গ্লোবাল মার্কেটে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রতিযোগিতা পোশাক শিল্প রপ্তানিতে

0
551

  খুলনাটাইমস ডেস্কঃকোনো জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক অন্যতম ধারক-বাহক হিসেবে পোশাকের ভূমিকা অন্যতম। সেই আদিম অসভ্য সমাজের পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং নানা উন্নয়ন ও বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক সভ্য সমাজে পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বস্ত্র বা পোশাকের ভূমিকাকে অগ্রাহ্য করা যায় না। তো পোশাক-পরিচ্ছদ যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের এক অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠলো, তেমনি এর উৎপাদনও আস্তে আস্তে একসময় শিল্পের রূপ নিলো। আর বাংলাদেশও এই পোশাক শিল্পকে ধারণ করে, লালন করে চলেছে।

এদেশের শ্রমের দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এবং কিছু সফলকামী শিল্পপতি ও উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই উঠে এসেছে এদেশের পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি। কিন্তু এদেশে অনেক প্রাচীনকাল থেকেই পোশাকশিল্পের ভিত্তি রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের এক অন্যতম ঐতিহ্য ছিলো মসলিন কাপড়। ব্রিটিশ শাসকদের নির্মমতার কবলে এই ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম চিরতরে। যদিও এখন আবার মসলিনের কাছাকাছি আমরা ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। এরপর আছে দেশীয় সিল্ক, কিংবা জামদানীসহ আরো কিছু শিল্প যা এ দেশকে নিয়ে গেছে অন্যতম অবস্থানে।

তবে এতকিছুর পরেও তৈরী পোশাক শিল্প দেশকে একদিকে যেমন এনে দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা এবং সমৃদ্ধি, অন্যদিকে তেমনি দেশকে নিয়ে গেছে তৈরী পোশাক রপ্তানিতে অন্যতম এক অবস্থানে। তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন অবস্থান করছে দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথম অবস্থানে আছে চীন। বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা থাকার পরও বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থানে আসীন, সেটা আসলেই আমাদের জন্য এক গৌরবের বিষয়।

তবে কেবল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মানেই এই নয় যে, সেটি সবসসময় একই অবস্থানে থাকবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে কিংবা প্রযুক্তিগত স্বল্পতার কারণে নিচে নেমে যাওয়াটা খুব কঠিন কোনো বিষয় হবে না। কাজেই অবস্থান অর্জনের চেয়ে এখন সেটা রক্ষা করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। যদি তা আমরা পারি, তাহলে এরপর আমাদের লক্ষ্য হবে প্রাণপণে প্রথম অবস্থানে যাওয়ার জন্য। যত সহজে কথাটা বলা যায়, বাস্তবে সেটি তারও বেশি কঠিন।

তৈরী পোশাক রপ্তানিতে গ্লোবাল মার্কেটে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে

এবার কিছু পরিসংখ্যানে আসা যাক। প্রথমেই জানা যাক বাংলাদেশের তৈরী পোশাক বিশ্বের কোন কোন দেশে রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুতকৃত পোশাক রপ্তানি করা হয় ইউরোপিয়ান দেশ, বিশেষ করে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, স্পেন সহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে। সেই সাথে আমেরিকান দেশসমূহেও বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের রয়েছে অন্যতম অবস্থান। এছাড়া নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, জাপান সহ আরো কয়েকটি দেশে তৈরী পোশাক রপ্তানি করা হয়।

বিজিএমইএ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী আরো দেখা যায় যে, ২০১৬-২০১৭ ফিস্কাল বছরে দেশের মোট গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৪৮২টি, যেখানে কাজ করছে প্রায় চার মিলিয়ন শ্রমজীবী মানুষ। এই সংখ্যাদ্বয় ২০ বছর আগে অর্থাৎ, ১৯৮৬-৮৭ সালে ছিলো ৬২৯টি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এবং সেখানে কাজ করতো ০.২৯ মিলিয়ন কর্মজীবী। এছাড়া প্রতিবেদন থেকে আরো দেখা যায়, ২০১৬-১৭ ফিস্কাল বছরে দেশের মোট রপ্তানি ছিলো প্রায় ৩৪,৬৫৫.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট তৈরী পোশাক শিল্পের রপ্তানি করা হয়েছে প্রায় ২৮,১৪৯.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কিনা মোট রপ্তানির প্রায় ৮১.২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে মূলত যেসব রেডিমেড গার্মেন্টস বা তৈরী পোশাক বাইরের দেশে রপ্তানি করা হয় এর মধ্যে আছে ঊভেন গার্মেন্টস এবং নিটওয়্যার। যেসব আইটেম রপ্তানি হয় এদের মধ্যে শার্ট, ট্রাউজার, টি-শার্ট, জ্যাকেট এবং সোয়েটার উল্লেখযোগ্য। ২০১৬-২০১৭ ফিস্কাল বছরে (জুলাই-মার্চ) ইউরোপিয়ান দেশসমূহে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ৫,৮৯৫.০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জুলাই-মার্চ ২০১৭-২০১৮ ফিস্কাল বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৫১৮.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

তো এসব পরিসংখ্যান কিংবা তথ্যের দিকে তাকালে আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবো যে, আমরা আসলে পোশাক শিল্পে ঠিক কোন অবস্থানে আছি। তবে এর পেছনে আছে আমাদের শ্রমজীবী মানুষের হাতের ছোঁয়া। কিন্তু তবুও সদ্য উন্নয়নশীল দেশের পরিচিতি পাওয়া এই দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো নানাবিধ সমস্যা থেকেই গেছে। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে দেশের পোশাক রপ্তানি যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বাড়বে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। (বিস্তারিত পরিসংখ্যানের জন্য- BGMEA)

এখন একটু গ্লোবাল মার্কেটের দিকে দেখা যাক। ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্লোবাল মার্কেটে মোটামুটি রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানিতে বেশ ভালোই প্রবৃদ্ধি অর্জন করছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে সেটি ২০১৫০তে এসে প্রায় ৬.৮ শতাংশ কমে যায়। ২০১৪ সালে যা ছিলো ৪৭৪.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেটি ২০১৫ তে হঠাৎ কমে দাঁড়ায় ৪৪২.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে সেটি মোটামুটি স্থিতিশীলই ছিলো। মূলত ২০১৪ সালের মোট বৈশ্বিক রপ্তানি ছিলো সর্বোচ্চ।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কর্পোরেশন (ITC) এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (WTC) অনুযায়ী গ্লোবাল মার্কেটের রপ্তানির পরিমাণসমূহ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদিও দেশ পোশাক রপ্তানিতে গ্লোবাল মার্কেটে প্রতিবছরই উত্তরোত্তর নিজের অবস্থান উন্নত করছিলো (এবং এখনো একটি ভালো অবস্থানে আছে)। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলো বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আবার গ্লোবাল মার্কেটের স্লোডাউনও এক্ষেত্রে পালন করছে বিশেষ ভূমিকা। বিজিএমইএ এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে রেডিমেড গার্মেন্টসের অবিরত মূল্যহ্রাসের কারণে পোশাক খাতে এমন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই মূল্যহ্রাসের পেছনে আছে ব্রেক্সিট রেফারেন্ডাম কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনসহ আরো কিছু কারণ, যেহেতু সেগুলো গ্লোবাল এক্সপোর্ট মার্কেটের উপর প্রভাব ফেলছে। সেই প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতেও প্রভাব বিস্তার করেছে।

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) বাংলাদেশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের পোশাক শিল্প রপ্তানি এখনো প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে আছে। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানির যে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিলো, সেটি অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। ইপিবির প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির হার এখনো মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে, কিন্তু বিগত বছরগুলো থেকে সেটি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

বিজিএমইএ এক্ষেত্রে বেশ কিছু কারণকে দায়ী বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব কারণের মধ্যে শক্তি সংকট, ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। বিজিএমইএ এর ধারণা অনুযায়ী, এসব কারণের ফলাফল হিসেবে বেশি বেশি রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের দাবী অনুযায়ী পোশাক রপ্তানিতে আমরা পিছিয়ে পড়বো। গ্লোবাল মার্কেটে প্রতিযোগিতায় পোশাক রপ্তানিতে প্রথম অবস্থানে যাওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেটি কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে যদি এসব সমস্যার সমাধান না করা হয়।

রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানির হার

তবে একদিকে আশার কথা হচ্ছে, গ্লোবাল এক্সপোর্ট মার্কেটের প্রথম অবস্থানে থাকা চীনের রপ্তানির পরিমাণ ২০১৪ সালের পর থেকে কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আইটিসির টেবিলটি দেখলেই সেটি বোঝা যাবে। আবার বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রপ্তানিও আস্তে আস্তে বেড়েছে ২০১৫ সালের পর থেকে। তবুও চীনের রপ্তানি কমে গেলো না বেড়ে গেলো, সেটি আসলে কাকতালীয় ব্যাপার এবং আমাদের জন্য গৌণ ভূমিকা পালন করবে সেটি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটি প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধান করা এবং পোশাক শিল্পে সুষ্ঠু বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা।

গ্লোবাল মার্কেটের দিকে তাকালে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রপ্তানির জন্য যে সমস্যাটি এসে যায়, সেটি হচ্ছে গ্লোবাল মার্কেটে অ্যাপারেল বা গার্মেন্টসের মূল্য কমে যাওয়া। অর্থাৎ একদিকে গ্লোবাল মার্কেটে রেডিমেড গার্মেন্টসের মূল্য কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের মধ্যে গার্মেন্টসের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কাজেই রপ্তানি করা হলেও সেটির হার দিন দিন কমেই যাচ্ছে বলা যায়। এর ফলে দেশের নতুন ও পুরাতন উদ্যোক্তা ও শিল্পপতিদের জন্য গার্মেন্টস শিল্পের ব্যবসা ধরে রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে যাছে।

পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, বিগত ১৫ বছরে গ্লোবাল মার্কেটে বাংলাদেশের রেডিমেড গার্মেন্টসের মূল্যহ্রাস হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ! এই মূল্যহ্রাসের কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ধারণক্ষমতার অভাব। বন্দরে ধারণক্ষমতার অভাবে প্রায়শই গার্মেন্টস শিপমেন্টের লিড টাইম অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। লিড টাইম হচ্ছে বায়ার  বা ক্রেতাদের বেঁধে দেয়া সময়, যার মধ্যেই গার্মেন্টস শিপমেন্ট করা জরুরী। অন্যথায় ক্রেতাগণ শিপমেন্ট বাতিল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

কাজেই যদি সমুদ্র বন্দরে ধারণক্ষমতার অভাবে গার্মেন্টস শিপমেন্ট করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি অতিরিক্ত টাকা খরচ করে আকাশপথে শিপমেন্ট করতে বাধ্য হয়। আবার একই কারণে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি সমুদ্রপথে শিপমেন্ট করতে গিয়ে তাদের লিড টাইম অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বিদেশি ক্রেতাগণ এসব সমস্যার কারণে তাদের অর্ডার বাংলাদেশে না দিয়ে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ, যেমন ভারত, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া কিংবা মায়ানমারের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।

এরূপ সমস্যার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প তার বৃহৎ মার্কেট, যুক্তরাষ্ট্রকে আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছে। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে যুক্তরাজ্যে গার্মেন্টস রপ্তানিতেও। ফলে বাংলাদেশ এখন তৈরী পোশাক শিল্পের বাজার অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যেমন- জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ফলাফল খুব একটা সন্তোষজনক নয়। আবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রামান বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকার কারণেও রপ্তানিতে আমাদের লভ্যাংশ কমে যাচ্ছে, যেখানে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার মূল্য কমে গেছে বহুগুণে। বিগত ৫ বছরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মূল্যহ্রাসের পরিমাণ ছিলো ৩২ শতাংশ, তুরস্কের জন্য সেটি ছিলো ১০২ শতাংশ, কিন্তু বাংলাদেশী মুদ্রার ক্ষেত্রে সেটি ছিলো ৩.২ শতাংশ, অনেক অনেক কম।

গ্লোবাল গার্মেন্টস এক্সপোর্ট মার্কেটে বাংলাদেশ এখনো তার অবস্থান ধরে রেখেছে

আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মার্কেটিং স্ট্রাজেজির অভাব, Negotiation (দর কষাকষি) বা যুক্তি-তর্ক করার স্বল্প ক্ষমতার কারণও এসব কারণের মধ্যে আছে বলে ধারণা করা হয়। সমস্যাগুলোর মধ্যে আরো আছে ব্যংক জটিলতা। সাধারণত এলসি (Letter of Credit) যোগে বিদেশী ক্রেতাগণ তাদের প্রোডাক্ট অর্ডার দিয়ে থাকে। এখন ব্যাংক জটিলতার কারণে তাদের লিড টাইম আবার বিঘ্নিত হয়। কাজেই তারা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারেন।

তো দেখা যায়, গ্লোবাল এক্সপোর্ট মার্কেটে এখনো দ্বিতীয় অবস্থানে বেশ ভালোভাবেই আটকে আছে বাংলাদেশ। তবে এখনও সামনে আছে চীন। কিন্তু চীনকে টপকে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে বাংলাদেশের, তেমনি বর্তমান অবস্থান থেকে খেই হারিয়ে ফেলারও আছে অনেক সম্ভাবনা। কাজেই এখনই সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যেন দেরি না হয়ে যায়। তাছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে গার্মেন্টস রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেটিও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।

চীন যদিও এখনো তার অবস্থান প্রথম স্থানে ধরে রেখেছে। কিন্তু অ্যাপারেল এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে তাদের নিম্নগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত বা গৌণ সুবিধা প্রদান করতে পারে। আপাতত বাংলাদেশের কাছাকাছি প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে আছে ভিয়েতনাম, যাদের প্রতিবছর তৈরী পোশাক রপ্তানি ০.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এখনো আমাদের খুব কাছে নেই। আর আছে তুরস্ক, কম্বোডিয়ার মতো দেশ। কাজেই প্রতিযোগিতায় এখনো আমরা এগিয়েই আছি বলা চলে।

বাংলাদেশকে যদি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হয় তবে আমাদের মোট জিডিপি দরকার ৮ শতাংশ। এটি পোশাক শিল্প রপ্তানিকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে কেবল অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে গ্লোবাল মার্কেটের তার উজ্জ্বল অবস্থান থেকে নেমে যেতেও পারে। কাজেই এখনই সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার। তাহলেই আমরা পোশাক শিল্প রপ্তানিতে প্রথম অবস্থানে যাওয়ার এবং ২০২১ সালের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবো।