খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে অনশন অব্যাহত

0
212

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাটখাতে প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরী ও বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বিক্ষোভ ও প্রতিকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ- নন সিবিএ সংগ্রম পরিষদের ডাকে ২য় পর্যায়ে কর্মসূচির গতকাল সোমবার ২য় দিনে অব্যাহত রয়েছে।
খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচি পালন করে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ১৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে খালিশপুর জুট মিলের পাট বিভাগের সরদার আঃ গনিকে (৫৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনশনস্থলে শতাধিক শ্রমিককে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ১০ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকরা। অনশনের ৪র্থ দিন ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে কর্মসূচি ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করে আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে ১৫ ডিসেম্বর বিজেএমসিতে ও ২৬ ডিসেম্বর শ্রম মন্ত্রনালয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে দাবির ব্যাপারে কোন সমাধান না হওয়ায় আবারও অনশন কর্মসূচির ডাক দেয় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। ২৮ ডিসেস্বের খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শ্রমিক সভার মাধ্যমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষনা করেন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
সেই কর্মসূচি অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় খালিশপুর শিল্প এলাকার বিআইডিসি রোডে ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্পেটিং, জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন কর্মসূচি করে। শীতের মধ্যে সারা রাত খোলা আকাশের নীচে কাটিয়ে শ্রমিকরা গতকাল সোমবার ২য় দিনেও অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টায় অনশনে অংশ নেয়া খালিশপুর জুট মিলের পাট বিভাগের সরদার গনি মিয়া অনশনরত স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে শ্রমিকরা তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এছাড়া এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়া প্লাটিনাম, ষ্টার ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রায় ১৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে।
কর্মসূচি চলাকালে খালিশপুর, আটরা ও রাজঘাট এলাকায় দফায় দফায় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। “দুনিয়ার মজদুর একহও, ১১ দফার ভিক্তিতে লড়তে হবে একসাথে, আমাদের দাবি আমাদের দবি, মানতে হবে মেনে নাও! “শ্রমিকদের এই বুক ফাটা শ্লোগানে ভারী হয়ে ওঠে গোটা শিল্পাঞ্চলসহ আশপাশ এলাকা।
শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শ্রমিক নেতা কাওসার আলী মৃধা, মোঃ খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার,মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ আবু হানিফ, সাহাজান সিরাজ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মিন্টু মিয়া, ষ্টার জুট মিলের আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে জোর আহবান জানান।
সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন জানান, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের চারটি জুট মিলের শ্রমিকরা ক্রিসেন্ট গেটে অনশন মঞ্চে আসেন এবং অনশনে যোগ দেন। কাঁথা-বালিশ, লেপ, কম্বল নিয়ে অনশন পালনকারী শ্রমিকরা রাত যাপন করেছে রাস্তায়। শ্রমিকরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির টাকা দেওয়াসহ ১১ দফার দাবি জানিয়ে আসছি। দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও এ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ‘পাটকলের মালিক পরিষদের কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীর চক্রান্তের শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। যে কারণে পিছিয়ে পড়ছি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা যার যা কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছে। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয় তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চলবে।’