চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরা এইডস ঝুকির মধ্যে!

0
523

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের বাসিন্দা গর্ভবতী আমেনা বেগম (ছদ্মনাম)। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করা হয়। পরবর্তীতে তার রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইডস পজিটিভ পাওয়া যায়। অপারেশনের আগে তার রক্ত পরীক্ষা না করানোর ফলে চিকিৎসকরা বিষয়টি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি জানার পর চিকিৎসকসহ অপারেশনে যারা নিয়োজিত ছিলেন সবাই আঁতকে ওঠেন।
দাকোপের বাসিন্দা গৃহবধূ রুমানা ২২ বছর (ছদ্মনাম)। গর্ভবতী হওয়ার পর তাকে খুমেক হাসপাতাল থেকে এইচআইভি টেস্ট করালে পজিটিভ পাওয়া যায়। ২৮ মে তার ডেলিভারির সম্ভাব্য সময়। গৃহবধূ এইডস সনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান এবং আত্মগোপনে রয়েছেন। খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা ছাড়া কেউ জানেন না ওই গৃহবধূ এইডস পজিটিভ।
সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, নিষিদ্ধ পল¬ী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা ও কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে দিনকে দিন এইডস/এইচআইভি পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এ কারণে কোনো ব্যক্তিকে অপারেশনের আগে তার রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের।
সোমবার সকালে খুমেক হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ইউনিসেফ এর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় স্ট্রেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় স্টেকহোল্ডারদের সাথে তৃতীয় ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভায় ওই সব তথ্য তুলে ধরা হয়। খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ এর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ওই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় ঢ়ৎবাবহঃরড়হ ড়ভ সড়ঃযবৎ ঃড় পযরষফ ড়ভ ঐওঠ (চগঞঈ) সেবাটি দেওয়া হচ্ছে। এই সেবার আওতায় এই পর্যন্ত খুমেক হাসপাতাল থেকে ১০ হাজার ১২১ জন গর্ভবতী মায়ের এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয়। যার মধ্যে ৪ জন এইচআইভি আক্রান্ত মাকে ও একজন শিশু পাওয়া গেছে। যার মধ্যে এপ্রিল মাসে একজন গর্ভবতী মা সনাক্ত হন। এছাড়া এন্ট্রি রেক্টোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) কর্নারে ১ হাজার ৩৩৯ জনকে এইচআইভি পরীক্ষা করে ৬৪ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে খুমেক হাসপাতাল থেকে ২২৬ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে এন্ট্রি রেক্টোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। আক্রান্তের মধ্যে রয়েছে খুলনায় ৭৩ জন, যশোরে ৫৫ জন, সাতক্ষীরায় ৩৩ জন, নড়াইলে ২৫ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, বাগেরহাটে ১৩ জন, মগুরায় ৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১ জন, গোপালগঞ্জে ৪ জন, ফরিদপুরে ৩ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, বরগুনায় (হিজড়া) ১ জন ও রাজশাহী (হিজড়া) ১ জন রয়েছে।
সভায় প্রকল্পে ম্যানেজার মোল্যা নুরুল আসলাম বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তার মতে, যদি এইচআইভি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো গর্ভবতী মায়ের রক্তে এইচআইভি সনাক্ত হয় তবে তাকে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির এইচআইভি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এস এম কামাল কাউন্সিলিং এর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মত প্রকাশ করেন। যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অসহযোগিতা না পান।
সভায় খুমেক হাসপাতালের সিনিয়র আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বাঁচতে গেলে : জানতে হবে এই ¯ে¬াগানের মূল্য উদ্দেশ হলো আগে নিজেই সচেতন হবে। কারণ অপারেশন করার আগে রোগীর শরীরে এইচআইভি পজিটিভ আছে কি না এটা যদি জানা যায়, তাহলে অপারেশনটি সতকর্তামূলকভাবে করলে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না।
সভায় গরিব নেওয়াজ ক্লিনিকের নির্বাহী পরিচালক এম এ হান্নান বলেন, সকল বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে যেন সকল অপারেশন এর আগে অবশ্যই এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধের পাশাপাশি খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে সকল সার্জারি বিভাগকে চিঠি দেওয়ার ওপর মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক অপারেশনের পূর্বে রোগীকে বাধ্যতামূলক এইচআইভি পরীক্ষার জন্য সরকারের মাধ্যমে আগে এগিয়ে আসতে হবে। এটার জন্য আইন পাস করাও প্রয়োজন বলে তিনি উলে¬খ করেন। তাহলে দেশের এইডস রোগীদের সংখ্যা আরও সহজে সনাক্ত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডাঃ স্বপন কুমার হালদার, প্রসূতি ও গাইনী বিভাগের ডাঃ নাসরিন আক্তার স্বপ্না, ডাঃ ডলি হালদার, ডাঃ বিশ্বজিৎ ম-ল, ডাঃ দীপ কুমার দাস, ডাঃ বিপ¬ব দাস, ডাঃ তাসবিকুর রহমান খান কাফী, ডাঃ ছাবিকুন নাহার, ডাঃ নিয়াজ নওসেদ, ডাঃ মনোয়ারুল ইসলাম, কেএমএসএস, জেজেএস, পিকেএস ও লাইট হাউজের ব্যবস্থাপকসহ হাসপাতালের নার্স ও ল্যাব টেকনিশিয়ানরা উপস্থিত ছিলেন।