জনগণই তাদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না: প্রধানমন্ত্রী

0
444

টাইমস ডেস্ক : বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা কোন মুখে মানুষের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে, ভোট চাইবে? বাংলাদেশের মানুষ- দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালনকারী ও মদদদাতাদের আর কখনোই ভোট দেবে না। তারা কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জনগণই তাদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। তাদের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না, খেলতে দেওয়া হবে না। স্বাধীনতার সুফলকে দেশের মানুষের ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে। এটাই এবারের বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আগামী নির্বাচনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। তারা লুটেরা, দুর্নীতি-লুটপাট করেছে, দেশকে ধ্বংস করেছে।যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করেছে। তাদের মানুষ সমর্থন করতে পারে? পারে না। আর তাদের কারা ভোট দেবে? কেউই দেবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের নিয়ে দল গঠন করেছেন। তাদের সন্তানরা দেশের সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। যারা স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বিশ্বাস করেন, তারা কী করে মেনে নিতে পারেন- ফাঁসির হুকুম পাওয়া যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী হবেন? মেনে নিতে পারেন না।

এ প্রসঙ্গে কারো নাম উল্লেখ না করে বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজেরও কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, তাদের ছেলেদের নিজেদের দলের সদস্য বানায়, কিছু মানুষ সেই দলটিকে কীভাবে সমর্থন করে? সেই দলের প্রতি অনুগত হয়? তাদের কী জ্ঞান বুদ্ধি, বোধশক্তি ও বিবেক বলে কিছু নেই?

বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বাঙালি জাতির গৌরবজ্জ্বল বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতাসীন স্বাধীনতাবিরোধী ও সামরিক শাসকদের দুঃশাসনও তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ-সবাই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের তোষামোদি-খোষামোদি করেছেন। আর খালেদা জিয়া এসে আরও একধাপ ওপরে নিয়ে গেলেন। যুদ্ধাপরাধী, খুনিদের হাতে তুলে দিলেন লাখো শহীদের রক্তে রাঙানো পতাকা। তারা হয়ে গেল মন্ত্রী। যাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম হয়েছে, যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে- তাদেরই মন্ত্রী করা হলো।

গত নির্বাচন প্রতিহত ও সরকার উৎখাতের আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন খালেদা জিয়া। সেই সঙ্গে আগুন দিয়ে বাস-ট্রাক পোড়ানো, মসজিদে আগুন দেওয়া, কোরআন শরীফ পোড়ানো, গাছপালা কেটে ফেলা, একটা দেশকে ধ্বংস করার জন্য কী না করেছে তারা। আমরা এদেশকে গড়ে তুলি, আর তারা ধ্বংস করে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদর- যারা গণহত্যা চালিয়েছে- তাদেরই অনুসরণ করে তারাও জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে।

তিনি বলেন, এই আগুন লাগিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা। হুকুম দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আর পরামর্শ দিয়েছেন তারই কুলাঙ্গার ছেলে। যারা দুর্নীতি-লুটপাট আর দেশের মানুষের অর্থ লুটে বিদেশে পাচার করেছেন। এখন আবার দেখি, বিদেশে শপিং মল বেরুচ্ছে, ফ্ল্যাট বেরুচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকাও বেরুচ্ছে। তারাই আবার স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাওয়ার, রাজনীতি করার।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসেছে। আজ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ করে, দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের যে অন্ত—রিকতা ও দরদ থাকে, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের সেটি থাকে না। তারা কেবল ধ্বংস করে। তাদের লক্ষ্য থাকে ভোগবিলাস আর দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করা। তাদের পক্ষে কেউ থাকবে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যারা এদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যারা চায়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চায়, যারা চায় দেশের মানুষ লেখাপড়া শিখবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হবে- তাদের প্রতি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখনই দেশের উন্নতি হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে, স্বাধীনতা দিয়েছে। আর যারা দেশ স্বাধীন করেছে, সেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ এখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নূর প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।