খুলনা জেনারেল হাসপাতালে কতিপয় চিকিৎসকদের সখ্যতায় ওষুধ প্রতিনিধিরা বেপরোয়া!

0
243

# বহি: বিভাগ ও জরুরি বিভাগ দখলে!
# চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ক্ষোভ বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল। সকাল থেকেই তারা হাসপাতালের বহি: বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনে এবং চিকিৎসকদের চেম্বারে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন। কথিত রয়েছে হাসপাতালে কতিপয় চিকিৎসকদের সাথে গভীর সখ্যতা থাকায় দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ওষুধ প্রতিনিধিরা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে দল বেধে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভরা শুরু করেন টানাটানি। একজনের ছবি তোলা শেষ হলে আরেক রোগীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছবি তোলেন। এরকম আচরণে তাদের সাথে রোগীদের প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা ঘটনা ঘটেই চলেছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে নিয়মনীতি তোয়াক্কা করেন না। হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসকদের সাথে গভীর সখ্যতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে গেলে উল্টো তাদেরকে রিপ্রেজেন্টেটিরা ধমক সুরে কথা বলেন। নিত্য দিনের এই চিত্র খুলনা জেনারেল হাসপাতালের। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানিতে দিনকে দিন ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবকে কেন্দ্রে যে কোন ধরনের একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনার আসংখ্যা করছেন অভিজ্ঞ মহল। এখনই এদের বিরুদ্ধে লাগাম টেনে ধরলে না পারলে যে কোন সময় সংঘর্ষের ঘটনা আশংকা রয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, সপ্তাহ দুই দিন ১২টার পর ওষুধ প্রতিনিধিরা ভিজিট করার জন্য নিয়ম বেধে দেওয়া হয়েছে। আমি ট্রেনিং এর জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি। ফিরে এসে রিপ্রেজেন্টেটিভদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভলা দলে দলে ভাগ হয়ে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের বহি: বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচরা করেন। ছবি তোলেন, দেখেন কোন কোম্পানীর ওষুধ লেখা হয়েছে। ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ওষুধ কোম্পানির ১২-১৫ জন প্রতিনিধি অবস্থান করছিলেন। জরুরি বিভাগের কর্মরত এক স্টাফ তাদেরকে চলে যেতেও বললেও কোন কর্ণপাত করেননি। অনেক দাপটের সাথে চালিয়ে যান রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি। রূপসা উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মো: আসাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, গাইনীজনিত কারণে তার বোনকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।

 

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বরে হলেই ৬-৭ জন ওষুধ প্রতিনিধিরা তার প্রেসক্রিপশন হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে যান। এদের ছবি তোলা শেষ হলেই আরেকগ্রুপ ওষুধ প্রতিনিধি তার পথ গতিরোধ করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেন। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওষুধ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসকরা আর্থিক লেনদনসহ নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করার ফলে এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না। এদের বিরুদ্ধে সাধারণ রোগীরা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে উল্টো রোগীরা হয়রানী শিকার হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। হাসপাতালের সিভিল সার্জন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন তাহলে জেলা প্রশাসক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযোগ দাখিল করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। না প্রকাশ না করার শর্তে আউটসোর্সিং (চুক্তিভিত্তিক) নিয়োজিত এক ব্যক্তি জানান, আমরা ওষুধ প্রতিনিধিদের বহি: বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনে থেকে বের করে দিতে গেলে ওই ওষুধ প্রতিনিধিরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের আমাদের ফোনে ধরিয়ে দেন। আমাদের তখন ডাক্তার বলেন, ওরা ভেতরে থাকবে কেউ যেনো তাদেরকে বিরুক্ত করবে না। তখন আমরা নিরুপায় হয়ে অনিয়মগুলো নিয়মে করতে বাধ্য হই। পেটে সমস্যাজনিত কারণে বহি: বিভাগ থেকে টিকিট কেটে ডাক্তারকে দেখানোর জন্য রোগীদের লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম। এ সময় কয়েকহন ওষুধ প্রতিনিধি এসে ধাক্কা মেরে ডাক্তার চেম্বারের সামনে দাড়ান। তিনি বলেন, ওষুধ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন। যার কারণে ডাক্তাররা দেখেও না দেখার ভান করেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অফিস সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও সকাল ৮টার আগে আগেই দলে দলে ভাগ হয়ে বহি: বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা। ডাক্তারদের কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় থাকার সুযোগ নেন তারা। কোনো কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন। ডাক্তার কোন কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন তা জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার ডাক্তারের লেখা ওষধের বদলে নিজের কোম্পানির ওষুধ কেনারও পরামর্শ দেন। প্রতি দিনই সকাল থেকে জরুরি বিভাগ ও বহিঃ বিভাগের সামনে প্রতিদিন অবস্থান করেন ১৪-১৬ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এ সময় হাসপাতালে রোগীর প্রচন্ড ভিড় থাকে। একেকজন রোগী ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হন অমনি তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা।