চিংড়ি শিল্পে নানা সংকটের হাতছানি!

0
320

মৌসুমের শুরুতে খুলনার মোকামে নতুন চিংড়ি আসতে শুরু করলেও নগদ টাকায় কিনছেনা কোম্পানিগুলো

শেখ নাদীর শাহ্ ::

চলতি উৎপাদন মৌসুমে নতুন চিংড়ি বাজারে আসতে শুরু করলেও হিমায়িত কোম্পানীগুলো নগদ টাকায় চিংড়ি ক্রয় করছেনা, আন্তর্জাতিক বাজারেও কমে গেছে চিংড়ির দাম। তবে স্থানীয় বাজারে অপেক্ষাকৃত বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি। করেনা ও দাবদাহ মহামারীর মধ্যে মৌসুমের শুরুতে চিংড়ির এমন পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট ডিপো মালিকদের মধ্যে নানা আশংকার জন্ম দিচ্ছে।
গেল বছরের ২০ মে’ সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্ফান। এতে খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির শত শত চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর উপর চলতি করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উৎপাদিত চিংড়ির আন্তর্জাতিক বড় মোকাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে চিংড়ি রফতানি বন্ধ রয়েছে। চিংড়ি খাতে গতবারের লোকসান কাটিয়ে উঠতে চাষীরা অব্যাহত প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ নানা সংকটের মধ্যেও নতুন উদ্যমে শুরু করে সাদা সোনার আবাদ। এরই মধ্যে এপ্রিল থেকে নতুন চিংড়ি আসতে শুরু করেছে খুলনার ডিপোগুলোতে।
ব্যবসায়ীক একাধিক সুত্র বলেছেন, আট পিছে এক পাউন্ড সাইজের বাগদা ৮শ’ টাকা, ১৮ পিছে এক পাউন্ড ৬শ’ এবং ২৪ পিছে এক পাউন্ড সাইজ ৫শ’ টাকা দরে বিকিকিনি হচ্ছে। গত মৌসুমে স্থানীয় বাজার দর ছিল যথাক্রমে ৭শ’, ৫শ’ ৫০ ও ৪শ’৫০ টাকা। সেক্ষেত্রে গত মৌসুমের চেয়ে এবার প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে।
খুলনার পাইকগাছার রামনগর এলাকার চিংড়ি চাষী মো: হুমায়ুন কবির বলেন, মৌসুমের শুরুতে পোনার সংকট ছিল। তাই অপেক্ষাকৃত অধিক মূল্যে প্রাকৃতিক উৎস্য নদীতে উৎপাদিত পোনা ঘেরে ছাড়তে হয়। এর উপর মৌসুমের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে চিংড়ির মড়ক। অন্যদিকে ধান আবাদে কৃষি জমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘেরের হারি বেড়েছে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট চিংড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন মাছ বাজারে আসতে শুরু করলেও ডিপোগুলোতে মাছ বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছেনা।
তবে খুলনার নতুন বাজার কেন্দ্রীক চিংড়ি ডিপো মালিকদের পক্ষে বলা হচ্ছে, মৌসুম শুরু হলেও নানা সংকটে ঘেরাঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত চিংড়ি মাছ আসছেনা। দাবদাহ কেটে গেলে অর্থাৎ বৃষ্টি শুরু হলে পরিবেশ স্বাভাবিক ও মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন তারা।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, খুলনাঞ্চল থেকে গত মৌসুমের শেষ দু’মাসের মধ্যে ডিসেম্বরে তিন লাখ ৫৭ হাজার ১ শ’ ৬৭ ডলার এবং ৬ লাখ ৬৫ হাজার ইউরো এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১০ লাখ ৬৬ হাজার মূল্যের হিমায়িত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়।
রপ্তানি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, পতুর্গাল, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, জামার্নি, ইটালি, ডেনমার্ক, রোমানিয়া, জাপান প্রভৃতি।
জানাগেছে, আম্ফান পরবর্তী করোনা, দাবদাহ ও মাছের মড়কের পরও নতুন মাছ আসতে শুরু করেছে স্থানীয় মোকামে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে রপ্তানি বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে উন্মুক্ত দেশগুলোতে চিংড়ির দাম অপেক্ষাকৃত কম।
সব মিলিয়ে নানা সংকটে ক্রমান্বয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় চিংড়ি শিল্প। এমন পরিস্থিতিতে চিংড়ি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।