৌলতে এসব মাদক ব্যবসায়ী অল্প দিনেই মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে।
দাকোপের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি কানাই মন্ডল বলেন, তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে মাদক নির্মূল করতে হবে। এর জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মাদকের ভয়াবহতায় মেধাশূন্য হচ্ছে ছাত্রসমাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চালনা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশ যদি ঠিকভাবে তৎপর হয়, তাহলে উপজেলায় সাত দিনের মধ্যে মাদকমুক্ত করা সম্ভব। ঘুষ বাণিজ্যের কারণে বন্ধ হচ্ছে না মাদকের বিস্তার। প্রায় সময় আটক ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেও থামছে না মাদকের ভয়াবহতা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, চালনা বাজারে যখন বন্দর ছিল, তখন বন্দরের স্বার্থে এখানে আফগারীর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন তো আর বন্দর নেই, তাহলে এমন শান্তিপূর্ন উপজেলাতে দেশী মদের আফগারীর কোনো প্রয়োজন নেই। আফগারী থেকে আমাদের স্কুল কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়েরা খুব সহজেই প্রতিনিয়ত মদ পান করছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে সমাজ। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তারা আরও বলেন, আফগারী ও লাইসেন্সের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাহাবুদ্দীন চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আমরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করছি। ইতোপূর্বে থানায় চার জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। এমন কী শুক্রবার অভিযান চালিয়ে সীফাত নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছি। সারা দেশের ন্যায় দাকোপে মাদক নির্র্মূল করার লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় বর্তমানে র‌্যাবের মাদক বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, দাকোপে যে পরিমান মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে উপজেলায় একটি ভয়াবহরূপ ধারণ করছে। তিনি আরও বলেন, দেশী মদের আফগারীটির জন্য ধ্বংস হচ্ছে এখানকার সমাজ।