খুলনা ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

0
711

টাইমস্ ডেস্ক:

নগরবাসীর শতভাগ সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৪৫ হাজারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬ হাজার বাড়িতে সংযোগ দেয়ার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধাপে প্রকল্পের গড় অগ্রগতি হয়েছে অন্তত শতকরা ৯০ ভাগ। এ অবস্থায় চলতি বছর প্রকল্পটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি চালু হলে প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। চাহিদার বাকী ১১ কোটি ৯০ লাখ লিটার পানির সংকট নিরসনে ফের আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ওয়াসার এ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন মেলে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) ফান্ড থেকে ৭৫০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র ৫২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও জাইকা’র ১ হাজার ২৮৪ কোটি ১২ লাখ ৭৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহের পর তা পরিশোধনের মাধ্যমে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। মধুমতি নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত এ পানি খুলনা শহর সংলগ্ন রূপসা উপজেলার পাথরঘাটা এলাকায় পরিশোধন করা হবে। সেখানে গড়ে দৈনিক ১১ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শোধনাগারের পাশাপাশি অপরিশোধিত পানি সংরক্ষণের জন্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার কিউবিক মিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এক থেকে দুই সপ্তাহ মধুমতির পানি কিছুটা লবণাক্ত হয়ে পড়ে। সে সময় জলাধারের পানি পরিশোধন করে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, এডিবি’র অর্থায়নে ৩টি ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রাক বিডি-আইসিবি প্যাকেজ ও ২টি ন্যাশনাল কন্ট্রাক বিডি-এনসিবি প্যাকেজ ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার এবং ১০টি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। ১০টি ওভারহেড ট্যাংক ও ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার নির্মাণের স্থানগুলো হচ্ছে চরেরহাট, লবণচরা, নতুন বাজার, ছোট বয়রা, রায়ের মহল, বয়রা হাউজিং এবং দেয়ানা। বাকি ৩টি ওভারহেড ট্যাংক হচ্ছে বানিয়াখামার, মিরেরডাঙ্গা এবং দৌলতপুরের পাবলা।
এদিকে ‘ক্লিয়ার ওয়াটার ট্রান্সমিশন মেইনস ইনক্লুডিং রিভার ক্রসিং’র মাধ্যমে পানি শোধনাগার থেকে রূপসা নদীর তলদেশ হয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি রিজার্ভার পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। এসব লাইনে ৩শ’ মিঃ মিঃ থেকে ১২শ’ মিঃ মিঃ ব্যাসের ৩৩ কিঃ মিঃ ডাকটাইল আয়রন পাইপ মাঠ পর্যায়ে বসানো সম্পন্ন হয়েছে।
‘ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাইপ লেয়িং’ কাজের আওতায় সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন ব্যাসের প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো শেষ হয়েছে। যার মাধ্যমে সকল গ্রাহকদের সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যেই নগরীর সাত নম্বর ঘাট এলাকায় রেলওয়ের জমিতে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতাধীন খুলনা ওয়াসার ১০ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট (প্রথম পর্যায়ে ৬ তলা) প্রধান ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ওই ভবণে বর্তমান দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। এছাড়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশ্বরপাশা ও চরেরহাট এলাকায় ২টি জোনাল বিল্ডিং নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
অপর দিকে, জাইকার অর্থায়নে ‘ইমপাউন্ডিং রিজার্ভার এ্যান্ড সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬ান্ট’ প্যাকেজের আওতায় রূপসা উপজেলার তিলক ও পাথরঘাটা নামক স্থানে ১১০ লাখ লিটার (এমএলডি) ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার এবং ইমপাউন্ডিং রিজার্ভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ‘ওয়াটার ইনটেক ফ্যাসিলিটি এ্যান্ড র’ ওয়াটার ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন’ প্যাকেজে মোলহাট ব্রীজ সংলগ্ন মধুমতি নদীর পাড়ে (ইনটেক স্ট্রাকচার অ্যান্ড পাম্প হাউজ) নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের পথে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহমেদ বলেন, খুলনা শহরের সুপেয় পানির সঙ্কট দীর্ঘদিনের। এ সঙ্কট নিরসনের লক্ষে এই অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ এই প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে গড়ে ৯০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এ প্রকল্প চালু হলে নগরীতে প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচলক মোঃ আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন বলেন, চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। টার্গেটকৃত ৪৫ হাজারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬ হাজার বাড়িতে সংযোগ দেয়ার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকী ২৯ হাজার বাড়ির সংযোগ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরীক্ষামূলক চালু করা হবে সেপ্টেম্বরে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বাকী ১১ কোটি ৯০ লাখ লিটার পানির সংকট নিরসনে ফের আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজল (ডিপিপি) তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যা চলতি বছরে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে।