খুলনা মহানগর এলাকায় সুপেয় পানি সমস্যা সমাধান সময়ের দাবী

0
156
????????????????????????????????????

খুলনা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ২৯ মে শনিবার বেলা ১১টায় খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটির আয়োজনে খুলনা মহানগর এলাকায় সুপেয় পানি সমস্যা সমাধানের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ, জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম, ঐতিহ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা)-সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগের এই সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক এড. কুদরত-ই-খুদা। সার্বিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের অন্যতম সদস্য গৌরাঙ্গ নন্দী।

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আহ্বায়ক নাজমুল আযম ডেভিড। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑএড. এনায়েত আলী, প্রফেসর ড. ইয়াহিয়া আখতার, সাংবাদিক এম এম জাহিদ হোসেন, নারী নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ, অজন্তা দাশ, মাহফুজুর রহমান মুকুল, সিপিবি কেন্দ্রীয় সদস্য এস এ রশীদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মনিরুল হক বাচ্চু, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা সভাপতি কোহিনুর আক্তার কণা, নাগরিক নেতা এড. জাহাঙ্গীর আলম, আফজাল হোসেন রাজু, কাজী খালিদ পাশা জয়, শিরিন আক্তার, সাংস্কৃতিক আকবর হোসেন প্রমুখ। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রভাবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী খুলনার অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে সুপেয় পানি প্রাপ্যতা। ১৮ লাখ মানুষের ৪৬ বর্গ-কিলোমিটারের খুলনা মহানগরীতে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়।

বিভিন্ন স্থানে দিনরাত পাম্প চালিয়েও পানি উঠছে না। যাদের বাড়িতে নলকূপ আছে তারাও খাবার পানি পাচ্ছেন না। তারাও ছুটছেন খাবার পানির সন্ধানে। যাদের টাকা আছে তারা ডিপ-টিউবঅয়েলের সাথে সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে, এর অন্যতম কারণ নিয়ন্ত্রণহীন ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন। এ বছর মে মাসে কোথাও কোথাও তা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ ফুটে নেমেছে। শহর হিসেবে খুলনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে বসতি বেড়েছে। যার ফলে ৪৬ বর্গ কিলোমিটারের খুলনা শহরের ভূমির চাহিদা মেটাতে ১০ বছরে সুপেয় পানির অন্যতম আঁধার পুকুরগুলি ভরাট হয়েছে, দখল-দূষণের শিকার হয়েছে ময়ূর নদ। গড়ে উঠেছে সুরম্য অট্টালিকা। ফলে আবাসিকের পানির চাহিদাসহ পানির বহুমুখী চাহিদা বাড়তে থাকে। খুলনা মহানগরীতে ২০১৬ সালে গ্রাহক ছিল ১৭ হাজার এবং এখন প্রায় ৩৭ হাজার ৩০০ জন। গত চার বছরে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার। ৩১টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন-কেসিসি’র নাগরিকদের পানির সমস্যা সমাধানে খুলনা ওয়াসা ছিল খুলনাবাসীর প্রাণের দাবি।

খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। এ অবস্থায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে ২০১৩ সালে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকায় “খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প” নামে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা ওয়াসা। অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) নিজস্ব তহবিল হতে ৭৫০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ঋণ প্রদান করে এডিবি ৫২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও জাইকা ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহের পর তা পরিশোধনের মাধ্যমে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি যে, খুলনা ওয়াসা-র এই প্রকল্প আমাদের আশাহত করেছে। এই প্রকল্প যথেষ্ট মাত্রায় পানি সরবরাহ করতে পারছে না, উপরন্তু শুষ্ক মৌসুমে নোনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করছে। বর্তমানে ওয়াসার চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

নগরীর ১৫ লাখ মানুষের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। প্রকল্পের ্অধিনে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দ্বারা ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা সম্ভব। কিন্তু গত ৪ মে ২০২০ পরিশোধন কেন্দ্রের রিজার্ভার থেকে তিন কোটি ৪৯ লাখ লিটার সরবরাহ করা হয়েছে এবং নলকূপ থেকে দুই কোটি ৫৮ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। তাহলে ঐ দিনে ওয়াসা মধুমতি ও নলকূপ দিয়ে নগরীতে মোট ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। খুলনা শহরের মোট হাউজহোল্ড হচ্ছে ৭০,১৫০টি। প্রকল্পের অধীনে ৪৫ হাজার বাড়ির পানির চাহিদা মেটানোর কথা বলা হলেও বর্তমানে পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হয়েছে৩৬,০০০ বাড়িতে। তাহলে বাকি ৩৪ হাজার ১৫০ হাউজহোল্ডের প্রয়োজনীয় ১৮ কোটি ৩ লক্ষ লিটার পানির সরবরাহ সংকট থেকেই যাচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় খুলনা নগরীতে প্রতিদিন ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভূগর্ভস্থ পানি উঠছে ২২ কোটি লিটার। ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকায় “খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প” বর্তমানে মাত্র তিন কোটি ৪৯ লাখ ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করে। কিন্তু ওয়াসার কি-পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) অনুযায়ী ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করার হার নির্ধারণ করা হয় ২০১৭-১৮ সালে ৪%, ২০১৮-১৯ সালে ৪৮% এবং ২০১৯-২০ সালে ৬৫%। এই ইন্ডিকেটরগুলোর সাথে বাস্তবের যে কোন মিল নেই, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ও মধুমতি নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ওয়াসা নগরবাসীকে মানসম্মত পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে।

মার্চ ২০১১ সালে জাইকা’র ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিল এনজেএস কনসালটেন্ট কোং লিমিটেড; সেখানে ওয়াসা কর্তৃক সম্পাদিত একটি স্টাডির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, যে এলাকায় এই স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে সেখানের পানিতে ক্লোরাইডের উচ্চ মাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথাগত শোধনের মাধ্যমে পানিতে বিদ্যমান ভারী ধাতু অপসারণ করা যাবে না। পরিশোধন কেন্দ্রে নদীর পানির ময়লা-দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলেও রাখা হয়নি লবণাক্ততা শোধনের কোনো ব্যবস্থা। প্রকল্পের অধিনে ১.২৫এমএলডি, ৫.৫ এমএলডি এবং ১০০ এমএলডি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-এর কথা বলা হয়েছে।

এই ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কি লবন পানি শোধন করতে পারে? লিখিত বক্তব্যে খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে শুষ্ক মৌসূমে মধুমতি নদীর ঐ স্থানে নোনা পানি থাকবে তা বিবেচনা না করে এ ধরনের অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, বর্তমানে খুলনা নগরীর ৬০ শতাংশ পানি বিভিন্নভাবে ভূ-গর্ভস্থ থেকে তোলা হচ্ছে তা অপচয় না করে শুধুমাত্র পানের জন্য সুনির্দিষ্ট করা এবং তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত, পানির চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদিতভাবে/ব্যবসায়িক কাজে/ভবন নির্মাণের কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বন্ধ, বহুতল ভবনে ব্যবহৃত উৎপাদক নলকূপের ওপর বেশি করে কর ধার্য্য, পানির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য ওয়াটার রেগুলেটরি কমিশন গঠন, সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে বিধি-নিষেধ আরোপ, খুলনা ওয়াসা দুটি পানির লাইন তথা একটি খাবার পানি অন্যটি গৃহস্থলী কাজে ব্যবহারের পানি স্থাপনের পরিকল্পনা করে খাবার পানির সংকট কমিয়ে আনার ব্যবস্থা অন্যথায় শতভাগ খাবার পানি নিশ্চয়তার দাবি জানানো হয়।খবর বিজ্ঞপ্তি

খুলনা টাইমস/এমআইআর