ডুমুরিয়ায় ভাসমান বেড তৈরি পদ্ধতিতে ভূমিহীন চাষীদের বিষ মুক্ত সব্জি চাষ

0
200

চুকনগর প্রতিনিধি:
ডুমুরিয়ায় সরকারি বিভিন্ন খালবিলে পানির উপর ভাসমান বেড তৈরী করে বিভিন্ন প্রকার সব্জি উৎপাদন করে একদিকে যেমন সাংসারিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে অপরদিকে সব্জি বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে তারা। প্রথমত গ্রামে দুই একজন কৃষক এ পদ্ধতিতে সব্জি চাষ শুরু করলেও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ডুমুরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক ভূমিহীন চাষী ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই পদ্ধতিতে সব্জি উৎপাদনে কৃষকরা সাফল্য পেয়েছে। যার ফলে ভাসমান বেডে সব্জিচাষ ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব খাল বিলে সবজির এসব বেড গুলো প্রতিষ্ঠিত সেসব খালগুলি বছরের প্রায় সব সময় পানিতে ভরে থাকে। তাই স্বাভাবিক নিয়মে এসব জায়গায় ফসল উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় কৃষকরা বিকল্প পদ্ধতিতে সুফল বয়ে আনছে। উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রাম, মিকশিমিল, শোলগাতিয়া, সদর ইউনিয়নের গোলনা ও রংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন সরকারি পানিবদ্ধ খালবিলে ভাসমান সব্জি উৎপাদনে কৃষকরা ব্যপকভাবে সক্রিয় রয়েছে দেখা যায়। এসব বেডে কৃষকরা সাধারণত লাল শাক, পালং শাক, বিভিন্ন জাতের কপি, বেগুন, সীম, টমেটো, ঢেঁড়স সহ নানা ধরনের সব্জি চাষ করে থাকে। এসব বেড নির্মাণে কৃষকরা ব্যবহার করছেন বাঁশের চালি। এই বাঁশের চালির উপর বদ্ধ খাল বিলে থাকা কচুরিপানা বিছিয়ে দেয়। অবশ্য এই কচুরিপানার সাথে কিছুটা মাটিও মিশ্রণ করে দেওয়া হয়। এতে দ্রæুত বেডটি দারুন জৈব সারের ঘাটি হিসাবে রূপান্তরিত হয়। বেড গুলি সাধারণত লম্বায় ১৪ ফুট ও চওড়ায় ৭ ফুট মাপের হয়ে থাকে। সাধারণ জমির শাক সব্জির তুলনায় রোগ বালাইয়ের উপদ্রবও অনেক কম দেখা গেছে এসব বেডে। ফলে ভোক্তাগণের বিষমুক্ত তাজা শাক সব্জিতেই বেশী আগ্রহ দেখা যাচ্ছে আর এতে কৃষকরা হচ্ছেন যথেষ্ট লাভবান।ডুমুরিয়ার মধুগ্রাম বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়; খালের পানিতে ভাসছে সারি সরি সব্জির বেড। বেডগুলিতে নানা বয়সী নানা রংয়ের সব্জিতে ভরে গেছে।সেখানে কয়েকজন চাষী নৌকা নিয়ে বেডগুলির তদারকি করছেন। সে এক নয়ানাভিরাম দৃশ্য। এই বিলের সব্জি চাষী মধূ গ্রামের ভ‚মিহীন রমজান মোড়ল মোট ৩টি বেডে সব্জি চাষ করছেন। তিনি বলেন; অন্যের জমিতে বর্গা দিয়ে কিছু আয় করার চেষ্টা করি। কিন্তু এখানে সরকারি খালের উপর বেড নির্মাণ করে শতভাগই আমি নিজে তথা আমার পরিবার ভোগ করছে। বিষয়টা ভাবতে আমার খুবিই ভালো লাগে। সপ্তাহের ২টি হাটে আমি কম-বেশী আমার সব্জি বিক্রি করি। পূর্বাপেক্ষা সব্জির দাম বেশী হওয়ায় আমি যথেষ্ট লাভবান ও খুশী। যদিও বর্তমানে সব্জির দাম অনেকটা কমে গেছে কিন্তু আমি ১ মাস পূর্বেও ভাল দাম পেয়েছি। অবশ্য এজন্য আমি আমাদের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ দিব। কারণ তারাই আমাদেরকে এ বিষয়ে উজ্জীবীত করেছেন। আশা করি প্রতিবছর আমি এখানে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যাব। অপর ভূমিহীন কৃষক সুরমান গাজীর আছে ৪টি বেড রয়েছে। তিনি চাষ করেছেন লাল শাক, ঢেড়স, লাউ, কপি ইত্যাদি। গত ২ মাসে তিনি কয়েক হাজার টাকার সব্জি শাহপুর হাটে পাইকারী বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন আমি খুবই খুশী। আমার জমিতো ছিলনা, অন্যের দেখাদেখি ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় আমি এই চাষে উদ্যগী হই। আমার অনেক বন্ধু ও এলাকাবাসী বহু জন এই পদ্ধতিতে সব্জি চাষ দেখতে রাস্তায় ভিড় জমায়, এই বিষয়টা আমি উপভোগ করি। কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কৃষক মহসিন সরদার বলেন, কৃষির উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করে আমাদের কৃষকদের অনেক সফলতা এসেছে। বিশেষ করে সবুজ শাক-শব্জি উৎপাদনে চাষীরা ক্রমান্নয়ে উন্নতি করছে। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়ায় যারা ভাসমান বেডে সব্জি চাষ করছে, তাদের কারোরই চাষের জমি নেই। এদেরকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ভাসমান চাষাবাদ প্রকল্পের আওতায় যথাযথ প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে যাতে ডুমুরিয়ার ভূমিহীন কৃষকদের নতুন আলো দেখাচ্ছে। ভাসমান বেডে উৎপাদিত এই সব্জি সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত এবং উৎপাদন খরচও তুলনা মূলক ভাবে অনেক কম।