টানা বৃষ্টিতে পাইকগাছার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত, ৩ দিনেও পানি নামেনি অনেক এলাকায়

0
124

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাইকগাছায় একটানা ৩ দিনের ভারি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ী ঘের, রাস্তা-ঘাট, আমনের বীজ তলা, পানের বরজসহ ফসলী জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কাঁচা ঘর-বাড়ি। বিশেষ করে করোনাকালে বিধিনিষেধ চলাকালে একটানা বৃষ্টিতে ঘরবন্দি নি¤œ আয়ের শ্রমজীবি পরিবারগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। অনেক এলাকায় সরকারি জলাশয়সমূহে অবৈধভাবে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনো পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই রাত থেকে বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই) রাত পর্যন্ত টানা ৩ দিন-রাত অবিরাম ভারি বর্ষণে পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিস্তির্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। অধিকাংশ এলাকার পানি নিষ্কাশনের ড্রেন বন্ধ ও সংকুচিত হওয়ায় এসব এলাকার পানি খুব ধীরে নিষ্কাশিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ এলাকার মৎস্য ঘের তলিয়ে একাকার হয়ে যায়। পানিতে মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকার আমনের বীজতলা। অনেক এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গিয়ে জনদূর্ভোগ বাড়ে।
চাঁদখালীর কাটাবুনিয়াসহ বিস্তির্ণ এলাকার মাছের ঘের, রাস্তা-ঘাট পানির নীচে তলিয়ে যায়। ঐ এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম নৈর নদীতে বর্তমানে নেট-পাটা দিয়ে অবৈধভাবে মাছের চাষ হওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বেশ বেগ পেতে হয়। সেখানে বৃষ্টির পরও পানি বৃদ্ধির খবর আসে।
এছাড়া উপজেলার রাড়–লীর জেলে পল্লীর অবস্থা আরো ভয়াবহ। একদিকে জোয়ারের পানি অন্যদিকে অতিবৃষ্টির পানির চাপে পল্লীর কয়েকটি কাঁচা ঘর ভেঙ্গে কপোতাক্ষ নদী গর্ভে ভেসে যায়। বৃষ্টির পরও সেখানকার অনেক পরিবার এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে থাকা পরিবারগুলোর পক্ষে জানানো হয়, ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে এখনো তাদের এক প্রকার নির্ঘুম রাত কাটছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই দুপুরে) দুপুরে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী পৌরসভাসহ উপজেলার লস্কর, চাঁদখালী, রাড়ুলী ও গদাইপুরের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তারা রাড়ুলী জেলে পল্লীর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
রাড়–লী ইউপি চেয়ারম্যান আ: মজিদ গোলদার জানান, টানাবৃষ্টিতে তার ইউনিয়নের বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য ঘেরের পাশাপাশি নিচু এলাকার বীজতলার ক্ষতিসাধন হয়েছে। জেলে পল্লীর অনেক কাঁচা ঘর ধ্বসে পড়েছে।
চাঁদখালীর শফিক ইসলাম জানান, সেখানকার বৃষ্টিপুর, শাহপাড়া, কৃষ্ণনগর, কাটাখালি তথা ঐ অঞ্চলের পানি কাটাবুনিয়া বদ্ধ জলমহলের উপর দিয়ে নৈর নদীতে পড়ে চৌমহনীর ব্রীজ হয়ে মুল নদীতে পড়ে। কিন্তু সরকারি এসব খালের ইজারা নিয়ে ইজারাদারের পক্ষে সেখানে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি নিষ্কাশনে মারাতœকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, এখনো কাটাবুনিয়ার নারকেলতলার চক পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া মৎস্য ঘেরের ফাঁড়িগুলো এখনো পানিতে একাকার হয়ে রয়েছ। এক্ষত্রে নৈর নদী ও কাটাবুনিয়ার বদ্ধ জলমহল ইজারাদাররা লাভবান হচ্ছেন। কেননা গোটা এলাকার মাছগুলো তাদের খাল ও নদীতে ভেসে গেছে।
সর্বশেষ বৃষ্টি বন্ধ হলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় নতুন করে বৃষ্টির আশংকায় রীতিমত আতংক তৈরি হয়েছে নি¤œাঞ্চলগুলোতে। এমন পরিস্থিতিতে তারা উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।