খুলনা রেলওয়ের ৪ বিভাগ সরকারি তেল চুরির সাথে জড়িত : বিভাগীয় তদন্ত শুরু

0
1255

সুমন আশিক/ফকির শহিদুল ইসলাম:

খুলনা রেলওয়ের ষ্টেশন মাষ্টার ও এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ফোরম্যান)’দের সহায়তায় রেলওয়ের চার বিভাগ’র (ইলেকট্রিক, লোকো শেড, নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা, রেলওয়ে পুলিশ) কতিপয় সদস্য সরাসরি জড়িত আছেন চোরাই তেল পাচার সিন্ডিকেটের সাথে। নেতৃত্বে রয়েছে শাসক দল সমর্থিত শ্রমিক লীগ নেতা। আর্থিকভাবে লাভবান হতে একে অপরের সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয়েছে রেলওয়ের সরকারি তেল চুরির চক্র। যদিও স্ব স্ব বিভাগের পক্ষ থেকে খুলনাটাইমস ’র  কাছে দাবি করা হয়, তেল চুরি ও পাচার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত নন তারা। এদিকে আজ রোববার থেকে বিভাগীয় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) কর্তৃপক্ষ। চার সদস্যের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হচ্ছে র‌্যাবের অভিযানের দিন রাতে ডিউটিরত সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিবিএ নেতাদের ক্ষমতার পালাবদলের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলী হলেও কখনও থেমে থাকেনি চোরাই সিন্ডিকেটের তেল পাচার কার্যক্রম। সম্প্রতি চোরাই সিন্ডিকেটের সদস্যদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই তেল পাচারের তথ্য প্রকাশ পায়। তারই সূত্র ধরে র‌্যাবের এই অভিযান। সূত্র বলছে, অবৈধ চোরাই তেলের কারবার হয় মুলত কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে খুলনা রেলওয়ের স্টেশন, জংশন, কাশিপুর তেল ডিপো, দৌলতপুর ও ফুলতলার বেজেরডাঙ্গা।

অপর একটি সূত্র জানায়, খুলনা রেলওয়ের স্টেশনে প্রতিদিনের চোরাই তেল বিক্রির অর্থের একটি অংশ লোকোশেড ইনচার্জ বিনয় ভূষন হালদার, শেডম্যান/এটেনডি জাকির হোসেন, ডিউটি রোষ্টার কাজী আমিনুল ইসলাম, ইলেকট্রিক বিভাগের ফোরম্যান বি এম সেলিম আহমেদ ও খায়রুল বাশার, ইলেকট্রিক বিভাগের মিস্ত্রি, খালাসী, রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা (গোয়েন্দা) বাহিনীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মরত রেল কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন।

সঙ্গত কারণেই রেলওয়ে পুলিশের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। একইভাবে রেলওয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নিজস্ব গোয়েন্দা শাখার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযোগের তীর থেকে বাদ পড়েনি খুলনা ষ্টেশন এলাকায় নৌ পুলিশও। কেননা তাদের নির্ধারিত এলাকার মধ্যেই র‌্যাব অভিযান চালিয়ে চোরাই সিন্ডিকেটের সদস্যদের আটক করে। আর ইয়ার্ড এলাকার বাইরে চোরাই তেল সিন্ডিকেটের কার্যক্রম চলার কারণে কার্যতই পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়না বলে জানিয়েছে রেল নিরাপত্তা বাহিনী।

 

 

আরও জানা গেছে, এই তেল চুরি চক্রের মূল হোতা তেল চুরি মামলার এজাহার নামীয় আসামী স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হাওলাদার। তার পক্ষে তেল চুরির সম্মন্বয় করে তার মেয়ে জামাতা মাহামুদ ওরফে ট্যারা মাহামুদ। চোর চক্রের এই সম্মন্বয়কারী শ্বশুরের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন দাপটের সাথে অবৈধ চোরাই তেলের ব্যবসা চালিয়ে বনে গেছে কোটিপতি। অবশ্য, জাহাঙ্গীর খুলনাটাইমসকে বলছে, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবেই হেয় প্রতিপন্ন করতে সংগঠনের সাবেক নেতারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করছে।

ওই চক্রে আরও রয়েছেন রেলওয়ে শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক আকাশ হাওলাদার, মোঃ শরীফুল ইসলাম, মোঃ মহিউদ্দিন এবং কতিপয় লোকোমাষ্টার সহ ১০-১২ জনের একটি চক্র। যারা প্রত্যেকই রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী। তাদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে তেল ক্রয় করে স্থানীয় তিথি এন্টার প্রাইজের মালিক শেখ আশরাফ আলী। লোকোমাষ্টারদের কাছ থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ৫০ টাকা ক্রয় করে ৭০ টাকায় এবং মবিল ৮০ টাকা লিটার ক্রয় করে ১২০ টাকায় বিক্রয় করা হয় বলে বলে জানাগেছে।

খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাষ্টার মানিক চন্দ্র সাহা খুলনাটাইমসকে বলেন, ঘটনার দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। পরে বিশ^স্ত সূত্রে জেনেছেন চুরি করা তেল ছিল ইলেকট্রিক বিভাগের। সংশ্লিষ্ট বিভাগের যোগসাজস ছাড়া এমন ঘটনা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। জানা গেছে, এই বিভাগ থেকে রেলের পাওয়ার কারে (ইঞ্জিন) তেল সরবরাহ করা হয়। এর দায়িত্ব মূলত দুজনের ডিপো ইনচার্জ সেলিম আহমেদ ও খায়রুল কবির বাশার। তেল ডিপোর চাবি তাদের কাছেই থাকে। সূত্র বলছে, সেলিম ও বাশার দুজনেই জড়িত আছে চক্রটির সাথে। এবিষয়ে বক্তব্য নিতে সরেজমিনে কয়েক দফা গিয়ে দেখা যায়, দপ্তর তালাবদ্ধ। এছাড়া সেলিম আহমেদ’র মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

খুলনা রেলওয়ে  এ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (এএমই) মো: আশরাফুজ্জামান খুলনাটাইমসকে জানান, ইতোমধ্যে বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তা (এটিও) মো: নাছির উদ্দিনকে প্রধান করে ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন বিভাগীয় রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) নাজমুল হাসান, এ্যাসিসট্যান্ট ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (এইই), এ্যাসিসট্যান্ট কমান্ডিং পাকশি (এসিআরএনবি) এমদাদুল হক ও এএমই খুলনা (আশরাফুজ্জামান) নিজে। আজ সোমবার (২২ অক্টোবর) সোমবার সকালে পাকশী রেলওয়ে কার্যালয়ে তদন্ত কমিটি কর্তৃক অভিযানের দিন রাতে ডিউটিরত সকলকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ আছে। প্রতিবেদন পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে বক্তব্য নিতে বিভাগীয় রেলওয়ের ডিআরএম এবং এটিও-কে বারংবার ফোন করা হলেও কোন প্রত্যুত্তর মেলেনি।

খুলনা রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগের কমান্ডিং ইনচার্জ (সিআই) রফিকুল ইসলাম খুলনাটাইমসকে বলেন, রেলওয়ের তেল সরবরাহকারি দুটি বিভাগে (ইলেকট্রিক ও লোকো শেড) কর্মরতদের সচেতনাই চুরি বন্ধ করতে যথেষ্ট। যেহেতু তারাই রেলের ইঞ্জিন ও পাওয়ার কারে তেল সরবরাহ কাজে নিয়োজিত। চাবি থাকে তাদের কাছে। তবে অন্যান্য বিভাগও এর দায় এড়াতে পারে না। তিনি জানান, নিরাপত্তা বিভাগের ৫০জন কর্মীর মূল দায়িত্ব ষ্টেশন ইয়ার্ড-জংশন এলাকায় রেলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ নিরাপদ রাখা ।

লোকো শেড বিভাগের লোকো ইনচার্জ বিজয় কুমার ঘোষ ও (এমআই) বিনয় ভূষণ হালদারকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতুত্তরে আসে, এবিষয়ে তার (বিনয়) কিছু জানা নেই। সেখানে লোকো শেডের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শেডম্যান মোল্যা জাকির হোসেন এবিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। অবশ্য তিনি জানান, লোকবলের সংকটের কারণে লোকো মাস্টার হয়েও শেডম্যানের দায়িত্বে আছেন।
এদিকে ‘রেলওয়ের তেল যে চুরি হয়, তাই না-কি জানা ছিল না! খুলনা রেলওয়ের লোকোশেড বিভাগের লোকো মাস্টার কেএম হামিদুল্লাহ খুলনাটাইমসকে এমনটাই বলেছেন। প্রায় নয় বছর ধরে তিনি এখানে কর্মরত আছেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এবারই প্রথম জানলেন। তার মতে, গোটা ষ্টেশন সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত, ফলে কোনভাবেই তেল চুরি সম্ভব নয়।

বলা বাহুল্য, একটি ট্রেন চালাতে একজন (ইঞ্জিন চালক) লোকো মাস্টার, একজন সহকারী লোকো মাস্টার এবং ট্রাফিক বিভাগের তিন/চারজন সহকারি হিসেবে থাকে। খুলনা রেলষ্টেশনে ইঞ্জিন চালক সর্বসাকুল্যে ৮৫জন। এরমধ্যে লোকো মাষ্টার ২৯জন, সাব ১৩জন এবং সহকারী লোকো মাস্টার ৪১জন। ডিউটি রোস্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত কাজি আমিনুল হক এসকল চালক দিয়ে ওয়াগণ ও রেলগাড়ি সচল রাখেন।

 

 

প্রসঙ্গত: গত ১৮ অক্টোবর রাতে সরকারি তেল চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে খুলনা রেলষ্টেশনের উত্তর পাশের্^ ইয়ার্ড (ওয়াশ ফিল্ড)’র দেয়াল ঘেষে গড়ে ওঠো ফাঁকা স্থানে র‌্যাব-৬ অভিযান চালায়। ঘটনাস্থল থেকে চোরাই কাজে ব্যবহৃত ১১০ফিট লম্বা প্লাস্টিক পাইপ, মই, ২৪৫ লিটার চোরাই ডিজেল ও ১২০ লিটার মবিলসহ স্থানীয় মেসার্স তিন্নি এন্টারপ্রাইজের ২ জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ৫নং ঘাট এলাকার মোতালেব হাওলাদারের ছেলে সজল হাওলাদার ও আব্দুল খালেকের পুত্র মো. মালেক। পরদিন ১৯ অক্টোবর রাতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান বাদী হয়ে খুলনা জিআরপি থানায় বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৭৯/৪১১/১০৯ ধারায় মামলা (নং ২) করেন।
অভিযানের সময় চোর চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে চক্রের সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে গ্রেফতারকৃত আসামীরা। তারা রেলের মবিল ও ডিজেল চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট পলাতক খুলনা রেলষ্টেশনের নিরাপত্তাকর্মী মাহমুদ ওরফে ট্যারা মাহমুদ, মোঃ শরীফুল, মোঃ মহিউদ্দিন, মোঃ আশরাফ আলী,মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদার এর নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং পলাতক আসামীরা রেলষ্টেশনের সরকারী কর্মচারী বলে জানায়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ, রেলষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার ও এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ফোরম্যান)’দের সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তেল চুরি হয়ে আসছে। রেল ষ্টেশন মাস্টারের অফিসের সামনে হতে ঘটনাস্থল দেখা যায়। পলাতক আসামীদের সহায়তায় ধৃত আসামীরা দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে রেলওয়ের সরকারী ডিজেল ও মবিল চুরি করে পাচার করছে। আর্থিকভাবে লাভবান হতেই আসামীরা একেঅপরের সহায়তায় বেআইনি পন্থায় এই অবৈধ কাজে লিপ্ত রয়েছে। যা বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৭৯/৪১১/১০৯ ধারা অপরাধ।

আরও জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় জাহাঙ্গীর ও মাহামুদ চক্রটিকে গ্রেফতার করতে পারছে না রেলওয়ের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় জিআরপি থানা, নৌ পুলিশ, রেলের নিরাপত্তা বাহিনী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আধাঁরে তারা রেলওয়ের তেল-মবিল এবং মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার গ্রেফতার না করায় প্রকাশ্যে ষ্টেশন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃত দোষীরা।

এ বিষয়ে র‌্যাবের স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান খুলনাটাইমসকে জানান, ‘গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব লোকের নাম পাওয়া গেছে তাদের গ্রেফতারে র‌্যাব চেষ্টা চালাচ্ছে। শীঘ্রই এ তেল চোর চক্রটির হোতারা ধরা পড়বে।’

এ বিষয়ে খুলনা রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) অফিসার ইনচার্জ ওসমান গণি পাঠান খুলনাটাইমসকে বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। পলাতক আসামী আটকের চেষ্টা চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাকে আইনের অওতায় আনা হবে। এছাড়া আমাদের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কেউ জড়িত আছে কিনা কিম্বা গাফিলতির আছে কিনা সেটাো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মামলার তদন্তের দায়িত্ব থাকা এস আই (নিরস্ত্র) মফিজুল হক খুলনাটাইমসকে বলেন, এখনও তদন্ত চলছে। তবে অচিরেই খোলাসা করা হবে।

জানা গেছে, ইঞ্জিন থেকে তেলের পাইপ নিতে স্টেশন এলাকার দেয়ালে ছিদ্র করা হয়েছে। সেখান থেকে তেল বের করে আনা হয়। আবার শেডগুলোতে যখন ট্রেন শান্টিং করা হয়, তখন ইঞ্জিন ও পাওয়ারকারে বিশেষ কায়দায় তেল রাখা হয়, যা পরে চোরাই পথে বিক্রি হয়ে যায়। আবার শেডের হিসাবের বাইরেও তেল জমা হয়, যা পরে মালবাহী কিংবা যাত্রীবাহী ইঞ্জিনে সরবরাহ করা হয়। এ তেল চুরির কাজে শেডের কর্মকর্তা এবং চালকরা উভয়ই আর্থিকভাবে লাভবান হয় বলেই তেল চুরির বন্ধ করা যাচ্ছেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তেল চুরি ঠেকাতে ইতিমধ্যে নতুন পন্থা ও নানা কৌশল নিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম রেলইঞ্জিন ক্যালিব্রেশন বা ক্যালিব্রেটেড। একটি ইঞ্জিন এক কিলোমিটার বা ১০ কিলোমিটার চলতে কতটুকু তেল লাগবে, তার হিসাব রাখা হবে এবং প্রতিটি তেল ট্যাঙ্কারের সঙ্গে স্কেল লাগানো থাকবে। এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে রেলের তেল চুরি শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে সংশ্নিষ্টরা আশা করছেন।

রেলওয়ে বিভাগ সূত্রমতে, সারাদেশে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ’ ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে দিনে গড়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ লিটার ডিজেল খরচ হয়। এ হিসাবে বছরে ব্যয় হয় ছয় কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার লিটার। কোনো কোনো বছর এর চেয়ে কম-বেশিও হয়। এই ব্যবহূত তেল থেকে বছরে চুরি হয়ে থাকে প্রায় দেড় কোটি লিটার; যার বাজারমূল্য ৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গড়ে প্রতিদিন চুরির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার লিটার। এর মধ্যে শুধু ইঞ্জিন ও পাওয়ারকার থেকে দিনে ২০ হাজার লিটার, ১১টি লোকোশেড থেকে প্রায় ১৫ হাজার লিটার এবং চলন্ত ট্রেন থেকে পাঁচ হাজার লিটার তেল চুরির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বছরে প্রায় এক কোটি টাকার ইঞ্জিন অয়েলও চুরি হয়। তেলের বাজারমূল্যের ওপরই চুরির অর্থ নির্ধারণ হয় এবং এর ভিত্তিতে তা ভাগবাটোয়ারা হয়।