খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রহস্যজনক

0
960

ফুলবাড়ীগেট (খুলনা) প্রতিনিধি:
খুলনা সহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের আস্থা, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান খুলনার শিরোমণি বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে এক মাদকসেবী, নারীলোভী গ্রাস করেছে। হাসপাতালের নীতিমালা লঙ্ঘন করে সম্প্রতি পদন্নতিপ্রাপ্ত হাসপতালের এ্যাডমিনিস্ট্রেটর(সিসি) মাহমুদুল হাসান তারিফের বিরুদ্ধে মাদকসেবন, নারীকেলেঙ্কারী, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে হাসপাতালের কর্মরত প্রায় সকল ডাক্তার-ষ্টাফ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একাধিক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রহস্যময় ভূমিকায় রয়েছে। তবে হাসপাতালের একটি সুত্র বলছে, আর্থিক লেনদেন অথবা বড় ধরনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে মাহমুদুলের বিরুদ্ধে কোন অপরাধই আমলে নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। তবে মাহমুদুল হাসান তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন।
খুলনার ঐতিহ্যবাহী শিরোমণির বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এমন কখন পড়েনি। দীর্ঘদিনের সুনাম কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতমূলক আবস্থানে ধ্বংশ হতে চলেছে। হাসপাতালের সম্প্রতি পদন্নতিপ্রাপ্ত এ্যাডমিনিস্ট্রেটর(সিসি) মাহমুদুল হাসান তারিফ গত ১০ জুন ফেন্সিডিল সহ আটক হওয়ার পর দীর্ঘদিনের চাপা থাকা বিভিন্ন কাহিনী প্রকাশ করে মুখ খুলতে শুরু করে হাসপাতালের ষ্টাফরা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, সাবেক পরিচালক ডাঃ বাহাউদ্দিনের পরিবারের সাথে ঘনিষ্টতার সুত্র ধরে ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের ডাটা ম্যানেজমেন্ট একি্রাকিউটিভ হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন মাহমুদুল। কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুত্রে পদন্নতি পেতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে । প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ডাক্তার- অফিসার-ষ্টাফ কেহ পদন্নতির মুখ না দেখলেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে দু’দফা পদন্নতি হয়েছে মাহমুদুলের। তাকে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর পদন্নতি দিয়ে করা হয় এ্যাসিসটেন্ট অফিস মনিটরিং একি্রাকিউটিভ। এর মাত্র দুই বছরের মধ্যে সম্পুন্ন নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুনরায় আবারও তাকে গত বছরের ২৫ নভেম্বর পদন্নতি দিয়ে এ্যাডমিনিস্ট্রেটর(সিসি) করা হয়। পদন্নতি পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাদকসেবন, নারী ষ্টাফদের অবৈধ প্রস্তাব এবং প্রতিষ্ঠানের ৮/৯ জনকে সুকৌশলে চাকুরীচ্যুত করার লিখিত অভিযোগ রয়েছে।
মাহমুদুল ফেন্সিডিল সহ আটকের পর হাসপাতালের ডাক্তার-ষ্টাফ ম্যানিজিং কমিটির কাছে তার বিরুদ্ধে মাদকসেবন, মাদক ব্যবসা, নারী ঘটিত বিষয়ে, এমন কি তার সাথে বেডে না যাওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ এনে চাকুরী থেকে তাড়ানোর মতো গুরুতর অপরাধের লিখিত অভিযোগ করেন। কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগের পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় হাসপাতালের সুনাম ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে সর্বস্থরের ডাক্তার-ষ্টাফ সেবা কার্যক্রম চালু রেখে দুই দফার দাবীতে আন্দোলন শুরু করে।
অভিযোগ আছে মাহমুদুল হাসান কর্তৃপক্ষকে ভূল বুঝিয়ে হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের এ্যসিসটেন্ট সার্জন ডাঃ মুইজ, ফিনান্স অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম, ড্রাাইভার মোঃ হালিম শেখ, মিজান শেখ, ওয়ার্ড এ্যাসিসটেন্ট শারমিন সুলতানা, ইলেক্ট্রিশিয়ান হান্নান খান, ক্লিনার মাসুদ, রুবেলকে চাপ প্রয়োগ অথবা সুকৌশলে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে চাকুরী থেকে বের করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ডাঃ মুইজ মুঠোফোনে বলেন, মাহমুদুলের বিষয়টি সবাই জানে এ বিষয়য়ে আমার কোন মন্তব্য নাই। তবে আমি পিজি থেকে পোষ্টগ্রাজুয়েশন শেষ করে পদন্নতির জন্য আমাকে মাধ্যম হিসাবে মাহমুদুল তাকে দেখাতে বলা হলো। এ বিষয়টি নিয়ে এবং ইতি নামের একটি কাউন্সিলরকে বের করে দিতে আমার সহযোগিতা চাইলে আমি না করায় সে আমার এবং অন্য একটি বিষয়ে ডাঃ ব্এিম সাইফুর রহমানকে ষ্টাফদের সামনে চাকুরী খাওয়ার হুমকি প্রদান করে। তিনি প্রতিষ্ঠানের যে ব্যক্তি তার মনোভুত নয় এমন ব্যক্তিদেরকে তিনি মেন্টালি চাপে রাখেন সব সময়। ডাঃ মুইজ বলেন পরিচালকের গাড়ীতে সিনিয়র ডাক্তারদের পরিবর্তে একজন কর্মকর্তাকে লিফট দেওয়া হয় সেখানে আমি নিজের সম্মান বাচাতে মনের কষ্টে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চোখের পানি ফেলে চলে এসেিেছ । তিনি ডাঃ বিএম সাইফুর রহমান সম্পর্কে বলেন তার মতো ডাক্তার খুলনায় খুবই কম আছে। তিনি একদিনে যত গুলো সেনসেটিভ অপরেশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন তা খুলনায় দ্বিতীয় কোন ডাক্তার করেন বলে আমার জানা নাই। প্রতিষ্ঠান থেকে সে চলে গেলে এই হাসপাতাল ঢুবতে দুই ঘন্টা সময় লাগবে না। এদিকে হাসপাতালের রেটিনা বিভাগ সুত্রে জানাগেছে ডাক্তার মুইজকে সরানোর পর হাসপাতালের ঐ বিভাগের প্রতি মাসে গড়ে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় কমেছে।
হাসপাতালের মহিলা ষ্টাফকে প্রমোশনের প্রলোভন দিয়ে তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ ব্যাপারে তার স্বামী মোঃ অহিদুল ইসলাম ম্যানিজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাতকারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এ ব্যাপারে অহিদুল মুঠোফোনে বলেন আমাদের সাজানো সুখের সংসারে মাহমুদুল কাটা হয়ে আমার স্ত্রীর সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বিষয়টি আমার কাছে ধরা পড়ার পর শুধুমাত্র আমার দশ বছরের একটি কন্যা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে সব কিছু সুধরাতে বলি কিন্তু সে ভালো না হয়ে আমাকে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেওয়ায় আমি তাকে ডির্ফোস দিয়ে জীবন বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে চলে যাই।
হাসপাতালের অপর এক মহিলা ষ্টাফ মাহমুদুলের অবৈধ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাকুরী থেকে বের করে দেয়। এ ব্যাপারে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাকে বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন ধরণের ইঙ্গিত করতেন তার ইঙ্গিতে সাড়া না দেওয়ায় আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জোরপূর্বক চাকুরী থেকে বিদায় করা হয়েছে।
হাসপাতালের একটি সুত্র জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন ষ্টাফ এবং অফিস তার কাছে প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকা পাবেন।
অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান তারিফ বলেন সবই সাজানো নাটক। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আব্দুল মান্নান বলেন, আমি মাত্র কয়েক মাস হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে এসেছি। মাহমুদুলের পদন্নতি সহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে হাসপাতালের ডাক্তার-ষ্টাফরা আন্দোলন করছে এটাতো আপরা দেখছেন।
হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, প্রতিষ্ঠানের সর্বস্থরের জনবল, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, এলাকার জনপ্রাতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের একমত পোষণ করা মাহমুদুল হাসান এবং অদক্ষ পরিচালকের অপসারণের দাবীর প্রতি কোন কর্ণপাত না করায় হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ শরফুদ্দিনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ সকল ব্যক্তিবর্গ হাসপাতালকে সুষ্ট ও সুন্দর ভাবে পরিচালনায় এবং প্রতিষ্ঠানকে মাদক ও যৌন নিপিড়ন মুক্ত করতে চেয়ারম্যান ও পরিচালকের অপসারণের দাবীতে দুই দফা মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে।