গৃহবধূ সোনিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা!

0
851

কামরুল হোসেন মনি:
গৃহবধু মরিয়ম আক্তার সোনিয়াকে তার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে বিষপানে হত্যা করেছে। হাসপাতালে মৃত সোনিয়াকে রেখে সবাই পলাতক থাকার বিষয়টি আরও দিনকে দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নগরীর সিএন্ডবি কলোনী সোনিয়ার শ্বশুর বাড়ির এলাকায় স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার বিষয়টি অনুসন্ধানে কিছু তথ্য উঠে আসে।
এদিকে বুধবার রাতে মৃত সোনিয়ার মা মনোয়ারা বেগম তার মেয়েকে হত্যার অভিযোগ দাখিল করলে থানায় আত্মহত্যা প্রেরচনার অভিযোগে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের হয়। এমন অভিযোগ সোনিয়ার পিতা কাশেম আলী শেখের। তবে পুলিশের বক্তব্য পোষ্ট মডাম রিপোর্ট ওপরই নির্ভর করবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
সোনাডাঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ জিল্লাল হোসেন বলেন, যেহেতু ডাক্তারি রিপোর্টে পাওয়া গেছে বিষ পান করা। যার কারণে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে তাকে আত্মহত্যা করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। যদি পোস্ট মডাম রিপোর্ট হাতে পেলেই বুঝা যাবে মুল রহস্য। ওই সময় কোন হত্যা ক্লু পাওয়া যায় তখন হত্যা মামলায় রুপান্তারিত করা হবে।
গত কয়েকদিনে অনুসন্ধানে সোনিয়ার মৃত্যু নিয়ে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছেন। বৃহস্পতিবার সোনিয়ার শ্বশুর বাড়ি সিএন্ডবি কোলীতে গেলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি সোনিয়ার মৃত্যুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ তোলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সোনিয়ার শ্বাশুরী আকলিমা বেগম প্রায়ই সোনিয়াকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালাতেন। ওই আকলিমা বেগম সোনিয়ার মৃত্যুর দিন দুই আগে ফিনিস নামে তেলাপকা ও ঈদুর মারা ওষুধ কিনে আনেন। ওই ফিনিস সুজির সাথে মিশিয়ে একদিন আগে সোনিয়াকে খাওয়ানো হয়। রোববার সকালে সোনিয়া যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সোনিয়ার শ্বাশুর স্থাণীয় বাসিন্দাকে বলেন, সে স্টোক করেছে। তখন সোনিয়ার অচেতন অবস্থায় ছিলেন এবং শরীরে সুজির দানা গায়ে দেখতে পান। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সোনিয়ার স্বামী কিছু দিন আগে আরও একটি বিয়ে করেছেন। তার বয়রা রায়েরমহল এলাকায় একটি ধানের চাতাল রয়েছে।
একটি সূত্র জানান, যদি সোনিয়া নিজেই বিষপানে আত্মহত্যা করেন তাহলে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি কেন গোপন রাখবেন, তারা কেনই বা স্ব-পরিবার পালিয়ে যাবেন। যদি তাদের মধ্যে কোন দুর্বলতা না থাকতো তাহলে তারা সোনিয়া বিষপান করার বিষয়টি গোপন রাখতেন না। তারা এলাকায় বলেছেন স্টোক আর হাসপাতালে চিকিৎসকরদের কাছে গোপন রেখে বলেছেন তার সর্দি-জ্বর হয়েছে। এই সব বিষয়টি সামনে আনলে সোনিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বিষয়টি এখন পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে। এই সব বিষয়গুলো পুলিশ যদি নিরপক্ষভাবে তদন্ত করেন তাহলে এটাই প্রমানিত হবে সোনিয়াকে বিষপান করে হত্যা করা হয়েছে। এর সাথে সোনিয়ার স্বামী আঃ রহিমসহ ওর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জড়িত। এছাড়া আঃ রহিম আরও একটি বিয়ে করেছেন। ওই মেয়েটি নগরীর কোন এক প্রাইভেট হাসপাতালে চাকুরিত রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়।
এদিকে বুধবার রাতে সোনিয়ার মা মনোয়ারা বেগম তার মেয়েকে মৃত্যুর জন্য তার মেয়ের স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন কে দায়ি করেছেন এবং তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে পুলিশ মামলাটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা প্ররোচনা অভিযোগে মামলাটি গ্রহন করেন। পোষ্ট মডার্ম রিপোর্ট হাতে পেলেই হত্যা আলামাত পেলেই তখন হত্যা মামলায় রূপান্তারিত করবেন। আত্মহত্যা প্রচোরনায় মামলায় সোনিয়ার স্বামী আঃ রহিম, শ্বাশুড়ী আকলিমা বেগম, শ্বশুর আঃ হাকিম, ননদ শারমিন আক্তার ও মামা শ্বশুর মোঃ ইকবালকে আসামি করা হয়েছে। যার মামলা নং-২০। তারিখ-১৫-১১-১৭।
মামলার এজাহারে সোনিয়া মা মনোয়ারা বেগম উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে জুন মাসে মেয়ে সোনিয়া নিজের পছন্দে আঃ রহিমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই ছেলের পরিবার মেনে না নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় মারপিট ও গালিগালাজ করতেন। গত ২ নভেম্ববর মেয়েকে মারপিটের বিষয় জানতে চাইলে মেয়ের শ্বাশুরী আকলিাম বেগম তাকে (মনোয়ারা বেগম) গালাগালিজ করেন এবং বলেন এবার আসলে তোর মেয়ের লাশ নিতে আসবি। এ সময় সোনিয়ার স্বামীও তাকে গালিগালাজ করেন। ঘটনার দিন ১২ নভেম্বর যখন মেয়ের অসুস্থতের কথা শুনে সোনিয়ার মা মনোয়ারা বেগম যখন খুমেক হাসপাতালে যায়। তখন সোনিয়ার শ্বাশুরি তাকে বলেন, ২-৩ দিন যাবত সর্দি-জ্বর হয়েছে। যখন মেয়ে কালো কালো বমি করেন, তখন পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি মিথ্যা বলছেন। পরবর্তীতে যখন তার মেয়ের অবস্থা ভাল নেই চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন তখন তাকে আইসিইউতে রেফার্ড করা হয়। তখনই চিকিৎসকরা জানান তার মেয়ে বিষপান করা অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে। যদি আগে থেকে বিষয়টি গোপনা না রাখতো তাহলে আপনার মেয়েকে বাচানো সম্ভব হতো।
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর সকালে মরিয়াম আক্তার সোনিয়াকে তার স্বামী আঃ রহিম ও শাশুড়ি আকলিমা বেগম জ্বর ও সর্দির কথা বলে খুমেক হাসপাতালে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ভর্তি করান। ওই সময় সোনিয়া বিষ পান করা ছিল বিষয়টি চিকিৎসকদের কাছে গোপন করেন। খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-২ ভর্তিকৃত সোনিয়াকে ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক যখন পরীক্ষা করতে যান তখনই বুঝতে পারেন সোনিয়া বিষ পান করা। কিন্তু তার আগেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। সোনিয়াকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেফার্ড করা হলে নিতে নিতে সে বেলা ২টা ৫ মিনিটে মারা যায়। সোনিয়ার মৃত্যুর পরই হাসপাতাল থেকে আঃ রহিম পালিয়ে যান। পরববর্তীতে সোনিয়ার শাশুড়ি দুধের শিশু রোদেলাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসেন। সোনাডাঙ্গা থানার এসআই হরষিৎ ম-ল ওই দিন সোনিয়ার শ্বশুরবাড়ি সিঅ্যান্ডবি কলোনীতে গেলে সেখানে কাউকে পাননি। ঘরে তালা মেরে সবাই আত্মগোপনে চলে যায়।