চিতলমারীর পাঁচ শতাধিক চিংড়ি চাষী সর্বশান্ত দুই কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন

0
448

চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের চিতলমারীতে গত এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া জনিত কারণে অক্সিজেন ফেল করে প্রায় ৫ শতাধিক ঘেরের চিংড়ি মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে ২০ মেট্রিক টন মাছ মরে দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফলে দেনার দায়ে জর্জরিত কমপক্ষে ৫ শতাধিক চিংড়ি চাষি সর্বশান্ত হয়েছেন। শনিবার সকালে উপজেলা মৎস্য অফিসার এসব তথ্য জানান। অপরদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ ওই সব চিংড়ি চাষিরা জানিয়েছেন এবার তাদের শারদীয় দূর্গা পূজার আনন্দ ম্লান হতে চলেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া জনিত কারণে অক্সিজেন ফেল করে উপজেলার খড়িয়া, আরুলিয়া, দত্তডাঙ্গা, ঝালডাঙ্গা, লড়ারকুল, বাবুয়ানা, উমাজুড়ি, কালিগঞ্জ, খাসেরহাট, বারাশিয়া, কালশিরা, কুরমনি, দূর্গাপুর, রায়গ্রাম, করাতেরদিয়া, খিলিগাতি, শ্রীরামপুর, ডুমুরিয়া, পারডুমুরিয়াসহ ২৫ গ্রামের কয়েক শ’ চিংড়ি চাষির ঘেরের মাছ মরে ভেসে ওঠে। ফলে দেনার দায়ে জর্জরিত এসব চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরপর থেকে মাঠে নামেন বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস ও চিতলমারী উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারিরা।
উপজেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা রয়েছে ১৬ হাজার ৭১০ টি। যার মোট আয়তন ১৬ হাজার ৮৩৩ একর। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৫৮টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৯৯২ টি ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। এখানে চাষীরা বছরে ৫৮১ মেট্রিক টন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ উৎপাদন করে থাকেন। এখানে ৭ হাজার ৫০০ জন মৎস চাষী ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎসজীবী রয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুরের ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি চাষি শিশির বৈদ্য, গৌতম মালাকার, প্রভাষ বালা, ঝালডাঙ্গার সুশান্ত হালদার, অখিল বিশ্বাস, ডুমুরিয়ার বিকাশ বাড়ৈ, অমল বাড়ৈ, গোবিন্দ বিশ্বাস, অশোক মন্ডল, সুজিত মন্ডল, কুরমনির পরিমল বিশ্বাস, গৌর বাইন, খিলিগাতি গ্রামের বাবুল হাওলাদার, আশিষ মন্ডল, স্বপন মন্ডল ও প্রফুল্ল মাঝি প্রায় অভিন্ন সুরে জানান, মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যানের চেয়ে চিংড়ি চাষিদের দ্বিগুন ক্ষতি হয়েছে। এই মাছ মরাতে তারাসহ এলাকার কয়েক শ’ চিংড়ি চাষি সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। যে সব চাষীরা ধার- দেনা হয়ে চিংড়ি চাষ করেছে তারা এখন আতংকে দিন গুনছে।
এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান জানান, অবহাওয়া জনিত কারণে চিংড়ি ঘেরের অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়ায় মাছ ভেসে ওঠে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক ঘেরের ২০ মেট্রিক টন চিংড়ি মরে দুই কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, চিংড়ি চাষিদের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। চাষিদের পুরানো পদ্ধতি থেকে আধুনিকায়ন করার জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।