খুলনায় সাংবাদিককে হুমকি দিলেন ৫৭ ধারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা

0
794

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস:

খুলনায় সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন ৫৭ ধারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) খুলনা জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হুমায়ুন কবীর। তার ব্যাজ নম্বর বিপি-৬৮৯৩০০৬২০৩।

অসদাচরন ও হুমকি প্রসঙ্গ টেনে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন খুলনার পেশাজীবী সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান। সে স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক সময়র খবর এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত, খুলনা প্রেসক্লাব এর ইউজার সদস্য। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল আনুমানিক সোয়া ৩টায় জেলা প্রশাসনের মূল ফটকের সামনে সাংবাদিককে হুমকি দেয়া হয়।

অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (সিআইডি) প্রধান কার্যালয় বরাবর তার লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১৪ জুন খুলনার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আদেশে সংশ্লিষ্ট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা তপন কুমার সাহা সময়ের খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান ও তার (সোহাগ দেওয়ান) বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)’র ৫৭ ও ৬৬ ধারায় মামলা করেন নং-২৪। সিআইডি বিভাগীয় অফিস খুলনার স্মারক নম্বর সিআই/খুলনা/পুঃহঃকাঃ/১৬-২০১৭/৬৬২/১(৯) গত ৩০ ডিসেম্বর সিআইডি খুলনা জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হুমায়ুন কবীর এই মামলার তদনন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, খুলনার মূখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) এমএলবি মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও বিচার বিভাগকে কলংকিত করার অভিযোগ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অভিযোগ পরামর্শ বাক্স’র সভাপতি প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো’তাছিম বিল্যাহ স্বাক্ষরিত স্মারক নং- ১ই-২১৩/২০১৫(অংশ-২)/৫৩১২(১)-জি তদন্তাদেশ ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই জেলা জজ খুলনা বরাবর প্রেরণ করা হয়। উক্ত আদেশের কপি হাতে পেয়ে বাদি ও বাদি পক্ষের আইনজীবীর সাথে কথা বলে যাচাই-বাছাইয়ের পর একই বছরের ১৭ আগস্ট সময়ের খবর পত্রিকায় এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই থেকেই সিএমএম এর আক্রোশের পাত্র হন ওই সাংবাদিক।

এরপর ২০১৭ সালের ১৮ মে দৈনিক সময়ের খবর পত্রিকায় সিএমএম আদালতের ৭জন কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের অতিরিক্ত সিএমএম সুমি আহমেদ লিখিত পরিক্ষার ৩দিন আগেই পদত্যাগ ও ১৯মে পদত্যাগ বিষয়ে (তৎকালীন) মহানগর দায়রা জজ অরুপ কুমার গোস্বামীর আদেশের প্রেক্ষিতে নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিতাদেশ বিষয়ে দুটি পৃথক সংবাদ প্রকাশ হয়। এছাড়া ২২ মে সিএমএম আদালতে একটি চেক সংক্রান্ত দেনা-পাওনা মামলার রায়ের সংবাদ প্রকাশ হয়। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পূর্বে সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

উল্লেখিত দু’টি সংবাদের মধ্যে ত্রুটি আছে এমনি অভিযোগ এনে সিএমএম আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা তপন কুমার সাহাকে বাদি করে ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক ৫৭ ও ৬৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সময়ের খবর পত্রিকা প্রিন্ট ভার্সন হওয়া সসত্ত্বেও ওই মামলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যবহার করার জন্য মামলার এজাহারে পত্রিকার ওয়েবসাইট শব্দটি একাধিকবার ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া দুটো সংবাদই একই বাক্য ব্যবহার করে একাধিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়। কিন্তু সিএমএম ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই শুধু মাত্র তার ও পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বের হওয়ার সময় দেখা হয় তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি খুলনা জেলার পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীরের। এসময় তিনি আমাকে দেখেই উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, “খুব দ্রুত তোমাদের সাংবাদিকতা ফুটানো বের করতেছি। জীবন শেষ হয়ে যাবে এমন চার্জশিট দেব। সিএমএমকে নিয়ে নিউজ করা, সারাজীবন জেলের ঘানি টানবা।” তদন্ত কর্মকর্তার এমন আচরণে হতভম্ব হই। ঘটনাস্থলেই ছিলেন সহকর্মী দৈনিক খুলনাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম এ জলিল। এসময় সে চলে যেতে বললে আমি চলে যাই।

সোহাগ আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার মারমুখী আচরণ ও হুমকির কারনে আমি উদ্বিগ্ন। সে বাদি পক্ষের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়েছেন বলে স্পষ্টই ধারণা করা যাচ্ছে। তাই না হলে কেনইবা তদন্ত কর্মকর্তা এমন উদ্ভট আচরণ করবেন? আর কেনইবা আমাদর কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত না নিয়ে দ্রুততার সাথে চার্জশিট দাখিল করতে চাইছেন?, চাইছেন অপরাধী প্রমানিত করতে। এই পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া সম্ভব না।

ফলে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নতুন করে একজন তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলার ক্ষেত্রে নিযুক্ত করার আর্জি রেখেছি। খুলনা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ সহকর্মিদের পরামর্শে প্রতিকার পাওয়ার আশায় আবেদন করেছি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে মামলার ফটোকপি, পৃথক সংবাদের ফটোকপি, সিএমএম বিরুদ্ধে তদন্তাদাশের ফটাকপি এবং সিএমএম বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর আবেদন। একই সাথে সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি পাঠিয়েছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিশেষ পুলিশ সুপার সিআইডি খুলনা বিভাগ এবং জাতীয় প্রেস ক্লাব, খুলনা প্রেস ক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর।