জেলে হত্যার আসামী কেউ আটক হয়নি

0
672

আজিজুর রহমান :
খুলনার দাকোপ উপজেলার জয়নগরের জেলে নাছির সানাকে(৩৮) কুপিয়ে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে দাকোপ থানায় ১৩ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা রাজ্জাক সানা।
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে নাছিরকে হত্যা করা হয়। তাঁর প্রাণ চলে যাওয়ার সাথে কেটে গেল ১২ দিন। দায়ের করা হত্যা মামলায় দিন চলে গেলেও এ পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি বলে জানা যায়।
মামলার এজাহার সুত্রে, প্রতিদিনের মত নাছির বিকেল ৫টার দিকে গ্রামের বিলে মাছ ধরতে যায়। সেখানে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্রদ্বারা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। জীবিকা নির্বাহের জন্য সে গ্রামের মধ্যবিলের কয়েকটি খালে ও স্থানীয় নদীতে জাল ও পাটা পেতে মাছ শিকার করত। ঘটনার দিন মাছ শিকারে গিয়ে রাত গভীর হলেও বাড়ি ফেরেনি নাছির। সারারাত নাছির বাড়িতে না আসায়, তাঁর স্ত্রী ও কন্যা অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে বিলের মধ্যে যায়। সেখানে গিয়ে নাছিরের নৌকার পাশে নেটজাল পড়ে থাকতে দেখে জাল ধরে টানলে তাঁর গলাকাটা মৃতদেহ বেরিয়ে পড়ে। তখন স্ত্রী সখিনা বেগমের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসি জড় হয় । এসময় স্থানীয়রা সেখানে গিয়ে নাছিরের জবাইকৃত লাশ দেখতে পায়। এলাকাবাসির খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
গত বুধরার উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের জয়নগরে গিয়ে হত্যার স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে, নিহত নাছিরের সাত বছর বয়সের শিশু কন্যা কুলসুম খাতুন দুপুরে এ প্রতিবেদককে সাথে করে ঠাকুরুন বাড়ির খালের পাশে নিয়ে আঙ্গুল তুলে দেখায়, এই খালের পাশে কুটটানা স্থানে তার বাবার গলাকাটা মৃতদেহ পড়েছিল। এসময় আবেগ অপ্লুত হয়ে শিশুটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আর কিছু বলতে পারেনি।
নিহতের স্ত্রী সখিনা বেগম খুলনা টাইমসকে বলেন, আমার স্বামী যদি কাউকে ক্ষতি করে থাকে, তাহলে তাঁকে এভাবে না মেরে পারিবারের লোকজনকে জানালে ক্ষতিপূরণ দিতে পারত। তিনি বলেন, এলাকায় রোজগারের আর কোন উৎস ছিল না। তাই প্রতিদিন মাছ ধরে পাঁচ সদস্যের পরিবার পরিজন সাথে নিয়ে বসবাস করত। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর পর থেকে সংসারে রোজগারের লোক না থাকায় পারিবার চলছে অতিকষ্টে। তাঁকে যারা হত্যা করেছে তারা সকলে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন নিহতের স্বজনেরা। স্বজনেরা বলেন, হত্যাকারীরা সরকার দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় ১২ দিন কেটে গেলেও পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারল না।
নিহতের পরিবার অভিযোগ করে খুলনা টাইমসকে বলেন, গ্রামের কারোর সাথে তাঁর শত্রুতা ছিল না। কিন্তু সরকারি খাস খালের মাছ নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাখে নাছিরের বিরোধ ছিল নিত্যদিনের। আগের শত্রুতার জের ধরে এ হত্যার শিকার হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করেন।
থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, নিহতের পিতা রাজ্জাক সানা বাদী হয়ে বুধবার (১১ জুলাই) একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১০। মামলার আসামীরা হলেন, কামারখোলা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের মৃত সোনাই সানার ছেলে লতিফ সানা (৪৫), মৃত কালাচাঁদ সানার ছেলে জব্বার সানা(৫০), কাদের সানা(৪৫), মৃত ইনতাজ গাইনের ছেলে মজিদ গাইন(৫৫), মৃত ইসমাইল গাইনের ছেলে মালেক গাইন(৫৫), মোস্তফা গাইন(৬২), সাতঘরীয়া গ্রামের মৃত শাহবাজ গাইনের ছেলে কাদের গাইন(৪৫), জয়নগর গ্রামের মৃত মাহাতাব সানার ছেলে মোজাফ্ফার সানা(৫৫), মৃত জাবেদ আলী সানার ছেলে মুনসুর সানা(৪৫), মৃত সুরেন মন্ডলের ছেলে কৃতান্ত মন্ডল(৩২), গুনারী গ্রামের নিরঞ্জন জোয়াদ্দারের ছেলে তাপস জোয়াদ্দার(৩৫), খুলনার খানজাহান আলী রোডের বাসিন্দা বিধান রায়(৩৬), আহসান আহম্মেদ রোডের বাসিন্দা মৃত রাজ্জাক সরদারের ছেলে রকিব হান্নান সরদার(৪৫)।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে খুলনা টাইমসকে বলেন, মামলা দায়ের পর থেকে আসামীরা আমাকে ও নিহতের পিতাকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সব চেয়ে বেশি হুমকি দিচ্ছে খুলনায় থাকা আসামীরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মাসুদ আর রহমান বলেন, ময়না তদন্তের জন্য লাশটি ঘটনা স্থান থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। মামলার আসামীদের আটকের বিষয় জানতে চাইলে বলেন, আমরা একাধীকবার ওই এলাকায় গিয়েছি। কিন্তু আসামীরা পলাতক থাকায় ১২ দিনে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত নাছিরের পিতা মো. রাজ্জাক সানা খুলনা টাইমসকে বলেন, স্থানীয় ঠাকুরুনবাড়ি খাল ও কামারগোদা নদীতে মৎস্য শিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নাছিরের সাথে মামলার এক নম্বর আসামী লতিফ সানার বিরোধ ছিল। হত্যার তিনদিন আগে লতিফ তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ করেন নাছির।
কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল মুঠোফোনে খুলনা টাইমসকে বলেন, নিহত নাছির সানার পক্ষ থেকে হুমকি প্রদান প্রসঙ্গে একটি অভিযোগ আসে। অভিযোগ মতে প্রতিপক্ষ লতিফ সানাকে চার বার নোটিশ করার সত্বেও পরিষদে হাজির হয়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মামলাটি দায়ের করা হয়।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহাবুদ্দিন চৌধুরী মুঠোফোনে খুলনা টাইমসকে বলেন, দায়ের করা মামলায় যাদের নাম রয়েছে তাদের আটক করার জন্য অভিযান চলমান রয়েছে। আর হত্যার অস্ত্রটি উদ্ধারসহ তদন্ত চলছে।