খুলনায় সর্বকালের পেঁয়াজের রেকর্ড ভাঙ্গা দাম বৃদ্ধি!

0
627

আছাদ জাহিম সোয়াব:
খুলনায় পেঁয়াজের সর্বকালের রেকর্ড ভাঙা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৪ নভেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত পেঁয়াজ (বড়) পাইকারি কেজিতে বিক্রি হয় ১৮০ টাকা। পর দিন ১৫ নভেম্বর একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। অর্থাৎ রাত শেষেই নগরীর ট্রাক টার্মিনাল রোড কাঁচা বাজারে পেঁয়াজের আড়তে কেজিতে ৭০ টাকা বৃদ্ধি পায়। ছোট সাইজে কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ১০৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি ঘন্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। খুচরা বাজারে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের মূল্য রেকর্ড করায় মহল্লার খুচরা বাজারের অনেক মুদি দোকানে গিয়েও দেখা মেলেনি পেঁয়াজের। পেঁয়াজের দামের প্রভাব পড়েছে হোটেলগুলোতেও।
শুক্রবার ১৫ নভেম্বর নগরীর সোনাডাঙ্গা ট্রাক রোড, কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া যায়। তাদের দাবি মূল ফরিদপুর কাজির হাটে এক মণ পেঁয়াজ ৮ হাজার ২শ টাকার পরিবর্তে ৯ হাজার ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওই কাঁচা বাজারে পেঁয়াজের আড়ত মেসার্স সোনালী ভা-ার এর প্রোপ্রাইটার আঃ জলিল এ প্রতিবেদককে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বলেন, ১৪ নভেম্বর রাত ১০টায় এই আড়তে পাইকারি কেজিতে পেঁয়াজ (বড়) বিক্রি হয় ১৮০ টাকায়। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। ছোট সাইজের পেঁয়াজ ১৩৫ টাকার পরিবর্তে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। এর আগের দিন (১৩ নভেম্বর) ছিলো ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হতে থাকে। ওই আড়তে পেঁয়াজ কিনতে আসা মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি এ আড়ত থেকেই প্রতিদিন পেঁয়াজ ১৫ থেকে ২০ কেজি কিনে বিভিন্ন উপজেলার হাটগুলোতে বিক্রি করেন। তার এই ব্যবসার জীবনে পেঁয়াজের এতো দাম কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, এখান থেকে কিনে কেজিতে আরও ২০-২৫ টাকায় লাভে বিক্রি করতেন।
জিদান ভা-ারের প্রোপ্রাইটার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ১৪ নভেম্বর ফরিদপুর পেঁয়াজের বড় মোকাম হাটে এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮ হাজার ২শ টাকা। গতকাল (১৫ নভেম্বর) একই হাটে বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার ৬শ টাকা মণ। মণপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে এক হাজার ৪শ টাকা। তার এই ব্যবসার জীবনে এরকম দাম বৃদ্ধি কখনও পাননি। তিনি বলেন, পচা ও দাগী পেঁয়াজ (নি¤œমান) ১৪ নভেম্বর বিক্রি হয় ১০০-১২০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জরিমানা ও হয়রানির ভয়েও অনেক ব্যবসায়ী হাত-পা গুটিয়ে নেওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ‘ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে তা সবাই জানে। কিন্তু এটা বেশি প্রচার হওয়ায় পেঁয়াজের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার আরও একটি কারণ হচ্ছে- বড় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানির খবর শুনে ছোট ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। কারণ, বড় ব্যবসায়ীদের আমদানির পরিমাণ বেশি হবে, তাই তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না এমন আশঙ্কা করছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেকেই পেঁয়াজ আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না।
নগরীর গোবরচাকা বৌ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ৩শ টাকা কেজিতে। ক্রেতা সুমাইয়া আক্তার জানান, এর আগের দিনও এই বাজার থেকে পেঁয়াজ তিনি ১৮০ টাকায় কিনলে আজকের পেঁয়াজের দাম শুনে তিনি হতবাক হয়ে যান। তার মতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে পেঁয়াজের বাজারে এ অবস্থা। তা না হলে মাত্র ১২ ঘন্টায় ব্যবধানে কেজিতে ১০০-১২০ টাকা বৃদ্ধি হওয়া কোনো মতেই সম্ভব না।
বুশরা বিরানী হাউজের বিক্রেতারা জানান, গতকাল বিরানী প্রতি প্যাকেট (হাফ) ৫ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা জানান, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে নগরীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হয় মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়।