ডেটলাইন খুলনা ৮ ফেব্রুয়ারি : গোপন প্রস্তুতি বিএনপির : পর্যবেক্ষণে আ’লীগ : মাঠে পুলিশ

0
465

মো: শাহ আলমঃ
খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত দু’দিন ধরে ধরপাকড় চলছে খুলনাজুড়ে। ইতোমধ্যে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এজন্য রায়কে সামনে রেখে আগাম কর্মসূচি ঘোষণা থেকে বিরত রয়েছে দলটি। সোমবার খুলনা মহানগর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি। তবে ওই দিন প্রস্তুত থাকতে নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনায় দলীয় কোনো কর্মসূচি রাখেনি আওয়ামী লীগ। বরং খুলনায় অনুষ্ঠিতব্য বিশেষ প্রতিনিধি সভা সফলে ওই দিন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। কারণ দিনটিতে দলের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে নাশকতা বিরোধী প্রতিপক্ষের যে কোন ধরনের হামলা মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ’র।

অপরদিকে নাশকতা প্রতিরোধে কেএমপি প্রস্তুতি নিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নেমেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১০টি প্রবেশদ্বারে তল্লাশী চৌকি বসানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বুধবার থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের সঙ্গে নগরীতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে বলে কেএমপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে। এমন ধারণা থেকে ওইদিন করণীয় নির্ধারণ করতে সোমবার খুলনা মহানগর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়। সেখানে অধিকাংশ নেতাই তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলার পক্ষে মত দেন। তবে কেউ কেউ ধংসাত্মক কাজে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের কথাও বলেছেন।

সভায় উপস্থিত বিএনপির দুই নেতা জানান, গত শনিবার থেকে নগর ও জেলাজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে নগর যুবদল নেতা খান রাজিব আহমেদ, ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আবদুস সালাম এবং ৩০ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন যুবদল নেতা কাজী মাহমুদ আলী, ২৮ নং ওয়ার্ড মহিলা দল নেত্রী লাভলী ইসলাম ও ঝুমুর। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও গ্রেফতারের খবর আসছে।

এ অবস্থায় আগাম কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে ধরপাকড় আরও বাড়তে পারে। এজন্য কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। স্বল্প সময়ের নোটিশে সবাই যাতে রাস্তায় নেমে আসতে পারে সেই প্রস্তুতি থাকবে তাদের।

মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার পরপরই আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে। কর্মসূচি কি হবে, সেটা ওই সময় নির্ধারণ করা হবে। তবে সবকিছুই করা হবে শান্তিপূর্ণভাবে।

এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হাদিস পার্কে জনসভা বাতিল করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই দিন দলীয় কার্যালয়ে বসেই সময় কাটাবে দলটির নেতাকর্মীরা।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমি মনে করি ৮ ফেব্রুয়ারি সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে। ওই দিন কিছুই হবে না। অযথা উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রায়কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা দলীয় কার্যালয়ে থাকবো। তবে কোনো বিবাদে জড়াবো না। তিনি আরও বলেন ‘আইন সবার জন্য সমান। বর্তমান সরকার মানুষের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

অপরদিকে রায়কে কেন্দ্র করে নগরী ও জেলায় ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। গত দুই দিনে নগর ও জেলার ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন কয়রা উপজেলা শ্রমিকদল নেতা আজিজুর রহমান, যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেন ও সাইদুর রহমান, পাইকগাছা থেকে কপিলমুনি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক শেখ আনারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্য শেখ হাবিবুর রহমান, চাঁদখালি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ সভাপতি ইউনস মোল্লা এবং রূপসা থেকে শ্রমিক দল নেতা ইউনুস আলীর ছেলে অপু।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মনিরা সুলতানা বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে শহরজুড়ে আমরা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের সঙ্গে র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে। নগরীর জেলখানা ঘাট, রূপসা ঘাট, পথের বাজার, গল্লামারী, রয়েল মোড়, শিববাড়ি মোড়, ডাকবাংলো মোড়সহ ১০টি পয়েন্টে মঙ্গলবার থেকেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে বিজিবিও মোতায়েন করা হবে।

জননিরাপত্তায় কেএমপি কমিশনারের নিষেধাজ্ঞা :
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৮৫ এর ৩০ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনকল্পে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা হতে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিট পর্যন্ত খুলনা মহানগরী এলাকায় সকল প্রকার ছড়ি বা লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
পাশাপাশি যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে কোনভাবেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না মর্মে ঘোষণা দেন। একই সাথে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে খুলনা মহানগরী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থেকেই কেএমপি কমিশনার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। #