খুলনা মহানগর শ্রমিকলীগে অস্থিরতা : একের কারসাজিতেই অন্যকে বহিষ্কারের অভিযোগ!

0
1633

সুমন আহমেদ: খুলনা মহানগর শ্রমিকলীগের অর্ভ্যন্তরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অভিযাগ উঠেছে একের ষড়যন্ত্রে অন্যকে বহিষ্কারের সুপারিশ করার। আবার সুপারিশ করার নেপথ্যে প্রতিহিংসা ও আর্থিক বাণিজ্য রয়েছে বলে অভিযোগও উঠেছে। একইসাথে নিয়ম বর্হিভূতভাবেই কেন্দ্রে বহিষ্কারের সুপারিশের প্রস্তাব এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও উঠেছে নগর শ্রমিকলীগ শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে। সদ্য শ্রমিকদল হতে শ্রমিকলীগে যোগদান করা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন এই কারসাজির মূল কারিগর। সে শ্রমিকলীগ শীর্ষ দুই নেতাকে ম্যানেজ করেই এই বহিষ্কারাদেশের প্রস্তাব করা হয়েছে। মহানগর শ্রমিক লীগের সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ ইলিয়াছ হোসেন সোহেল লিখিতভাবে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি/সম্পদকের কাছে এসব অভিযোগ দেন। অবশ্য নগর শ্রমিকলীগ বলছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব’র কারসাজিতেই মহানগর শ্রমিক লীগের সহ-সাধারন সম্পাদক পদ হতে মোঃ ইলিয়াছ হোসেন সোহেলকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একারণেই চলতি বছরের গত ২৪ শে জুন প্রকাশিত স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকার নিউজ কার্টিং সহ কেন্দ্রে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ পাঠান মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম মোল্যা ও সাধারন সম্পাদক রণজিৎ কুমার ঘোষ।
এরপর ৩০ জুন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি/সম্পাদক এর কাছে নগর শ্রমিকলীগের সভাপতি/ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন সোহেল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও খুলনার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ মোট ১৩ জনকে ওই অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়।

খুলনাটাইমসকে এর কাছে সোহেল জানান, নগর শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদককে মুঠোফোনে কমিটি থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” তুই ব্যাক্তিলীগ করিস, তাই তোকে বহিষ্কার করেছি, পারলে কিছু করিস”। অনুরূপভাবে নগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম মোল্যাকে বললে তিনিও বলেন, বহিষ্কার করেছি তো বেশ করেছি।

সোহেল অভিযোগ তোলেন, খুলনা মহানগর জাতীয় শ্রমিকলীগের সহ-সাধারন সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ইলিয়াছ হোসেন সোহেলকে বিনা তলবে ও নোটিশে ছাড়া, প্রতিহিংসা এবং অর্থের লোভে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এটা একটা সাংগঠনিক বানিজ্য। অর্থের বিনিময়ে একজনের পরিবর্তে অন্যজনকে পদমর্যাদায় ভূষিত করাই কিছু ব্যাক্তির মূল লক্ষ্য।
তার মতে, ” সংগঠনের এমন কোন নীতি নাই যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সকল সমস্যার সমাধান করবে, তাহলে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দরকার হয় না”। খুলনা মহানগর শ্রমিকলীগের কার্যনির্বাহী কোন মিটিং থাকলে তাকে জানানো হয় না এবং তারা কোন সাংগঠনিক নিয়ম ও মানেন না। প্রসঙ্গত: খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন এই শ্রমিক লীগ নেতা।
সোহেল আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কিছু অনুপ্রবেশকারী খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে তার নামে মিথ্যা মামলা ও ষড়যন্ত্র করেই চলেছে যা আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের অনেক নেতৃবৃন্দ অবগত। আমার জীবদ্দশায় মাদক ব্যাবসায় লিপ্ত হই নাই। আমার অপরাধ সুধু সাংসদ মিজানুর রহমান মিজান ও কেসিসির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া। সংগঠনের ভিতর এহেন কর্মকান্ড চলতে লাগলে ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলের উপর হতে আস্থা হারাবে।

জাতীয় শ্রমিকলীগ – কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ (মিলন) খুলনাটাইমসকে বলেন “এটি সম্পূর্ণ সভাপতি ও সেক্রেটারির পছন্দ ও অপছন্দের ব্যাপার। সোহেলের সঙ্গে সভাপতি ও সেক্রেটারির কিছুটা দুরত্ব তৈরী হয়েছে, সে কারনে তারা এই বহিষ্কারের প্রস্তাব করেছে, এমন অভিমত পোষণ করেন। তবে এটা নিশ্চিত করেন, কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হলেই সোহেল বহিষ্কৃত হবেন, অন্যথায় না।
এই কেন্দ্রীয় নেতা আরও বলেন “তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া কাউকে বহিষ্কার করতে হলে অভিযোগ উত্থাপন করে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে এক্ষেত্রে করা হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট বিষয়টি কতটা গ্রহণযোগ্য, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ” আমি এই সংগঠনে ২৫ বছর ধরে আছি। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি কারো বহিষ্কারের অনুমোদন দিয়েছে , এমন টি আমার চোখে পড়ে নাই। কারো বহিষ্কারের সুপারিশ করা হলে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়।

মহানগর শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ কুমার ঘোষ খুলনাটাইমসকে বলেন, মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগেই সংগঠনের দুই নেতা ভাসান মোল্লা ও ইলিয়াস হোসেন সোহেলকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়। তাছাড়া কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়। আর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল মাদকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের বহিষ্কার। এখানে কোনরুপ স্বেচ্ছাচারিতা ও আর্থিক বাণিজ্য হয়নি।

মাদকের তালিকায় জাকির হোসেন বিপ্লবের নাম থাকলেও কেন তার বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?

এমন প্রশ্নে শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিপ্লবের প্রতিবাদ করার সৎ সাহস আছে, ইতোপূর্বে সে মানববন্ধন করেছে। তবে সোহেল ও ভাসান মোল্লার এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেনি, যা দোষী বলেই প্রমাণ দেয়।

খুলনাটাইমস’র এই প্রতিবেদক মহানগর শ্রমিকলীগ নেতা ও মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লবকে তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, আমি সংগঠনের একজন সদস্য। আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই। আর বহিষ্কারাদেশের সিদ্ধান্ত সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের। সেখানেতো প্রভাবিত করার প্রশ্নই আসেনা।