নিজস্ব প্রতিবেদক,খুলনাটাইমস :
খুলনার দাকোপ উপজেলায় আমেনা খাতুন(১৮) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর বাড়ির লোকেরা তাকে হত্যা করে ঘরের ভিতরে গলায় ওড়না দিয়ে আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে বলে মৃতের স্বজনদের অভিযোগ।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে উপজেলার চালনা পৌরসভার আঁচাভূয়া গৌড়কাটি গ্রামে ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা রুস্তম আলী মোড়ল বাদী হয়ে দাকোপ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যৌতুক হিসাবে দুই লক্ষ টাকা দাবী করে। যৌতুকের দাবী অপরাগতা স্বীকার করায় ওই গৃহবধূর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তারা। মৃতের পিতার এজাহারের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তাকে লাঠি-সোটা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে কিন্তু মৃত্যুর পরেও তাকে জানানো হয়নি। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামীসহ চারজনকে আসামী করে এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকমুখে জানা গেছে, গৌড়কাটি গ্রামের বাসিন্দা বাবর আলী গোলদারের ছেলে মিরাজুল গোলদারের সাথে কামারখোলা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা রুস্তম আলীর মেয়ে আমেনা খাতুনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে প্রায় চার মাস তারা একই সঙ্গে থাকে। এরমধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অকারনে শারীরিক নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
মৃতের স্বামী মিরাজুলের স্বজনেরা তাদের বৌমার সাথে পরকীয়া সম্পর্কের ঘটনায় আত্মহত্যা করেছে দাবী করে বলেন, ওই গৃহবধূর সাথে তার ফুফাতো ভায়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিন ধরে। মৃত্যুর প্রায় ২০ দিন আগে সেটি জানতে পারি। তারপর বৌমার বাবার বাড়িতে খবর দেই। তারা এসে সে বিষয়ে কথা বলে যায়। এরপর থেকে বৌমা লুকিয়ে মুঠোফোনে কথা বলত। সে কারনে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয়া হয়। তারা আরও বলেন, ঘটনার দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে সাংসারিক কাজকর্ম সেরে সকালে নাস্তা খেয়ে তার নিজের ঘরে চলে যায়। পরে প্রায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়ির বড় বৌমা শাফিয়া বেগম কাজের জন্য ডাকাডাকি করতে থাকলে কোনো সাড়া না পেয়ে তার ঘরের দিকে গিয়ে দেখে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলে আছে। বড় বৌমার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে নিহত গৃহবধূর মৃতদেহ নিচে নামিয়ে রাখে।
মৃতের স্বামী মিরাজুল গোলদার(২৩) বলেন, সকাল সাড়ে আটার দিকে গাড়ির কাজের জন্য খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সকালে তাকে ভাল দেখে গেছি। কিন্তু কেনো সে আত্মহত্যা করল তা বলতে পারছি না।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোকাররম হোসেন সন্ধ্যায় মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স সঙ্গে নিয়ে দেখি ওই গৃহবধূর মৃতদেহ। ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা হবে বলে জানায় ওসি। তিনি আরও বলেন, মামলার পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। তবে এটি আত্মহত্যা না হত্যা করা হয়েছে সেটি তদন্ত রিপোর্টের উপর নির্ভর করবে।