দাকোপে দুর্গোৎসবে পুতুল নাচের নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য

0
1981

আজিজুর রহমান,খুলনাটাইমস :
খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নে দুর্গোৎসবে পুতুল নাচের নামে অশ্লীল নৃত্যের (নগ্ন নাচ) আসর বসিয়ে লাখলাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শ্রীনগর গাতিদার বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদ। চলছে জুয়া ও মাদকের ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে এর সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় আ’লীগ নেতা, প্রশাসন ও পুলিশ।

 

প্যান্ডেলে নগ্ন নাচ পরিবেশন করছে রাজশাহীর জনি যাদু ও পুতুল নাচ নামের একটি দল। দলের ম্যানেজার নজরুল মোল্লা বলেন, সোমবার (১৫ অক্টোবর) থেকে ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের খোয়াঘাট সংলগ্ন দুর্গামণ্ডপে উৎসব উপলক্ষে রাতে অশ্লীল ও কুরুচীপূর্ণ অনুষ্ঠান চলছে। উপজেলা এবং বাইরের উপজেলা থেকে আগত হাজার হাজার দর্শক ১শত টাকার টিকিট নিয়ে অপেরার প্যান্ডেলের ভিতরে প্রবেশ করে এ দৃশ্য উপভোগ করছে। তিনি আরও বলেন, এটি চালানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পুলিশকে টাকা দেওয়া হয়েছে।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোকাররম হোসেন মুঠোফোনে পুলিশের সাথে টাকা লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, রাত ১০টার পরে পূজার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেখানে অশ্লীল নৃত্য হচ্ছে কি না সেটা আমার জানা নেয়।

মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রাতে ওই মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গামণ্ডপের পাশ্বে বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে চারপাশ ঘেরা। বেড়ার মাঝে অপেরার মঞ্চ। গভীর রাতে সেখানে অশ্লীল নাচ (নারী নগ্নতা) দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা আদায় করে কর্তৃপক্ষ। প্রবেশ পথে দৃর্গোৎসবের টিকিটের বিনিময়ে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা ও অপেরা। অপেরার প্যান্ডেলের ভিতরে ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ না করার জন্য রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। প্রতিবেদনের স্বার্থে এ প্রতিবেদক অতিকষ্ঠে কিছু দৃশ্য ধারণ করেন।

 

অনুষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করে স্থানীয় এলাকাবাসি বলেন, স্মার্ট ফোন ও ভারতের সিরিয়ালের প্রভাবে উঠতি বয়সের যুবক যুবতিদের কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না তার উপর এ উলঙ্গ নৃত্য ! সমাজটা যাচ্ছে কোথায়? আমরা বাংলাদেশে আছি না ইউরোপের কোনো দেশে আছি? তারা আরও বলেন, গেল এক বছরে এ উপজেলায় ধর্ষণ, খুন ও আত্মহত্যা বয়েই চলছে। ওই মন্দিরে পূজা দেখতে আসেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কানাই মন্ডল। তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থি ও যুব সমাজকে ধ্বংস করে এমন অনুষ্ঠান যারা আয়োজন করে এবং যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা অনুমতি দেয় তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন প্রশাসন কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেন না?

শ্রীনগর গাতিদার বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি অমর কৃষ্ণ গাতিদার বলেন, মন্দির উন্নয়নের জন্য পুতুল নাচ ও যাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। নগ্ন নাচ ও জুয়ার কথা জানতে চাইলে। অস্বীকার করে লাজুক সুরে তিনি বলেন, এখানে পুলিশ প্রশাসন, দলীয় নেতা, সাংবাদিকসহ আরও অনেকে থাকেন। এর মাঝে কিভাবে অশ্লীল নাচ, গান দেখাই?

বিষয়টি জানার জন্য মুঠোফোনে কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওখানে একটি পুতুল নাচ হচ্ছে। সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখি পূজার কাজ চলছে। আমার কাছে পুতুল নাচের বিষয়টি জানালে আমি বলি কোন প্রকার অসামাজিক কর্মকাণ্ড যেনো না হয়। এখন ওখানে যদি অশ্লীল কর্মকাণ্ড চলে তাহলে সেটি বন্ধের চেষ্টা করব। চেয়ারম্যান দাবী করে আরও বলেন, অশ্লীল কাজের সাথে তিনি কোনোভাবে জড়িত নয়।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ খুলনাটাইমসকে  বলেন, এ ধরনের অশ্লীল নৃত্য যদি হয়ে থাকে তাহলে আমি ওই মন্দিরের পূজা কমিটির আয়োজকদের ডেকে বন্ধের নিদের্শ দিবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।