চিকিৎসকের হাতে রোগী লাঞ্ছিতের ঘটনা বেড়েই চলেছে

0
717

কামরুল হোসেন মনি:
খুলনায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের হাতে রোগী লাঞ্ছিত হওয়ার মত ঘটনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অনিয়মের প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তাদের ওপর হামলা চালাতে দ্বিধাবোধ করছে না কতিপয় চিকিৎসক। রোগীর বসার চেয়ার থাকে ওষুধ প্রতিনিধিদের দখলে। এদের হাতেও রোগীরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। ওষুধ প্রতিনিধিদের সাথে চিকিৎসকদের গভীর সখ্যতা থাকায় চিকিৎসকরা প্রতিবাদ তো দূরে থাক এদের পক্ষ নেন।
গতকাল রোববার (২৯ জুলাই) খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করাতে এসে ছেলে সাইফুল ইসলামকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ওই হাসপাতালের বহিঃবিভাগের মেডিসিন চিকিৎসক ডাঃ সুমন রায়ের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসকরে বিরুদ্ধে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগেও এ হাসপাতালে চিকিৎসকদের হাতে রোগী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বিষয়টি ভুক্তভোগী আমাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থার উদ্যোগ নেবো।
এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের বহিঃবিভাগের (মেডিসিন) মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুমন রায় এ প্রতিবেদককে বলেন, ২১২নং রুমে আমি রোগী দেখছিলাম। নিজে রাজনীতির সাথে জড়িত। হাসপাতালে স্টাফ ও চিকিৎসকদের রোগী আগে দেখার অনেক অনুরোধ থাকে। যার কারণে সিরিয়াল ভেঙে আমাদের রোগী দেখতে হয়। রোগীর ছেলে এগুলো ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিল। তখন ওই রোগীর ছেলেকে আমার রুমে ঢোকানো হয়। ওই সময় রোগীর ছেলে সাইফুল ইসলামের সাথে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে তাকে কিল ঘুষি মারে আমাদের স্টাফরা। তার রুমে সব সময় দুইজন লোক অবস্থান করার বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় একজন হাসপাতালে স্টাফ ও আউটসোর্সিং লোক থাকে।
এ ব্যাপারে স্বাচিপ ও বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ সার্বিক বিষয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, খুমেক হাসপাতালে রোগীর চাপ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। একজন ডাক্তারের পক্ষে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে দেড়শ রোগীকে দেখতে গিয়ে মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। সেক্ষেত্রে রোগীরা কি সেবা পাচ্ছেন এমন প্রশ্ন তোলেন।
সুমন রায়ের ঘটনার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার পর্যায়ে গেছে বলে তিনি জানতে পারেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। শূন্যস্থানে জনবল নিয়োগ হলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষখত ঘটনা অনেকাংশ কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
বেলা তিনটার পর তত্ত্বাবধায়কের কাছে অভিযোগপত্র দাখির করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, নগরীর বয়রা মেইন রোড মদিনা মসজিদ সংলগ্ন গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে সাইফুল ইসলামের মা কোহিনুর বেগম (৫৭)কে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মায়ের পায়ে ব্যথাজনিত কারণে তিনি বহিঃবিভাগে মেডিসিন ডাক্তারকে দেখানোর জন্য টিকিট কাটেন। টিকিট নিয়ে ২১২নং রুমে তার অসুস্থ মাকে নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন। এ সময় সিরিয়াল ছাড়া পেছনের দরজা থেকে অনেক লোকজন ডাক্তারের রুমে ঢুকছেন। সিরিয়াল ভঙ্গ করার বিষয়টি অবহিত করায় ডাক্তারের রুমে থাকা দুইজন লোক তাকে টেনে হিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে যায়। এ সময় তাকে কিল ঘুষি মারে ও ওয়ালের সাথে চেপে ধরে। এ সময় তিনি বুকে ও মাথায় আঘাত পান।
মারধরের শিকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ডাক্তারের চেম্বার থেকে দুইজন লোক বেরিয়ে এসে তাকে টেনে হিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে যায়। ওইখানে ওই ডাক্তার আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় ওই দুইজন লোক আমাকে কিল ঘুষি মারে ও ওয়ালের সাথে চেপে ধরে। এ সময় বাইরে থাকা রোগীরা কাঁচের জানালা থেকে মারতে দেখে দরজা ভেঙে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক হাসপাতালের সুপারকে অবহিত করি। এর আগেও ওই হাসপাতালে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জনৈক জয়নাল ফারাজির সাথে চিকিৎসকদের তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায় তিনিও লাঞ্ছিত হন। এর পরে মে মাসে এক রোগীর আত্মীয় স্বজনকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা মারধর করেন। পরে বিষয়টি মীমাংসা করে নেন। এছাড়া ২০১৭ সালে ফুলতলা উপজেলার আলকা গ্রামের বাসিন্দা রোগী এসএম বুলবুল আহমেদ শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসলে হাসপাতালে থাকা ওষুধ প্রতিনিধিদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ সময় ওই রোগীকে কয়েকজন ওষুধ প্রতিনিধি লাঞ্ছিতসহ জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এস এম বুলবুল হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ওই হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ডিডি) ডাঃ এস এম মোর্শেদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এভাবে একের পর এক অসহায় রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো তারা চিকিৎসক ও ওষুধ প্রতিনিধিদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন।