খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে অনশন কর্মসূচি অব্যাহত

0
349

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাটকল শ্রমিকদের ডাকা আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে অন্তত ১৫ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলের শ্রমিকরা। মঙ্গলবার দুপুর তিনটা থেকে তারা অনশনে বসে। প্রচ- শীতে বুধবার সকালে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে হাসপাতালে নেয় সহকর্মীরা।
খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে এ কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা। ৯টি পাটকলের মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে দু’টি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো- ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দু’টি জুট মিল হলো- কার্পেটিং ও জেজেআই।
সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন জানান, শীত ও ক্ষুধায় কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে স্টার জুট মিলের শ্রমিক বাবুল ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক সুলতান বেশি অসুস্থ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে ঢাকায় মঙ্গলবার বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শ্রমিকরা অনশন অব্যাহত রেখেছেন। যতই কষ্ট হোক, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
তিনি আরও জানান, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের চারটি জুট মিলের শ্রমিকরা ক্রিসেন্ট গেটে অনশন মঞ্চে আসেন এবং অনশনে যোগ দেন। কাঁথা-বালিশ, লেপ, কম্বল নিয়ে অনশন পালনকারী শ্রমিকরা রাত যাপন করেছে রাস্তায়। শ্রমিকরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির টাকা দেওয়াসহ ১১ দফার দাবি জানিয়ে আসছি। দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও এ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ‘পাটকলের মালিক পরিষদের কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীর চক্রান্তের শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। যে কারণে পিছিয়ে পড়ছি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা যার যা কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছে। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয় তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চলবে।’
এদিকে আলীম ও ইষ্টার্ণ জুট মিলের যৌথ ভাবে ইষ্টার্ণ মিলের গেটের সামনে দুটি মিলের শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আমরণ গণঅনশণ শুরু করে। শ্রমিকরা রাতে শীতের মধ্যে এবং দিনের বেলায় রোদের মধ্যে টানা কর্মসুচিতে বহু শ্রমিক আসুস্থ হয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারী নেতা বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সরদার আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার মাগরিব পর্যন্ত আলীম জুট মিলের শ্রমিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইষ্টার্ণ জুট মিলের শ্রমিক কাওছার আলী, আব্দুল হামিদ, আ. আজিজ, আব্দুল কুদ্দুসকে ফুলতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং আলীম জুট মিলের শ্রমিক হাবিবুর রহমান, আ. করিম ও ইষ্টার্ণ জুট মিলের হাবিব, মো. ফরহাদ হোসেন, আকরাম হোসেন ও রকিবুল ইসলামকে অনশন স্থলের সেলাইন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ইষ্টার্ণ জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে আমরণ গণঅণশন চলাকালে বক্তৃতা করেন, আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু, বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সরদার আব্দুল হামিদ, আব্দুল হক মহলদার, হাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম, বদরউদ্দিন বিশ্বাস. জাকারিয়া, বাবুল হোসেন, মকবুল হোসেন, আলতাফ হোসেন, আমিনুল হোসেন, আবুল কালাম, ইষ্টার্ণ জুট মিলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ গাজী, মোজাম্মেল হক খান. মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়।