চিংড়িতে ধ্বস : দিঘলিয়ার প্রান্তিক খামারীদের হতাশা

0
1067

আহাদ আলী (নিজস্ব প্রতিবেদক) : দাম কমে যাওয়ায় খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। মাছ বিক্রি করে খরচের অর্ধেকও তুলতে পারছেন না তারা। গত বছর কেজি প্রতি চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। আর চলতি বছর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৫শ’ টাকায়। তাও অনেক সময় ক্রেতাদের কাছে বাকীতে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দাম না পেয়ে চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সরকারি হিসেবে দিঘলিয়া উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১০ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে।

ঘের মালিক আনিচুর রহমান হতাশার সঙ্গে জানান, ‘পানির দামে মাছ বিক্রি করায় সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছি। ঘের বেচে দিলেও এ ক্ষতি পোষাতে পারবো না। যে টাকা খরচ করে মাছ চাষ করেছি তার অর্ধেক দামও পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে গেলে এরপর কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।’

মাছ ব্যবসায়ী খাবির শেখ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমরা চিংড়ি ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবো। ব্যাংক থেকে ঋণ এবং কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে পারবো না। কারণ বিদেশে মাছ পাঠানো যাচ্ছে না। আবার দেশের অন্যকোন জেলায়ও বিক্রি করতে পারছি না। ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমাদের এ ব্যবসা করতে হয়। মাছ বিক্রি করতে না পারলে দেউলিয়া হয়ে যাবো।’

সূত্র জানান, ২০১৪-’১৫ সালে প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ছিল ১২শ’ টাকা থেকে ১৩শ’ টাকা। বর্তমানে সেই চিংড়ির দাম নামতে নামতে ৬৫০ থেকে ৫শ’ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এমনকি চাহিদা থাকা সত্তে¡ও দাম কম থাকায় চিংড়ি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ চিংড়ি শিল্পের সাথে জড়িত আছে। এ শিল্প না বাঁচলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো বেকার হয়ে যাবে। যে কারণে বিদেশে মাছ রপ্তানি হচ্ছে না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। সেই সাথে খুলনা জেলার কয়েক হাজার শ্রমিক বেকারত্ব থেকে রক্ষা পাবে।
আড়ংঘাটা মৎস্য চাতাল মালিক আসলাম শেখ জানান, পানির দামে মাছ বিক্রি করায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে চিংড়ি চাষিরা। বর্তমান সঙ্কট সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান জানান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মুদ্রার দরপতন ঘটায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মাছ কেনাবেচায় নতুন ও পুরাতন নিয়মের জটিলতাও এ ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব ফেলছে। তবে চাষিরা দ্রুত আশার আলো দেখতে পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।