ঘৃতকুমারীর কদর প্রাচীনকাল থেকেই

0
421

লাইফস্টাইল ডেস্কঃ

মরুভূমিতে তিনশ প্রজাতির ঘৃতকুমারীর সন্ধান মেলে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এটা সিবর বা সাব্বার নামে পরিচিত। ঘৃতকুমারীর রসকেও আরবিতে সিবর বলা হয়। সিবর বা সাব্বার শব্দটি এসেছে আরবি ‘সবর’ থেকে। আরবিতে সবর মানে ধৈর্য। কারণ এ উদ্ভিদটি মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে যেন ধৈর্যের সঙ্গে টিকে থাকে। প্রখ্যাত আরব চিকিৎসক ও দার্শনিক আল কিন্দি তা চিকিৎসা বিশ্বকোষে ঘৃতকুমারীর প্রদাহনাশক গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানও আল কিন্দির মত সমর্থন করে।

ছয় হাজার বছর আগেই মিসরীয়রা ঘৃতকুমারীকে ‘অমর উদ্ভিদ’ আখ্যা দিয়েছিল। এটার ঔষুধি গুণাবলী তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। রানী ক্লিওপেট্রা তার রূপের জৌলুস বাড়াতে ঘৃতকুমারীর মাঝের অংশ দিয়ে দেহ মাজতেন। ইতিহাসে রয়েছে, গ্রিকরা টেকো মাথায় চুল গজানো আর নিদ্রাহীনতা তাড়াতে ঘৃতকুমারী ব্যবহার করতো। আমেরিকার আদিবাসীরা এখনও ঘৃতকুমারীকে ‘স্বর্গের জাদুর কাঠি’ ভাবে। এটা ‘মরুভূমির লিলি’ নামে পরিচিত।

জার্মানির মিসরতত্ত্ববিদ জর্জ ইবার্স ১৮৬২ সালে এমন একটি প্যাপিরাসের সন্ধান পান, যা যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও সাড়ে তিন হাজার বছর আগের। এতে লেখা আছে, চীনা ও ভারতীয়রা ঘৃতকুমারীর ব্যবহার জানে।

১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার রিচার্ড বার্টন সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা সফরকালে মরুভূমিতে ঘৃতকুমারীর পরিচয় কিভাবে পান, তার সরস বর্ণনা দিয়ে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রচণ্ড গরম আর অকল্পনীয় শীতের মাঝেও ঘৃতকুমারী গাছ টিকে থাকে। ঘৃতকুমারী ভেষজ উদ্ভিদ। এটার পাতার রস যকৃতের জন্য উপকারী। বাংলায় তরুণী ঔষধি গাছ হিসেবে এর অনেক কদর। তবে বাংলাদেশীরা এটাকে ঘৃতকুমারী নামেই বেশি চিনে। এটা কুমারী নামেও পরিচিত। এটার বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালো ভেরা।

আমরা বিভিন্ন সময় নিজেদের শরীর এবং ত্বকের নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকি। কেউ হয়তো অনেক মোটা হয়ে যাচ্ছি, ব্যায়াম করার সময় নেই। কারও বা ত্বকে কালো দাগ, ব্রণ বা শুষ্কতা দূর করার উপায় খুঁজছি। আর চুলের সমস্যা তো মনে হয় সবচেয়ে বেশি, চুল পড়ে যাচ্ছে, নিন্তেজ আর রুক্ষভাব কিছুতেই যাচ্ছে না। সত্যি যারা এই সমস্যাগুলোর ভেতর দিয়ে যান, তারাই বোঝেন এটা যে কত কষ্টের অনুভূতি। কিন্তু আপনাদের জেনে ভালো লাগবে, এসব সমস্যার খুব সহজ সমাধান হচ্ছে ঘৃতকুমারী। এটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ।

বলা হয়, প্রতিদিন সকালে ২ টেবিল চামচ অ্যালো ভেরার রস পানি দিয়ে মিশিয়ে পান করলে হজম শক্তি বাড়ে, পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে।

তবে এটা পরীক্ষিত সত্য, ঘৃতকুমারীর পাতার রস নিয়মিত ত্বকে ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং রোদে পোড়াভাব দূর হয়। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী। কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অতি সংবেদনশীল ত্বক কিংবা ব্রণ ওঠার প্রবণতা যাদের বেশি, তারা এর থেকে অনেক বেশি উপকার পাবেন।

বিশেষ করে ত্বক কোমল ও মসৃণ করতে এবং ত্বকে ব্রণের দাগ দূর করতেও ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজে দেয়। তবে এটা রস দীর্ঘদিন পান করলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করেন ‘অ্যালো ভেরার রস ঘষে দেহের রং চকচকে করা যায়, চামড়ার তামাটে ভাবও দূর করা যায়। নাকের দুপাশে কালশিটে দাগও তাড়ানো যায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটার রস দীর্ঘদিন পান করার যুক্তি নেই।’