খুলনা-যশোর অঞ্চলের আট পাটকলে প্রায় ৫শ’ টন পাট পণ্য অনুৎপাদিত

0
760

এম জে ফরাজী, খুলনাটাইমস:
শ্রমিক আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে খুলনাঞ্চলের মিলগুলোর উৎপাদন। মজুরী কমিশন বাস্তাবায়ন, শ্রমিকদের সপ্তাহিক বকেয়া মজুরীর দাবীতে গত ২৮ ডিসেম্বর খুলনার ৮টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মিল বন্ধ থাকায় খুলনার আট পাটকলে ৪৭৯৭ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর ফলে মিল সংশ্লিষ্ঠ এলকার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দা ভাব বিরাজ করছে। মিলগুলোর মধ্যে শিল্পাঞ্চল খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, প্লাটিনাম জুবিলী, দৌলতপুর জুট মিল, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার ইর্ষ্টান, আলিম এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলকার জেজেআই জুট মিল।
মিলগুলিতে শ্রমিক অসোন্তষ ও আন্দোলনের কারণ হিসেবে জানা গেছে, মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন, প্রত্যেক মিলে বকেয় মজুরী, ২০% মহার্ঘ ভাতা, ৫০২ নং সার্কুলার অনুযায়ী মজুরী প্রদান, খালিশপুর, দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকদের স্থায়ীকরাসহ ১১টি দাবী রয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খুলনাসহ দেশের ২৩টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলন চলাকালে শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করতে ব্যর্থ হয় বিজেএমসি। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা ২৮ ডিসেম্বর মিলের চাকা বন্ধ করে দিয়ে জোরে সোরে আন্দোলনে নামে। মিল সুত্রে জানাগেছে, খালিশপুর জুট মিলে ৫ সপ্তাহের বকেয়া মজুরীর ৩ কোটি টাকা, দৌলতপুর জুট মিলে ৫ সপ্তাহের ১ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট মিলে ৮ সপ্তাহের মজুরীর ১২ কোটি টাকা, প্লাটিনাম মিলে ৮ সপ্তাহের মজুরীর প্রায় সাড়ে ১০ কোটি, স্টার জুট মিলে ৫ সপ্তাহের বকেয়া মজুরীর ২ কোটি ৭৫ লক্ষ, জেজেআই জুট মিলে ১১ সপ্তাহে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ, আলিম জুট মিলে ৮, সপ্তাহে ১ কোটি ৯২ লক্ষ, এবং ইষ্টার্ন জুট মিলে ৬ সপ্তাহের মজুরীর ২ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করতে পারছেনা। শ্রমিকরাও উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, সকল বকেয়া মজুরী এককালীন পরিশোধ করা না হলে তারা কাজে যোগদান করবেনা বলে সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। মিলগুলি চালু করতে বিজেএমসি থেকে কোন জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শ্রমিকদের হাতে টাকা না থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মিল সংশ্লিষ্ঠ এলাকা গুলিতে। মিল বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক রিক্সা, ভ্যান চালাচ্ছে। অনেক শ্রমিক বাড়ি চলে গেছে। যার কারনে এসব এলাকার হাট বাজার, হোটেল, রেস্তোরা, চা পান মুদি দোকানসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দা ভাব বিরাজ করছে।
মিলগুলোর উৎপাদন টার্গেট হিসেবে ক্রিসেন্ট জুট মিলে দৈনিক উৎপাদন গড় ৭০ থেকে ৭২ টন, প্লাটিনাম মিলে ৬০ টন, জেজেআই মিলে ৩০ টন, ইর্ষ্টান মিলে ১৬ টন, আলিমে ১১ টন, স্টার মিলে ৪০ টন, দৌলতপুর মিলে ১৫ টন এবং খালিশপুর জুট মিলে ৪০ টন পাটজাত পন্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিজেএমসির একটি নির্ভর সুত্রে জানাগেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করায় সপ্তাহিক ছুটি ব্যাতিত ১৭ দিন মিলের উৎপাদন বন্ধ। মিল বন্ধ থাকায় খুলনার ৮ পাটকলে ৪৭৯৪ টন পাটজাত পন্য ঘাটতি হয়েছে। যার বাজার দর প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
এদিকে ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসুচির অংশ হিসেবে বুধবার পাটকলের শ্রমিকরা লাল পতাকা মিছিল বের করে। মিছিলটি শিল্পাঞ্চলের ও খুলনার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে স্ব-স্ব মিলে গেটে এসে সভার মধ্যে শেষ হয়। সভায় আজ লাঠি মিছিলসহ পরবর্তী কর্মসূচির জন্য শ্রমিকদের নির্দেশ দেন শ্রমিক নেতারা।
#