চার-পাঁচ রানের ব্যাটিং গড় মুমিনুলদের!

0
345

স্পোর্টস ডেস্কঃ

টেস্টে এর চেয়ে বাজে ব্যাটিং কবে করেছে বাংলাদেশ? উত্তর-কখনোই নয়।
সাকিব আল হাসানের ৬ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস ১২৯ রানে থামিয়ে দিয়েও জ্যামাইকা টেস্টে বাংলাদেশ ১৬৬ রানে হেরেছে দুই দিন বাকি থাকতে। তার আগে দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও সেই ব্যাটিং-লজ্জা। আবারও জেসন হোল্ডারের সামনেই কুপোকাত। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানে ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয় অধিনায়কই গুঁড়িয়ে দেন বাংলাদেশকে।

কিংস্টন টেস্ট থেকে পেছাতে পেছাতে ২০০০ সালের নভেম্বরের অভিষেক টেস্ট পর্যন্ত ফিরে গিয়েও টেস্টে বাংলাদেশের এবারের চেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ তাদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ব্যাটিংটা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের সিরিজেই।

অ্যান্টিগায় ৪৩ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার শুরু। ব্যাটসম্যানরা অবশ্য বলতে পারেন, সিরিজের পরের তিন ইনিংসে তো তাঁরা উন্নতির রেখা ধরেই হেঁটেছেন! তা ঠিক। ৪৩ থেকে তো পরে ক্রমেই লম্বা হয়েছে ইনিংসগুলো! ১৪৪,১৪৯ ও ১৬৮।

চার ইনিংসে ৪০ উইকেটে ৫০৪ রান। প্রতি ১২.৬০ রানে একটি উইকেট। দুই টেস্টের সিরিজে চার ইনিংস ব্যাট করে এত কম রান আর কখনোই করেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং গড়ও এত কম ছিল না কখনো। দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ এর আগের সর্বনিম্ন ৫৮০ রান করে ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে।

দুর্ভাগ্যজনক হলো, ১০৮ টেস্টের ইতিহাসে বর্তমান দলটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ। নিজের ৬২ তম টেস্টটি খেলে মুশফিকুর রহিম তো এই সিরিজেই দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলোয়াড় হলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান খেলেছেন ৫১ টেস্ট, তামিম ইকবাল ৫৪, মাহমুদউল্লাহ ৩৭ এবং মুমিনুল হক ২৭। তা তাঁদের ২২৯ টেস্টের অভিজ্ঞা থেকে কী পেল বাংলাদেশ দল?

টেস্টের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বলে পরিচিতি আছে মুমিনুলের। তিনি কি পারলেন সেই পরিচয়টা তুলে ধরতে? একটা সিরিজ কারও খারাপ যেতেই পারে, কিন্তু সেই খারাপের তো ধরন থাকে। চার ইনিংসের একটিতেও টেস্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুলের ছিটেফোঁটা দেখা গেল না। ৪ গড়ে রান করেছেন ১৬। দুই ইনিংসে রানই পাননি। মাহমুদউল্লাহ তাঁর চেয়ে একটু ভালো, মানে রানের গড়টা দশমিক ৭৫ বেশি। রান করেছেন ১৯।

টেস্টের অভিজ্ঞতম মুশফিকুর রহিমের রান ৬৩ (৮,০, ৩১ ও ২৪), গড় ১৫.৭৫। তামিম ইকবাল তার চেয়ে ১ রান বেশি করে ১৬ রানের গড়ের মালিক। আরেকটু ভালো তামিমের ওপেনিং সঙ্গী লিটন দাসের অবস্থা। ১৮ গড়ে ৭২ রান। জ্যামাইকা টেস্টের দুই ইনিংসে করা ৩২ আর ৫৪ রানের সুবাদে সাকিবের গড় দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪.৫। দুই টেস্টে রান ৯৮, সিরিজে দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ এটাই। সাকিব ছাড়া চার ইনিংসে পঞ্চাশের ওপর রান শুধু লিটন (৭২), নুরুল হাসান (৬৮), তামিম (৬৪) ও মুশফিকের (৬৩)। সিরিজে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি গড় (৩১.০০) তাইজুল ইসলামের। তিনি অবশ্য খেলেছেনই একটি টেস্ট।

ব্যাটিংয়ে এমন ভরাডুবির ব্যাখ্যা ব্যাটসম্যানদেরই ভালো জানার কথা। বাইরে থেকে যেটি মনে হয়েছে, অ্যান্টিগার উইকেটে রান করা কিছুটা কঠিন ছিল। তবে সেটি টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন ৪৩-এ অলআউট হওয়ার মতো নয়। আর এত অনুশীলন, এত বিদেশ সফর এবং এত অভিজ্ঞ হওয়ার পর উইকেট-কন্ডিশনকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করালে লোকে হাসবে। এগুলোই যদি সমস্যা হবে, তাহলে কোনো দলেরই তো বিদেশে গিয়ে ভালো খেলার কথা নয়! ভালো খেলার জন্য সবাই হোম সিরিজের জন্য বসে থাকত।

অ্যান্টিগার তুলনায় কিংস্টনের উইকেটে খেলাটা ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও দুরূহ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ভয় সত্যি হয়নি। টেস্টের প্রথম দিনেই শুধু উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু ছিল, সেদিন ব্যাটিং করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই উইকেটেই তারা করে ফেলল ২৯৫। অথচ দ্বিতীয় দিন থেকে ব্যাটসম্যানদের বন্ধু হতে থাকা উইকেটে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা!

সমস্যাগুলো সবই মৌলিক। ভুল শট নির্বাচন, ফুট ওয়ার্কের অভাব, অকারণ ধৈর্যচ্যুতি এবং অপ্রয়োজনে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা-এর বাইরে বাজে ব্যাটিংয়ের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তামিমও কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন নিজেদেরই। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর কাছে তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, ‘এখানে যা হয়েছে, সেটির কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমরা কেবল আমাদেরই দোষ দিতে পারি। আমাদের ব্যাটিং ভালো হয়নি। একটু কঠিন উইকেটে খেলেছি, তাই বলে এমন নয় যে সেগুলো খেলার মতো ছিল না। ওদের বোলিং ভালো হয়েছে, তবে অতটা নয় যে আমরা কোনো ইনিংসেই ২০০ করতে পারব না।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে চার বছর পর ডিউক বলে খেলতে হয়েছে, সেটাকেও সমস্যা মনে হয়নি তামিমের কাছে। তাঁর চোখে সমস্যা যত না খেলায়, তার চেয়ে বেশি মানসিকতায়। সুইং-বাউন্সে সে কারণেই হিমশিম খেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।

তা মনের অসুখ সারানোর কি কোনো ওষুধ আছে নতুন কোচ স্টিভ রোডসের কাছে?

মুমিনুল হক
৪.০০ গড়ে ১৬ রান
ইনিংস: ১, ০, ০, ১৫
মাহমুদউল্লাহ
৪.৭৫ গড়ে ১৯ রান
ইনিংস: ০, ১৫, ০, ৪
মুশফিকুর রহিম
১৫.৭৫ গড়ে ৬৩ রান
ইনিংস: ০, ৮, ২৪, ৩১
তামিম ইকবাল
১৬.০০ গড়ে ৬৪ রান
ইনিংস: ৪, ১৩, ৪৭, ০
লিটন দাস
১৮.০০ গড়ে ৭২ রান
ইনিংস: ২৫, ২, ১২, ৩৩
সাকিব আল হাসান
২৪.৫০ গড়ে ৯৮ রান
ইনিংস: ০, ১২, ৩২, ৫৪