ডুমুরিয়ায় ইভটিজিং’র প্রতিবাদ করায় ভিক্ষুক মায়ের হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে ছাত্রলীগ

0
641

এস রফিক: ডুমুরিয়ায় মেয়েকে কু-প্রস্তাব দেয়ার প্রতিবাদ করায় মধ্যযুগীয় কায়দায় এক ভিক্ষুক মাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা। ভুক্তভোগী ভিক্ষুক মাতা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনার ৩৭ দিন অতিবাহিত হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে থানায় মামলা দিতে সাহস পাচ্ছেনা অসহায় পরিবার।

ঘটনাস্থল গিয়ে এলাকবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় উপজেলার মাগুরখালী এলাকায় স্বামী পরিত্যক্তা হতদরিদ্র ছোট খুকু ওরফে শিখা ঢালী (৪৭) গত ৯ বছর যাবত দুই কন্যা সন্তান ইতু ঢালী (১৭) ও পূজা ঢালী (৮) কে নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকে ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবিকা অর্জন করে আসছে। এমতাবস্থায় পাইকগাছা চিনেমলা এলাকার সমিরন মন্ডলের ছেলে মাগুরখালী মামার বাড়ি বসবাসরত ছাত্রলীগ নেতা লিংকন মন্ডল (২২) ওই ভিক্ষুকের বড় মেয়ে ইতু ঢালীকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। বিষয়টি ইতু তার মা শিখা ঢালীকে জানালে, শিখা লিংকন’র কাছে এর কারণ জানতে চায়। এতে লিংকন ক্ষুব্ধ হয়ে তার দলবল নিয়ে শিখাকে খুজতে থাকে।

এক পর্যায়ে ঘটনার দিন গত ১৯ জুন রাত ৯টার দিকে শিখা ভিক্ষা করে বাড়ী ফেরার পথে পাশ্ববর্তী সিদ্বার্থ মন্ডলের পুকুর পাড়ে পেয়ে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগ নেতা লিংকন, তার সহযোগী সুজিত গোলদারের ছেলে আশিষ গোলদার (২২), নিখিল মন্ডলের ছেলে মধূসুধন মন্ডল (২৪) ও পবিত্র মন্ডল (২৩)’র পিটুনিতে শিখার বাম পা ও বাম হাতের হাড় ভেঙ্গে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রসাদ কুমার মন্ডল ও মাগুরখালী পুলিশ ফাড়ির টু আইসি এ এস আই আলতাপ হোসেন ঝোলায় করে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

ঘটনা প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য প্রসাদ কুমার মন্ডল জানান খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনি ছাত্রলীগ নেতা লিংকনের নেতৃত্বে তার সহযোগিরা ভিক্ষুক শিখা ঢালীকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলে গেছে। দেখি সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে এবং তার সাথে থাকা ছোট মেয়ে পূজা ঢালী চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে। এরপর একটি বস্তা নিয়ে তার উপর শিখাকে তুলে চিকিৎসার জন্য দ্রæত হাসপাতালে প্রেরণ করি। এ সময় শিখার বাম পা ও হাত ভেঙ্গে ঝোলাঝুলি করছিলো।

ঘটনা প্রসঙ্গে মাগুরখালী পুলিশ ফাড়ির টু আইসি এ এস আই আলতাপ হোসেন জানান রাস্তার পাশ দিয়ে আসার সময় হঠ্যাৎ বিকট কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ভিক্ষুক শিখা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে এবং পাশে বসে তার মেয়েটি কাঁদছে। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে খবর দিয়ে শিখাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

ঘটনা প্রসঙ্গে শিখার বড় মেয়ে ইতু ঢালী জানান এই ঘটনায় মামলা করলে ভারতে যেতে হবে মর্মে প্রভাবশালী ওই প্রতিপক্ষরা হুমকি দিচ্ছে। তাই থানায় কোন অভিযোগ করতে সাহস পাইনি।

এই দিকে শুক্রবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও সার্জারি বিভাগের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় পড়ে থাকা শিখা ঢালী কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান “বাবারা প্রথমে ২০ দিন বেডে ছিলাম,এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়েছে,হাত-পায়ের ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ ঝরছে,টাকার অভাবে বাড়ী যেতে পাচ্ছিনা, ওষুধও খেতে পারছি না। ডাক্তার আমার কোন খোঁজ খবর রাখেনা। যে কারণে ১৫ দিন ধরে ছোট মেয়ে পূজাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বারান্দায় পড়ে আছি। আমার আর ভিক্ষা করে খাওয়া হবেনা, কিভাবে বাঁচবে আমার ইতু ও পূজা ? বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে অসহায় শিখা”।

শিখার মা ষাটার্ধো বৃদ্ধা আল্লাদি ঢালী বলেন আমার খুকুকে যারা অন্যায় ভাবে মারে হাত-পা গুড়ো করে দেছে তাদের বিচার ভগবান করবে। আমরা থানায় গেলে ওরা আমাদের ভারতে তাড়ায় দেবে। আমরা গরীব বলে এলাকার চেয়ারম্যান- মেম্বাররা আমাগে বিচার করবে না। ঘটনা প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া থানার ওসি হাবিল হোসেন জানান বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।