খোলা চিঠি সংসদ সদস্য সুজার : দোয়া প্রার্থনা খুলনাবাসীর কাছে

0
849

প্রিয় খুলনাবাসী,
আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতার কারনে আপনাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছি না। আপনারা জানেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমার রাজনীতির পথচলা। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ভাগ্নে মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদা ভাইয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্যপুত্র, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামালের একান্ত সান্নিধ্যে আসি এবং খুলনা আবাহনী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা অর্জন করি। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শহীদ শেখ আবু নাসেরের স্নেহের পরশ লাভ করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ আবু নাসের, শেখ কামাল সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্য শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন স্বৈরশাসক আমাকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধীকার, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকে তাঁর নির্দেশকে মাথায় নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে বার বার কারাগারকে আলিঙ্গন করেছি, কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। আপনারা জানেন ১৯৯১ সাল থেকে রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়ার অবহেলিত জনপদের মানুষ আমাকে বার বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে। ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের হুইপ হিসাবে আমাকে নিয়োগ দেন। আমি আমার প্রাণপন চেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় আমার নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করায় স্বচেষ্ট থেকেছি। যে কারনে রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া উপজেলা আজ উন্নয়নের স্বর্ণশিখরে উঠে এসেছে। নারী শিক্ষার উন্নয়নে তিন উপজেলায় কলেজ করেছি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে, শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীর উপর সীমাহীন নির্যাতন, তারই অংশ হিসাবে ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে আমাকে গ্রেফতার করে হত্যার উদ্দেশ্যে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। আল্লাহর রহমত ও আপনাদের ভালবাসায় প্রাণে বেঁচে যাই কিন্তু সীমাহীন নির্যাতনে শারীরিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হই।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমার রাজনৈতিক জীবনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কারাগারে অত্যাচার সহ্য করেছি, কাটিয়েছি প্রবাসে অসহায় জীবন। প্রতিবারই আপনাদের দোয়া-আশির্বাদে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। ২০০২ সালে আমি যখন বিএনপি-জামায়াত জালেম সরকারের ক্লিনহার্ট অপারেশনের শিকার হই, সেই সময়ে আমার উপর নির্যাতন এবং আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গেছে আপনাদের ভালবাসায়। আপনারা আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন বীরের বেশে। ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিনসহ আমাকে ও আমার স্ত্রী সন্তানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগকে এবং আমার রাজনীতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। সে সময়ে আমার প্রবাস জীবনের কষ্টকর অভিজ্ঞতার কথা নাইবা বললাম। আজ বাংলাদেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গিয়েছেন, তাতেই আমরা সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়েছি। এই বিশ্বাসকে সঙ্গী করে আপনাদের ভালবাসা-স্নেহ-শ্রদ্ধায় নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। কিন্তু জীবন বড়ই বিচিত্র। যে অত্যাচার আমার উপর হয়েছে বিগত দিনে, তার ফলে আমার শরীরের অভ্যন্তরে যে রোগ বিস্তৃতি লাভ করেছে যা আজ আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে। আমাকে এনে দাঁড় করিয়েছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি কারাগারে গিয়েছি, তথাকথিত সর্বহারারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, বিএনপি-জামায়াত এর কথা বলেছি আগেই। সকল নির্যাতন ও অপচেষ্টা মোকাবেলা করে আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছি। বুঝেছি আপনারা হৃদয় দিয়ে আমাকে ভালবাসেন। আজ যখন অসুস্থ অবস্থায় বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তখন আপনাদের সাথে থাকা সব স্মৃতি বার বার আমার হৃদয়পটে ভেসে উঠায়, আমি অশ্রæসিক্ত হয়ে পড়ছি, ভাবছি আমি কি আবার ফিরে যেতে পারবো আমার ভালবাসার মানুষদের কাছে? মনোবল ফিরে পাই, একথা ভেবে যে বারবার আমি আপনাদের দোয়া-আশির্বাদে ফিরে এসেছি আপনাদের মাঝে। তাই আজ একটি জটিল অপারেশনের টেবিলে উঠবার পূর্বে আপনাদের কাছে আমার এই খোলা চিঠি। আপনারা আমাকে দোয়া ও আশির্বাদ করবেন আপনাদের ভালবাসায় এবং পরম করুনাময়ের কৃপায় আমি হয়ত ফিরে আসতে পারবো। যদি ফিরে আসি আবার দেখা হবে রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়াসহ খুলনার সকল মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, স্কুল-কলেজে, উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে, আঠারোবাকী-ভৈরব কিংবা রূপসার ঘোলা জল পার হতে হতে। আর যদি ফিরে না আসি তবে আমার স্মৃতির অসংখ্য চিহ্ন পড়ে আছে আপনাদের জনপদে। যদি ভাল কিছু করে থাকি তবে মনে রাখবেন, যদি খারাপ করে থাকি তবে এই চিঠিতে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। যা সম্মান পেয়েছি তা আপনাদের ভালবাসা, দোয়া-আর্শিবাদে পরম করুনাময় আমাকে দিয়েছেন। আপনারা আমার জন্য ও আমাকে যিনি কিডনী দান করছেন, ইউ পি সদস্য মো: আলম হাওলাদার-এর জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করবেন, আমরা যেনো সুস্থ্য হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরি এসে আপনাদের কল্যানে কাজ করতে পারি। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।