গণটিকাদান কর্মসূচি : বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই কাম্য নয়

0
130

সারাদেশে গণটিকাদান কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হওয়ার সংবাদ অনভিপ্রেত। দেখা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ ডোজ টিকা দেওয়া হলেও সেখানে টিকা নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। বলা চলে, সেসব স্থানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও হয়রানির শিকার অনেকেই অভিযোগ করেছেন, প্রথমদিকে যে কোনো কেন্দ্র থেকে টিকা নেওয়ার কথা থাকলেও পরে সবাইকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে লাইন ভেঙে নতুন স্থানে গিয়ে পুনরায় দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতে হয়েছে তাদের। অনেক স্থানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও উঠেছে, যেখানে লাইনে দাঁড়ানোর নূন্যতম শৃঙ্খলাও মানা হয়নি। এ ছাড়া একসঙ্গে অনেক মানুষ জমায়েত করে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করায় তিন জেলায় তিন নারীকেক পরপর দুই ডোজ টিকা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত শনিবার থেকে দেশের ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনতে শুরু হয়েছে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে গণটিকাদান কার্যক্রম। তবে প্রথম থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর আগ পর্যন্ত পরিকল্পনায় কয়েক দফা পরিবর্তন আনার পরও প্রথমদিনেই কার্যক্রমটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বস্তুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট’ পরিকল্পনা অনুযায়ী গণটিকা কার্যক্রম যে পরিচালিত হচ্ছে না, প্রথমদিনেই তা স্পষ্ট হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত গণটিকাদান কর্মসূচিতে অনেক এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত হওয়ায় হাসপাতালের বাইরে নিজেদের সুবিধামতো স্থানে কেন্দ্র করেছেন এবং সেখানে টিকাদানের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব লোকদের অগ্রাধিকার দিতে দেখা গেছে। আবার অনেক এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা নিজেরাই তালিকা করে সেই অনুযায়ী টিকা দেওয়ায় সাধারণ মানুষ টিকা কেন্দ্রে গিয়েও ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রমে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করায় এনজিওকর্মীরা নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়ম করে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ফলে সব মিলিয়ে প্রথমদিনেই গণটিকা কার্যক্রম বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছে, যা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করি আমরা।
করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে; পাশাপাশি সংকট কাটিয়ে নতুন ছন্দে জীবন সাজানোর চেষ্টাও করছে মানুষ। প্রাণসংহারী এ ভাইরাস প্রতিরোধ-প্রতিকারে দেশে-দেশে টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, যার সুফল এরইমধ্যে বিশ্ববাসী ভোগ করতে শুরু করেছে। বিশ্বে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিকেই সরকার এ কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে, যা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। করোনার টিকাদান কার্যক্রম নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব করোনা মহামারি মোকাবিলার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাত্র ৩ শতাংশ ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, যেখানে দেশে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এ অবস্থায় টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা যেমন জরুরি, তেমনি টিকাদান কর্মসূচি যাতে কোনো বিতর্কের মুখে না পড়ে, সেদিকেও নজর দেওয়া উচিত। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই-শুরু থেকেই দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে। গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় এটি যাতে আরও প্রকট রূপ ধারণ না করে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।