খুলনা প্রেস ক্লাবে মায়ের সংবাদ সম্মেলন ফুলতলায় শিশু ইয়াসিন হত্যার অধিকতর তদন্তের দাবি

0
505

বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা:
খুলনার ফুলতলায় চাঞ্চল্যকর শিশু মোঃ ইয়াসিন আরাফাত হত্যা মামলাটি অতীব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তার মা সাহানা বেগম। গতকাল বুধবার খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফুলতলা উপজেলার খানজাহানপুর গ্রামের তিনি এ দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি একজন নিঃসন্তান মহিলা। মা ডাক শোনার জন্য ৯ বছর আগে যশোর জেলার মণিরামপুর এলাকা থেকে তিন দিনের শিশু মোঃ ইয়াসিন আরাফাতকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করি এবং মায়ের আদর, ¯েœহ, ভালোবাসায় লালন-পালন করতে থাকি। কিছুটা বড় হওয়ার পর ইয়াসিনকে ফুলতলার পায়গ্রাম কসবা কাজী আবু মুকরাম ফজলুল বারী মাদ্রাসায় ভর্তি করি। আমার ছেলে লেখাপড়ায় সব সময়ই ভালো ছিলো। এ বছর সে ৪র্থ শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। এ অবস্থায় আমারও বয়স হয়েছে এই চিন্তায় আমার ছেলের নামে দেড় বিঘা সম্পত্তি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আর এই সিদ্ধান্ত নেয়াই আমার ছেলের জন্য কাল হয়েছে। প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর বিশ্বাস আমার এ সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। কারণ আমি নিঃসন্তান থাকায় জাহাঙ্গীর বিশ্বাস আমাদের সম্পত্তি পাবেন বলে আশা করেছিলেন। আর এ কারণে আমার ছেলে ইয়াসিনকে প্রায়ই মারধর করতেন। আমার ছেলেকে হত্যার এক সপ্তাহ আগেও জাহাঙ্গীর বিশ্বাস ইয়াছিনকে বেধরক মারপিট করে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছিলো। আর জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের ছেলে সাজ্জাদুর রহমান রাজ (১৫) খেলাধুলার নামে আমার ছেলেকে মারধর করতো। আমি প্রতিবাদ করলেও জাহাঙ্গীর বিশ্বাস তার ছেলেকে উৎসাহ দিতো। গত ৫ মে ২০১৯ ইং তারিখ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইয়াসিন আরাফাতকে সাথে নিয়ে সাজ্জাদুর রহমান রাজ অন্যান্যরা বাড়ীর পাশে ভৈরব নদের জাহাঙ্গীরের চরে গোসল করার উদ্দেশ্যে যায়। এরপর সকলেই ফিরে আসলেও ইয়াসিন আরাফাত ফিরে আসেনি। সারাদিন বিভিন্নস্থানে খোঁজ খবর না পেয়ে থানায় জিডিসহ এলাকায় মাইকিং করা হয়। কিন্তু ইয়াসিনের খোঁজ মেলেনি। ওই বিকালে আমার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের ছেলে সাজ্জাদুর রহমান রাজ তার বোন হালিমার সাথে ঢাকায় চলে যায়। পরের দিন ৬ মে সকাল ৮টার দিকে জাহাঙ্গীরের চরে খুটিতে বাঁধা অবস্থায় আমার ছেলে ইয়াসিন আরাফাতের লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশী তদন্তে বেরিয়ে আসে যে জাহাঙ্গীরের ছেলে সাজ্জাদুর রহমান রাজ নদীতে জোয়ারের সময় ইয়াসিনকে ঢুবিয়ে জাল বাধাঁর খুটিতে বেধে রাখে যাতে সে উপরে উঠতে না পারে। এ ভাবেই ইয়াসিনকে হত্যা করা হয়। ৬ মে গভীর রাতে সাজ্জাদুর রহমানকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ছেলের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর আমি পাগল প্রায় হয়ে পড়ি। সারাদিন প্রলাপ বকতে থাকি। অসুস্থ হয়ে পরি। এ অবস্থায় থানা থেকে পুলিশ এসে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়। পরে জানতে পারি আমাকে বাদী করে ইয়াসিন হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবং এজাহারে অনেক তথ্যই উল্লেখ করা হয়নি। যা উল্লেখ করা অতীব প্রয়োজন ছিলো। যেমন- এজাহারে জমাজমির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি, ইয়াছিন নিখোঁজ হওয়ার পর জাহাঙ্গীরের ছেলে সাজ্জাদুর রহমান রাজকে সু-কৌশলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও ইয়াছিন হত্যা নিয়ে রহস্য আরো জটিল হয়ে উঠেছে। তার কারণ ভৈরব নদের জাহাঙ্গীরের চরে ইয়াছিন ও অন্যান্যরা যখন গোসল করতে যায় তখন জোয়ার ছিলো। ইয়াছিনের খোজে জোয়ার ও ভাটার সময় ওই স্থানে একাধিকবার যাওয়া হয়েছে। কিন্তু বাশেঁর খুটিতে লাশ বাধা দেখা যায়নি। জাহাঙ্গীরের চরে জোয়ারের সময় ১০ হাত পানি বৃদ্ধি পায় এবং ভাটার সময় পানি নীচে নেমে যায়। ৫ মে সারাদিন ভাটার সময় ওই চরে বহুবার ইয়াছিনকে খোজা হয়েছে। কিন্তু তার কোন চি‎হ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রায় ২৪ ঘন্টা লাশ পানিতে রাখা হলে লাশ ফুলে ফেপে উঠতো। কিন্তু লাশ পাওয়া গেছে তরতাজা। এখান থেকে আমাদের সন্দেহ ‘ইয়াছিনকে গুম করে ভোর রাতে কোন একটা সময় হত্যা করা হয়েছে। আর সম্পত্তির লোভে এ ঘটনা ঘটিয়েছে জাহাঙ্গীর বিশ্বাস’। অথচ এজাহারে তার নাম আসেনি। আমরা তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ করবো মামলাটি অতীব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার জন্য। পুলিশ আন্তরিক হলে হত্যার রহস্য খুব শীঘ্রই বেরিয়ে আসবে। আর আমি ন্যায় বিচার পাব।