দাকোপে আ. লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ, উত্তেজনা

0
769

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
খুলনার দাকোপ উপজেলায় মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। দুই পক্ষই হুশিয়ারী দিয়ে আন্দোলন করছে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন ও অন্যটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সাংসদ ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে।

কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনসুর আলী খানের কাছে তিনি পরাজিত হন। মুনসুর ছিলেন সাবেক সাংসদ ননী গোপাল মণ্ডলের সমর্থনপুষ্ট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় থেকে ননীগোপাল ও আবুল হোসেনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সে সময় ননীগোপাল দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে ননী গোপাল হেরে যান। এরপর থেকে তাঁর অনুসারীরা অনেকটা চাপে পড়েন। কিন্তু বর্তমান সময়ে ননী গোপালের সমর্থন হিসেবে মুনসুর আলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কিছুটা উজ্জীবিত হয় তাঁর অনুসারীরা।


অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনের পর থেকে মুনসুর আলীর ছেলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রশাসন আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের একাংশ।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে আবুল হোসেনের পরাজয়ে মাঠের রাজনীতিতে আগের চেয়ে সক্রিয় হওয়ায় সুযোগ পান ননী গোপালের অনুসারীরা। অন্যদিকে আবুল হোসেনের অনুসারীরাও চাইছেন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে। আগামী স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই সক্রিয় দুই পক্ষ। এসব কারণে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিরোধ এখন তুঙ্গে।


সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়। সেখানে মুনসুর আলীর ছেলে ইমরান খান মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও লাঞ্চিত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে ইমরানসহ তার সহযোগিদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোহিত চন্দ্র রায় খুলনাটাইমসকে জানান, গত ১২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয় আলোচনা সভা হয়। সেখানে বলা হয়েছে মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধারা কোনো যুদ্ধাপরাধীর হাতে দেশের পতাকা উত্তোলন হোক, তা দেখতে চায় না। এমন কি মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হাত থেকে কোনো প্রকার সম্মাননা নিতে চায় না। তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক রাজাকারের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সেই তালিকায় মুনসুর খানের নাম ১৪ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা এসএম আফজাল হোসেন তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরলে চেয়ারম্যানের ছেলে ইমরান অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে প্রশাসনের সামনে। দুঃখ প্রকাশ করে মোহিত বলেন, মহান বিজয় দিবসের মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চিত করে রাজাকারের ছেলে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন খুলনাটাইমসকে বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অসম্মান ও লাঞ্চিত করে রাজাকার তালিকাভুক্ত চেয়ারম্যান মুনসুর আলীর ছেলে ইমরান ও তার সহযোগিরা। তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সেই সঙ্গে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমন নেক্কারজনক ঘটনায় গোটা দাকোপবাসি হতবাক। ইমরান বার বার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।


বিজয় দিবসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনসুর আলী খানের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা খান। তিনি খুলনাটাইমসকে বলেন, মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানস্থলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ বন্ধ করে দেয় ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল। এতেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেখানে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যানের নামে অপপ্রচার চালানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে জানায় আওয়ামী লীগের এই অংশের কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেতা।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনে উপজেলা প্রশাসন সব ধরণের চেষ্টা করেছে। আপাতত কোনো প্রকার ঝামেলা নেই বলে জানান তিনি।