জনতার ঢল আর ভক্তিতে রথযাত্রা

0
844

আজিজুর রহমান, খুলনা টাইমস :
‘রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম’। লাইনগুলো যেন পুরোপুরি বাস্তব হয়ে উঠলো এবারের রথযাত্রা উৎসবে।
‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’ রথের ওপর খর্বাকৃতি বামন শ্রী শ্রী জগন্নাথকে দর্শন করলে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না। এ বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে ভোর হতেই ভক্তরা প্রাণের টানে ছুটে আসেন প্রেমোরথের প্রাণের ঠাকুরকে নিয়ে স্নানযাত্রার উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ রথের রশি ধরে টানতে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খুলনার দাকোপ উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সব ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ ও শিশুরা অংশ নিয়ে ঢাক ও বাঁশির তালে হৈচৈ করে মাতিয়েছেন উপজেলা সদরের রাস্তায় রাস্তায়।
শনিবার (১৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় চালনা বৌমার গাছতলা শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির অঙ্গন থেকে চালনা বাজার শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গনে রথযাত্রা শুরু হয়। রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি সনত কুমার মন্ডল খুলনা টাইমসকে বলেন, মন্দিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অংশগ্রহণে রথযাত্রাটি চালনা কেসি স্কুল, বৌমার গাছতলা, চালনা বাজার, ডাকবাংলো মোড়, প্রেসক্লাব, আঁছাভূয়া বাজার হয়ে পৌরসভা রাধা গোবিন্দ মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
ঐতিহ্যবাহী এ রথযাত্রায় সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য ধর্মের উৎসুক জনতাও অংশ নেন। রথযাত্রা শুরু হওয়ার পর কলা চিনি ছিটিয়ে আর বাদ্যের তালে নেচে গেয়ে উৎসবকে জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষরা।
চালনা বৌমার গাছতলা ও চালনা বাজার শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরের যৌথ আয়োজনে রথযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা-১ আসনের সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় ও শুভদ্রা সরকার। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের ডা. সন্তোষ কুমার মজুমদার, ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায়, পৌরমেয়র সনত কুমার বিশ্বাস, পৌর কাউন্সিলর অসিত সাহা, মাখন বিশ্বাস, দেবাশীষ ঢালী, প্রেসক্লাবের সভাপতি শচীন্দ্রনাথ মন্ডল, গৌতম সাহা, চয়ন সাহাসহ আরও অনেকে।
সকাল ১০টায় রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি খুলনা টাইমসকে বলেন, আমাদের এবারের রথযাত্রায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সম্প্রীতি বৃদ্ধি আর হিংসা দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রথযাত্রাটি আঁছাভূয়া বাজার অতিক্রম করার সময় জগন্নাথ দেবের ভক্তদেরকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে ভক্তি জানাতে দেখা যায়।
রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, রথযাত্রায় অংশ নিয়ে ভক্তি জানিয়ে তারা নিজেদের মুক্তি প্রার্থনা করেন। ৯ দিন পর উল্টো রথযাত্রার মাধ্যমে শুরুর স্থানে গিয়ে শেষ হবে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।
সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা জানান, আজকের দিনে জগন্নাথ দেব ভক্তদের দর্শন দিতে নিজের মন্দির থেকে বেরিয়ে তাঁর মাসির বাড়িতে যান। আগামী রোববার (২২ জুলাই) উল্টো রথযাত্রার মাধ্যমে জগন্নাথ দেব নিজ ভিটায় ফিরবেন।
থানা পুলিশের উপপরিদর্শক পলাশ কুমার দাশ খুলনা টাইমসকে বলেন, রথযাত্রা নির্বিঘœ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এসময় কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।