জার্মানির মিশন ইম্পসিবল কমপ্লিট

0
289

স্পোর্টস ডেস্ক:
২০১৪ ফিরে এলো সোচিতে। আর্জেন্টিনা সেদিন অতিরিক্ত সময়ের গোলে সোনালি ট্রফিটা হেরে যে যন্ত্রনা পেয়েছিল তা কিছুটা হলেও টের পাচ্ছে সুইডেন। তারা হয়তো এ ম্যাচটি ভুলতে চাইবে কিন্তু আদৌ পারবে কী? সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে আপাতত মুলার, ওজিল, টনি ক্রুসরা বলতেই পারে মিশন ইম্পসিবল কমপ্লিট জোয়াকিম লো।

শিল্পীরাও বোধহয় তাদের তুলির আঁচড়ে এতো সুন্দর করে দৃশ্যপট আঁকতে পারঙ্গম হন না। যেমনটা আঁকলেন টনি ক্রুস। ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক গোটসে হলে আজকের ম্যাচের নায়ক এই ক্রুসই।

মাঠে নামার আগেই নানান সমীকরণের মধ্য দিয়ে পেন্ডুলামের মতো ঝুলছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিশ্বকাপ স্বপ্ন। জিতলেই টিকে রইবে বিশ্বকাপ স্বপ্ন, ড্র করলে সুতোয় ঝুলবে আর হারলে তো বিদায় বলে দিতে হবে রাশিয়াকে।

আবেগ কখনো জার্মানদের স্পর্শ করে না। আর জোয়কিম লো সে তো নয়ই। কিন্তু আজ সোচিতে তৈরি হয়েছিল এমনই এক দৃশ্য। যে সুইডেন বিগত ৪০ বছর ধরে তাদের হারাতে পারেনি আজ তারাই তাদের ঘুম কেড়ে নেয়ার পথে? অবশেষে তারা ঘুম কাড়তে পারেনি। উল্টো তাদের ঘুম কেড়ে নিলো জার্মানি।

ফুটবল বিশ্বে পাওয়ার হাউজ নামেই পরিচিতি জার্মানদের। খেলার মাঝেও তারই দেখা মিললো। ডু অর ডাই ম্যাচে শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে জার্মানি। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে টিমো বার্নারের হেডে বক্সের মাঝে বেশ জায়গা নিয়ে পায়ে বল পান হুলিয়ান ড্র্যাক্সলার। জোরে শটও নেন তিনি লক্ষ্যে। কিন্তু আন্দ্রেস গ্রাঙ্কভিস্ত পিঠ দিয়ে ঠেকিয়ে তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন।

ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে সুইডেনের পেনাল্টির জোরালো আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। প্রতি আক্রমণ থেকে বল নিয়ে নিয়ে দ্রুত ফাঁকা ডি-বক্সে এগিয়ে গিয়েছিলেন সুইডিশ ফরোয়ার্ড মার্কাস বার্গ। পেছন থেকে জেরোম বোয়াটেংয়ের ট্যাকলে পড়ে যান তিনি। রেফারি স্পট কিকের নির্দেশ দেননি। ভিএআর প্রযুক্তিরও সহায়তা নেননি।

জার্মানদের আধিপত্য দেখানোর ম্যাচে সবাইকে চমকে দিয়ে ৩২ মিনিটে তোইভোনেনের গোলে এগিয়ে যায় সুইডেন। মাঝমাঠে টনি ক্রুসের ভুল পাসে ক্লাসেনের ডান পাশ থেকে বাড়ানো ক্রসে ডি বক্সের ভেতর তোইভোনেন নয়্যারের মাথার উপর দিয়ে ট্যাপ ইনে দুর্দান্ত শটে সুইডেনের হয়ে অবিস্মরণীয় গোলটি করেন।

৩৯ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল জার্মানি। গুন্দোগানের দূরপাল্লার শট রুখে দেন সুইডিশ গোলরক্ষক, রিবাউন্ডে মুলারের শট গোলবারের ইঞ্চি দূরত্ব বাইরে দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধের একদম অন্তিম মুহূর্তে লারসনের হেড ডান পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন নয়্যার। এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় জার্মানি।

বিরতির আগে নাকে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ডিফেন্ডার আন্টোনিও রুডিগারের জায়গায় নামা মিডফিল্ডার ইলকাই গিনদোয়ানের শট ৪১তম মিনিটে ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ফিরিয়ে দেন সুইডেনের গোলরক্ষক রবিন ওলসেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচে ফিরে জোয়াকিম লোর শিষ্যরা। ৪৮ মিনিটে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে মাঠে নামা মারিও গোমের বাড়ানো বলে বা পায়ের আলতো ছোঁয়ায় বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে প্রথম গোলটি করেন মার্ক রয়েস। এই গোলের পর আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৫০ মিনিটে টোনি ক্রসের ফ্রি কিক থেকে লক্ষ্যে হেড করেছিলেন থমাস মুলার। কিন্তু গোলপোস্টের পাশ দিয়ে বল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৫৬ মিনিটে আরো একবার জার্মানির বাধা হয়ে দাঁড়ান অলসেন। হেক্টরের শট রুখে দেন এই সুইডিশ গোলরক্ষক। ক্রুসের ক্রস ৬৬ মিনিটে প্রতিহত করে তাদের আরেকটি সুযোগ নষ্ট করেন লিন্ডেলফ। খেলা যত গড়াচ্ছে ততই জার্মানির বিশ্বকাপ স্বপ্ন ফিকে হবার পথে। ৭২ মিনিটে বার্নারের ক্রস সুইডিশ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে জালের দিকে ছুটেছিল, আবারও ওলসেন দারুণ সেভে আটকে দেন জার্মানিকে।

৭৬ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানর সুযোগ পেয়েছিল সুইডেন। কিন্তু ডুরমাজের কর্নার কিক থেকে অগাস্টিনসনের পা থেকে ফর্সবার্গের কাছে গেলে তার শটকে রুখে দেন নুয়্যার। ৮১ মিনিটে বার্নারের সরাসরি শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৮২ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় জার্মানরা। বার্গকে পেছন থেকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন বোয়াটেং।

৮৮ মিনিটে মারিও গোমেজের হেডও প্রতিহত হয় অলসেনের কাছে। অতিরিক্ত সময়ের দুই মিনিটের মাথায় ব্রান্ডটের দূরপাল্লার বা পায়ের শট গোলবারে লেগে ফিরে আসলেও আশাহত হয় জার্মানরা।

৯৫ মিনিটে ডি বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রি কিক পায় জার্মানি। সেই ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত গোল করে জার্মানিকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা টনি ক্রুস।

এমন দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে, সুইডেন এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল। আজ হারলেও তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৭ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে জার্মানি। আর মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে সুইডেন। এদিন জার্মানি যদি দক্ষিণ কোরিয়াকে হারায় এবং মেক্সিকোর বিপক্ষে সুইডেন জয় পায় তাহলে জার্মানি, মেক্সিকো ও সুইডেন তিন দলেরই পয়েন্ট হবে ছয় করে। তখন যে দুই দল গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে।

আবার সুইডেন যদি মেক্সিকোকে হারায় এবং জার্মানি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে যায় তাহলে জার্মানি বাদ পড়বে। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে মেক্সিকো ও সুইডেন। দক্ষিণ কোরিয়া দুই ম্যাচে হারলেও তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া যদি জার্মানিকে হারাতে পারে এবং মেক্সিকোর কাছে সুইডেন হেরে যায় তখন জার্মানি, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পয়েন্ট হবে তিন করে। তখন এই তিন দলের মধ্যে যারা পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকবে তারাই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে।